‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’র বিধান রেখে বাল্যবিবাহ বিল পাস সংসদে

ঢাকা: মানব সমাজে বহুমুখী কল্যাণকর বাল্যবিবাহ হলেও ইসলামবিদ্বেষী বিশেষ মহলের চাপে শুধু ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই বয়সের সামান্য শিথিলতার বৈধতা দিয়ে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাস হলো সংসদে। ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই বয়সের সামান্য শিথিলতার নিয়ম থাকায়মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর দেশের ধর্মবিমুখ নারীবাদী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি কথিত হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক কুচক্রী সংগঠনগুলো শিথিলতা পাস না করতে এতোদিন যাবৎ বাংলাদেশের আইনপ্রণেতা ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট মহলের উপর নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছিল।

সরকারের অনুমোদিত বিলে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ শুধু মেয়েদের বয়সসীমা শিথিলের প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। কিন্তু এবার সংসদীয় কমিটি পুরুষদেরও এ সুবিধার আওতায় আনার বিষয়টি যুক্ত করে। এরপর আজ সোমবার ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। কণ্ঠভোটে এটি পাস হয়ে যায়। তার আগে বিলের উপর দেয়া বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হলেও কণ্ঠভোটে তা বাতিল হয়ে যায়।

এই আইন পাস হওয়ায় মেয়ে ও ছেলেদের বিয়ের নূ্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ ও ২১ বছর বহাল থাকলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ তার কম বয়সেও বিয়ের সুযোগ তৈরি হলো।পাশাপাশি বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় চলমান নারীঘটিত নানা ফিতনা থেকে অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়েরা নিস্তার লাভ করতে পারবে। এই বিধানের সুযোগে বাংলাদেশে বিপদগ্রস্ত বা বিশেষ অবস্থাসম্পন্ন কিশোরীরা বিপদমুক্তির সহজ সমাধান পাবে। যদিও এই সহজ সমাধানের পথটি বাতিলের দাবি তুলেছিল মানবাধিকারের মুখাশধারীদেশী-বিদেশীকুচক্রী মহলও নারীবাদী সংগঠনগুলো।

তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বিরোধিতাকারীরা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে ‘অজ্ঞান’। সমাজ বাস্তবতার কথা বিবেচেনায় রেখেই এই আইন করা হচ্ছে।

ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়।মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বিলটি সংসদে উঠে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর। তখন বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

পরীক্ষা শেষে প্রস্তাবিত আইনে, ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিষয়টি শুধু নারীদের মধ্যেই আটকে না রেখে পুরুষকেও এ সুবিধার আওতায় আনার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি।

সংসদে উত্থাপিত বিলে বিশেষ বিধান সম্পর্কে বলা হয়, “এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে নির্ধারিত বয়সের কম বয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।”
এখানে সংসদীয় কমিটি ‘কোনো নারীর’ শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ এবং ‘মাতা-পিতা’র সঙ্গে ‘প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের’ সম্মতির শব্দটি যোগ করেছে।

সংসদীয় কমিটি অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের ক্ষেত্রে বাবা-মা বা যেখানে প্রয়োজন সেখানে অভিভাবকের সম্মতির বিধান যুক্ত করে।
এছাড়া পাস হওয়া বিলে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ বিধি দ্বারা নির্ধারিত রাখারও সুপারিশ করা হয়েছে, যা সংসদে উত্থাপিত খসড়া আইনে উল্লেখ ছিল না।