২০ লাখ লোককে ইসলামের পথ দেখান মোহাম্মদ আলী

ডেস্ক: কিংবদন্তী মোহাম্মদ আলীও বর্ণবৈষম্য আর লাঞ্ছনা-গঞ্জনার শিকার হয়ে ইসলামের সু-শীতল ছায়ার নীচে চলে আসেন। ১৯৬৪ সালে তিনি যখন খ্যাতির শীর্ষে, বিশ্ব হ্যাভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপে বিশ্বখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে যখন হুঙ্কার দিলেন, তার সেই হুঙ্কারে কেঁপে উঠলো সারাবিশ্ব, ওই সময়ই তিনি ঘোষণা দেন, আই অ্যাম গ্রেটেস্ট। আজ থেকে আমি আর ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে নই, আজ থেকে আমি মোহাম্মদ আলী। মাথা উচুঁ করেই থাকবো আজ থেকে। কারণ, মোহাম্মদ কখনও মাথা নীচু করতে জানে না।

ক্যাসিয়াস মার্সেলাস থেকে মোহাম্মদ আলী- তার নিজের মুখ থেকে ধর্ম পরিবর্তনের কথা শোনার পর যেন সারাবিশ্বের ইসলাম ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মাথায় বাজ পড়ার মত অবস্থা হয়। সবাই স্ব-বিস্ময়ে লক্ষ্য করে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিমান মানুষটি ইসলামের ছায়াতলে এসে কেমন বদলে গিয়েছেন, সমাজ বদলে দেয়ার জন্য কিভাবে সারাজীবনটা ব্যয় করেছেন।

দ্য গ্রেটেস্ট, মোহাম্মদ আলী প্রায়ই বলতেন, আমার জীবনে সবচেয়ে সুখের মুহূর্তটা হলো যখন নিজেকে ইসলামের মধ্যে বিলীন করে দিতে পারি। বিশ্ব নাগরিক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মোহাম্মদ আলির জীবন ছিল নানা চড়াই-উতরাইয়ে পরিপূর্ণ। সবচেয়ে সবচেয়ে বড় মাইলফলক ছিল ১৯৬৪ সালে তিনি যখন ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। অথচ ওই সময়টা তিনি ছিলেন ক্যারিয়ারের একেবারে তুঙ্গে।
Muhammad_Ali-Africa-Prayছবি: আফ্রিকার একটি মাজারে মোনাজাতে রত মুহম্মদ আলী

ইসলাম গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই অতীত জীবনকে গুডবাই জানিয়ে দেন তিনি। গ্রহণ করেন ইসলামী জীবন। ইসলামের সব আইন-কানুন নিজের ব্যক্তিগত জীবনে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করার চেষ্টা করতে শুরু করেন। নিজের সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্থও ইসলামের জন্য ব্যয় করা শুরু করেন তিনি।

muhammad ali and islam-2
ছবি: মুষ্টিযুদ্ধে দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মুহম্মদ আলী এবং প্রিন্স নাসিম একসঙ্গে নামাযরত

মোহাম্মদ তামাসি একটি বই রচনা করেন, ‘অ্যাকসেপ্টেন্স অফ ইসলাম বাই গ্রেট পারসোনালিটিজ অ্যান্ড থিঙ্কার্স’ নামে। মোহাম্মদ আলীর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে তিনি সেখানে তার (মোহাম্মদ আলী) নিজেরই বক্তব্য তুলে ধরেন কিভাবে ইসলামে দীক্ষিত হন তিনি।
Muhammad Ali prays at a press conference before his fight against Ken Nortonছবি: প্রেসকনফারেন্সের পর ক্যান নরটনের সাথে লড়ার আগে জায়নামায বিছিয়ে সিজদায়রত মুহম্মদ আলী

‘১৯৬৪ সালে ফ্লোরিডায় সর্বপ্রথম আমি শুনলাম, সৃষ্টিকর্তা একজন। এটা শোনার পর তো যারপরনাই অবাক হলাম। ওই সময়ই আমি জানতে পারি, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম হলেন সর্বশেষ নবী। যিশুখ্রিস্টও আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত একজন নবী। এটা ছিল আমার কাছে একেবারে নতুন এবং এটা আমার ওপর বেশ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। ইসলাম গ্রহণ করার পর আমি সত্যিকারের শান্তি এবং সত্য উপলব্ধি করতে পারলাম। কিভাবে সালাত আদায় করতে হয়, রোজা রাখতে হয় এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়, তা শিখতে থাকলাম।’

মানুষের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দেয়া নিয়ে মোহাম্মদ আলি বলেন, ‘প্র্যাকটিক্যাল মুসলিম হওয়ার পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ইসলামের সুমহান বাণী ছড়িয়ে দিতে শুরু করবো সাধারণ মানুষের মাঝে। আল্লাহর অনুগ্রহে, আমি ২০ লাখ আমেরিকানকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করতে পেরেছি। আমার বাৎসরিক আয় (প্রায় ২০ কোটি ডলার) ইসলামের পথে ব্যায় করতে শুরু করলাম। আমার স্ত্রী কিংবা সন্তানদের এর উত্তরাধিকারী বানাইনি।’
Muhammad Ali prays in the mosque he built at his formerছবি: নিজের তৈরিকৃত ইবাদতগারে নামজরত মুহম্মদ আলী।

নিজের বাড়িতে মসজিদ বানানো প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আলি বলেন, ‘আমি আমার বাড়িকে একটি বৃহৎ মসজিদ এবং কোরানিক শিক্ষার সেন্টাররূপে রূপান্তর করি। এর পাশাপাশি আমি শিকাগোতে আমেরিকার সর্ববৃহৎ মসজিদ তৈরীর কাজ শুরু করি। যেটা হবে আবার ইসলামিক সেন্টার। তখন থেকেই আমি আমেরিকান মুসলিমদের মাঝে ফ্রি ইসলামিক বই বিতরণ শুরু করি।’

এক সাক্ষাৎকারে একবার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘একসময় আমি বৃদ্ধ হবো এবং মৃত্যুও বরণ করবো। তার আগে আল্লাহ আমাকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় বানিয়েছেন। এমনকি বিশ্বের অন্যতম সুপরিচিত মানুষে পরিণত করেছেন। আমি যেন আমার এই অসাধারণ জনপ্রিয়তাকে আল্লাহর পথেই ব্যায় করতে পারি। আমি যেন ইসলামের শিক্ষা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি। একই সঙ্গে যেন অন্যায়, অনাচার, জুলুম-নির্যাতন, মাদকাশক্তি, ড্রাগস এবং বেশ্যাবৃত্তির বিপক্ষে লড়াই করতে পারি।’

একবার এক আলোচনায় সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা, ইসলামের প্রতি বেড়ে ওঠা বিতৃষ্ণা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি একজন মুসলিম। এখানে নিরাপরাধ মানুষ হত্যার কোন অবকাশ নেই। সেটা হোক প্যারিস কিংবা বিশ্বের যে কোন স্থানে। সত্যিকারের মুসলিম মাত্রই জানে, সন্ত্রাসবাদ হচ্ছে ইসলামের মৌলিক নিয়ম-নীতি পরিপন্থী।’

দ্য গ্রেটেস্ট অ্যাথলেট অন দ্য আর্থ, মোহাম্মদ আলি ক্লে ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন শুক্রবার রাতে, অ্যারিজোনায় ফোনিক্স এরেনা হাসাপাতালে।

Muhammad Ali while performing Hajছবি: ১৯৭২ সালে পবিত্র হজ্জ সম্পাদন করেন মুহম্মদ আলী