বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা, পদত্যাগের ইঙ্গিত পুরনো সদস্যদের

ঢাকা: দুই নতুন মুখ যুক্ত করে স্থায়ী কমিটির ১৭ সদস্যসহ পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপি। নির্বাহী কমিটির আকার বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০২ সদস্যের।

আজ শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কমিটি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নতুন কমিটি বিএনপির চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে দলটি।

গত মার্চে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে চেয়ারপারসন এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিল বিএনপি। সেই কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন কাউন্সিলরা। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে প্রায় সাড়ে চার মাস পর ঘোষণা আসে পূর্ণাঙ্গ কমিটির।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে ঘোষণা করা হয় ১৭ জনের নাম। ১৬তম এবং ১৯তম সদস্য হিসেবে স্থায়ী কমিটিতে রয়েছেন আগের কমিটির বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। ১৭ ও ১৮তম সদস্যের নাম পরে ঘোষণা করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএনপি মহাসচিব।

এ ছাড়া আলোচিত নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বহাল রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা থেকে ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন ড. এম ওসমান ফারুক।

আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানও পেয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান পদ। ৩৫ সদস্যের ভাইস চেয়ারম্যান ছাড়াও এবার আকার দ্বিগুণ করে ৭৩ সদস্যের করা হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ। ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদকের চারটি পদে পরে নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

এ ছাড়া ডা. শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি এবং আবুল হাসেম বকরকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যের চট্টগ্রাম মহানগরের আংশিক কমিটিও ঘোষণা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। দলের নতুন কমিটি নতুন দিনের সূচনা করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএনপি মহাসচিব।

কমিটির  বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিগত দিনগুলোতে বিএনপি যে বিকাশ লাভ করেছে, বিশেষ করে আপনারা জানেন সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ছাত্রদল থেকে যুবদল থেকে যারা আসছে, আমরা নতুন নেতৃত্ব তৈরি করার জন্য তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনতে হচ্ছে।’

‘আমরা মনে করি যে এই কমিটি অত্যন্ত ভাইব্র্যান্ট কমিটি হয়েছে, ডায়নামিক কমিটি হয়েছে। এই কমিটি দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপযোগী, ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে।’

জাতীয় কাউন্সিলের পর প্রথম এক মাসে তিন ধাপে মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, কোষাধ্যক্ষ, সাংগঠনিক এবং সহসাংগঠনিক পদে ৪২ জনের নাম ঘোষণা করেছিল দলটি।

পুরাতন নেতাদের পদত্যাগ

এদিকে ইতিহাসে বৃহত্তম ৫০২ সদস্যবিশিষ্ট বিএনপির পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হলেও কাক্ষিত পদ না পাওয়ায় অনেকেই সংক্ষুব্ধ। দু’একজন ইতোমধ্যে কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহার চেয়ে আবেদনও করেছেন। পদত্যাগ চেয়ে আবেদন করতে পারেন আরো কয়েকজন। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় যারা পদত্যাগ করছেন না তারা আর সেভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সদ্য ঘোষিত নতুন কমিটি ঘোষণার ৪ ঘন্টার মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী। অসুস্থ হয়ে তিনি বর্তমানে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম বিগত কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। নতুন কমিটিতে তাকে সহ-প্রচার সম্পাদক ছিলেন। তিনি প্রচার সম্পাদকের আলোচনায় ছিলেন।

তবে সদ্য ঘোষিত কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক পদ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার চেয়েছেন শামীমুর রহমান শামীম। জানতে চাইলে হতাশার সুরে তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘রাজনীতি করতে গিয়ে আমি পাঁচ মাস কারাগারে ছিলাম। অসংখ্য মামলায় জর্জরিত। আন্দোলনের সময় দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু নতুন কমিটিতে আমাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। আগে আমি সহ-দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। এখন আমাকে ডিমোশন দিয়ে ৩ নং সহ-প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। আমার প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে। সেজন্য কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহার চেয়ে মহাসচিব বরাবর চিঠি দিয়েছি।’

বিদায়ী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীনকে নতুন কমিটিতে সহ-প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। তিনি পূর্বের পদে বহাল থাকা কিংবা কোনো সম্পাদকীয় পদের প্রত্যাশী ছিলেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়।

এছাড়া বিদায়ী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান ও মিজানুর রহমান মিনুকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে নেয়া হয়েছে। তারা ভাইস চেয়ারম্যান পদের আলোচনায় ছিলেন। বিদায়ী কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব আব্দুস সালামকেও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যানের আলোচনায় তার নামও জোরোশোরে উচ্চারিত হচ্ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বাংলামেইলকে বলেন, এই নেতারা বিএনপির সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলনে চরম নিষ্ক্রিয়তার পরিচয় দিয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, শুধু এরা নয়, বিএনপির বিদায়ী কমিটির কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। কিন্তু দেখা গেল, নতুন কমিটিতে তারা ভাল পদে গেছেন। সেদিক থেকে বলতে গেলে এদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।