বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ লঞ্চের উদ্বোধন, যাত্রা শুরু শনিবার

বরিশাল: বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ যাত্রীবাহী লঞ্চের উদ্বোধন হবে বৃহস্পতিবার। আগামী ২৫ জুন বরিশাল-ঢাকা নৌপথে যাত্রা শুরু করবে চারতলা বিশিষ্ট লঞ্চ ‘সুন্দরবন-১০’।

বৃহস্পতিবার লঞ্চটি বরিশাল থেকে যাত্রী ছাড়াই ঢাকায় পৌঁছাবে। শনিবার ঢাকা-বরিশাল যাত্রার শুরু।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খান থাকবেন বলে জানিয়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বরিশালের তিন এমপি এবং বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানও থাকছেন উদ্বোধনে।

প্রায় ১৪০০ যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এ লঞ্চ বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরে বেলতলা ফেরিঘাট এলাকায় সুন্দরবন নেভিগেশন ডক ইয়ার্ডে নির্মাণ করা হয়।

সুন্দরবন নেভিগেশনের কোম্পানির সত্ত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টু এ লঞ্চ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

বরিশাল-ঢাকা-ঝালকাঠী-পটুয়াখালী রুটে চলছে সুন্দরবন নেভিগেশনের আরও ৯টি লঞ্চ। এরমধ্যে সুন্দরবন-৮ই ছিল দেশের সর্ববৃহৎ লঞ্চ। সুন্দরবন-৮ দৈর্ঘ্যে ৩০০ ফুট প্রস্থে ৪৬ ফুট। সুন্দরবন-১০ তার চেয়েও বৃহৎ। এটি দৈর্ঘ্যে ৩৩২ ফুট প্রস্থে ৫২ ফুট। সুন্দরবন নেভিগেশনের লঞ্চগুলোর মধ্যে ‘সুন্দরবন-১০’ সবচেয়ে অত্যাধুনিক। যা বাংলাদেশে এই প্রথম।

যেসকল সুবিধা থাকছে এই লঞ্চটিতে:

লঞ্চটিতে রয়েছে ডুপ্লেক্স কেবিন, ফুডকোর্টসহ আধুনিক নানান প্রযুক্তির ছোঁয়া। এই প্রথম কোনো লঞ্চে যুক্ত হলো লিফট ও সিসিইউ ইউনিটের সুবিধা। লঞ্চের নীচতলায় অগ্রভাগে হৃদরোগীদের জন্য এক শয্যার সিসিইউ ও সিসিইউ ইউনিট। এখানে অক্সিজেনের পাশাপাশি চিকিৎসক ও সেবিকার সহায়তা পাওয়া যাবে।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে প্রথম শ্রেণির জন্য শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত সিঙ্গল ও ডাবল মিলিয়ে ২৪০টি কেবিন। লঞ্চের সিঁড়ি এমনভাবে নির্মিত যে নীচ তলা থেকে সরাসরি দ্বিতীয় বা তৃতীয় তলায় যাওয়া যাবে। রয়েছে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ৪০টি সোফা ও ১২টি কমনবাথ রুম।

ভিআইপ কেবিন ছাড়াও রয়েছে ৬টি বিশেষ ভিআইপ কেবিন। যার প্রতিটি কক্ষের সঙ্গেই রয়েছে আলাদা বাথরুম, বারান্দা, এসির ব্যবস্থা। এরর প্রতিটিই আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। ভিআইপি কেবিনগুলোর নাম রাখা হয়েছে- ৭১, অমর একুশেসহ ইতিহাস ঐতিহ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নামে।

সাইদুর রহমান রিন্টু আরো জানান, লঞ্চটির ডেকের নিচে ১২টি কম্পার্টমেন্ট করা হয়েছে। যাতে লঞ্চের তলার কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে অপর অংশে পানি প্রবেশ করতে না পারে। এরপর নীচতলার ডেকে প্রশস্ত হাঁটার জায়গা, পর্যাপ্ত টয়লেট, ডেকের যাত্রীদের জন্য কেন্টিন রয়েছে।

নীচতলায় এলইডি ও সাধারণ লাইটের সংযোজনে আলোকসজ্জায় আনা হয়েছে পরিবর্তন। বিশেষ করে লঞ্চের ডেক থেকে কেবিন, সোফা, ভিআইপি সবখানেই যাত্রীদের জন্য রয়েছে এলইডি টেলিভিশন।

শিশুদের জন্য এই লঞ্চে রয়েছে প্লে-গ্রাউন্ড। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার যাত্রীদের চা-কফি পানের জন্য লঞ্চের অগ্রভাবে রাখা হয়েছে রুচিশীল বসার জায়গা। আর যাত্রীদের জন্য পুরো লঞ্চটিকে ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনা হয়েছে। অন্যদিকে নিরাপত্তার জন্য পুরো নৌযানটির পরিচালনা ব্যবস্থা সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। লঞ্চের চতুর্থ তলার সম্পূর্ণটুকুই হুইল হাউজ ।

রাখা হয়েছে আধুনিক রাডার, জিপিএস পদ্ধতি। ফগ লাইটের সংযোজনের মাধ্যমে ঘন কুয়াশার মধ্যেও নৌযানটি নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে বলে জানান লঞ্চ মালিক রিন্টু। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপক আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন তো রয়েছেই।

লঞ্চের ভাড়া প্রসঙ্গে সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘বাড়তি সুবিধার জন্য বাড়তি ভাড়া বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই। মুলত এই রুটে যাত্রীদের বিশেষ সুবিধা দিতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা।’