ভেনেজুয়েলায় তীব্র খাদ্য সংকটে দাঙ্গা-লুটপাট, জরুরী অবস্থা

ভেনেজুয়েলায় তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই দেশটিতে এই অবস্থা চলছে। শুধু গত দুই সপ্তাহেই খাদ্যের জন্য ভেনেজুয়েলাজুড়ে ৫০টির বেশি দাঙ্গা ও বিক্ষোভ হয়েছে। দাঙ্গাকারীরা অনেক খাবারের দোকানে লুটপাট চালিয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় খাবার পরিবহনকারী ট্রাকে কয়েকবার হামলা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এমন পরিবহনগুলো চলছে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীদের পাহারায়। ভেনেজুয়েলার সেনারা বেকারিগুলোর নিরাপত্তা দিচ্ছেন।

সম্প্রতি একদল দাঙ্গাকারী কয়েকটি মুদি, ওষুধ ও মাংসের দোকানে হামলা চালায়। পুলিশ দাঙ্গাকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে এক শিশু নিহত হয়েছে।

সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশের চাহিদার মেটানোর মতো পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া দেশের বাইরে থেকেও প্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এমন পরিস্থিতির কারণেই খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

ভেনেজুয়েলার সিমন বলিভার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির ৮৭ শতাংশ মানুষের কাছে খাদ্য কেনার মতো যথেষ্ট অর্থ নেই। আবার দেশটির শিক্ষক সংগঠনের এক গবেষণায় জানা গেছে, গড়পড়তা ভেনেজুয়েলার কোনো পরিবারের ৭২ শতাংশ আয়ই খরচ হচ্ছে খাবার কেনায়।

 

অর্থনীতিবিদদের মতে, ভেনেজুয়েলার মূল আয় হয় তেল বিক্রি থেকে। কয়েক বছর ধরেই বিশ্ববাজারে কম দামে তেল বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণেও ভেনেজুয়েলার আয় অনেকাংশেই কমে গেছে। যে কারণে দেশে খাদ্য সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।venezuela-s-economic-crisis-rate_chartbuilder

নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ভেনেজুয়েলায় কৃষিতে চরম অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। সারের ভাবে অনেক আখক্ষেত চাষ হয়নি। সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। একসময় ভেনেজুয়েলা থেকে চাল ও ভুট্টা রপ্তানি হতো। অথচ এখন এসব খাবার আমদানি করতে হয়।

টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভেনেজুয়েলার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সরকার দেশটির শহরগুলো জরুরি অবস্থা জারি রেখেছে। অধিকাংশ খাবার বিপণনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের অনুসারীদের।

ভেনেজুয়েলার মানবাধিকার সংগঠন ভিভিও-এর পরিচালক রবার্তো ব্রিসেনো লিয়ন বলেন, খাবার বিপণনে ক্ষমতাসীন দলের অনুসারীরা প্রচণ্ড অনিয়ম করছে। শুধু তারাই খাবার পাচ্ছে,  যারা ক্ষমতাসীনদের প্রতি অনুগত অথবা ওই অনুসারীদের পরিচিত।

এদিকে, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সম্প্রতি জরুরি আইনের আওতায় নতুন ফরমানের মাধ্যমে দেশটিতে ব্যাপক অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন দাঙ্গা ও লুটপাটকারীদের গ্রেফতার করতে। তিনি দেশটির অচল হয়ে পড়া শিল্প কারখানাগুলো দখল ও এর মালিকদের গ্রেফতার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত শুক্রবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণের মাধ্যমে দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার একদিন পর মাদুরো যে কোন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশটির সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

তার নেতৃত্বে পরিচালিত বামপন্থী সরকারকে নাজেহাল করতেই যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃত ভাবে অস্থিরতা তৈরির ষড়যন্ত্র করছে বলে মত প্রকাশ করেছেন তিনি। এদিকে, জাতীয় কংগ্রেসে অভিশংসনের মাধ্যমে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। রৌসেফের এই অভিশংসন প্রক্রিয়াকে বেসামরিক অভ্যুত্থান হিসেবে দেখছে ভেনেজুয়েলা। আর এই জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তাই নিজ দেশের স্বার্থ এবং সরকারের স্থায়ীত্ব রক্ষায় তিনি দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।