গাড়ির বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ব্যবহারের পরিকল্পনা

ঢাকা: তরল পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের বহুমাত্রিক ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে গাড়ির বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারি ২ হাজার গাড়ি এলপিজিতে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে এ কার্যক্রম শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে গ্যাস মজুত রয়েছে ১৪ দশমিক ১৬ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘন ফুট) গ্যাস। প্রতিদিন দেশে আবাসিক ২২ লাখ গ্রাহকের গ্যাসের চাহিদা ৩ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘন ফুট। গ্যাস সরবরাহ করা হয় ২ হাজার ৭৪০ মিলিয়ন ঘন ফুট। দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘন ফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে।

মজুত গ্যাস থেকে প্রতিদিন সরবরাহ করা ১৩ শতাংশ আবাসিক, ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাসের (সিএনজি), ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাণিজ্যিক, ১৭ দশমিক ১৭ শতাংশ ক্যাপটিভ, ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিল্পে, চা বাগানে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪০ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং সার কারখানায় ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ ব্যবহৃত হয়। দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সার কারখানা, শিল্প বাণিজ্যিক ও আবাসিক খাতে ৩০ লাখ গ্রাহক রয়েছে। গ্যাস ঘাটতি থাকার কারণে রাজধানী ঢাকা ও বিভিন্ন নগরী ও শহরে পাইপড ন্যাচারাল গ্যাসের (পিএনজি) সংকট চলছে।

নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে বর্তমান ব্যবহারের হারে আগামী এক দশকের মধ্যেই গ্যাস সরবরাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যাবে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য নতুন করে বাসভবনে প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগের বদলে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সিএনজি গাড়ির বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ব্যবহারে উৎসাহিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বেক্সিমকো পেট্রোলিয়াম লিমিটেড সরকারি ২ হাজার যানবাহনকে আগামী জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে এলপিজিতে রূপান্তর করবে। প্রতিটি গাড়ি এলপিজি করতে ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে। এরপর সরকারি-বেসরকারি গাড়িতে জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে উৎসাহ দেয়া হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে আমাদের বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার গৃহস্থালি ও সিএনজি স্টেশনে গ্যাস কমিয়ে দিয়ে বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এলপি গ্যাসের বহুমাত্রিক ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে সরকার। গাড়ির বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সরকারি ২ হাজার গাড়িকে এলপিজিতে রূপান্তর করা হবে। এর পর সরকারি-বেসরকারি গাড়িতে জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাসের চলমান যে চাহিদা তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘন ফুটেরও বেশি। এ অবস্থায় নতুন করে বাড়িতে বাড়িতে গ্যাস-সংযোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রান্নায় বিকল্প হিসেবে এলপিজি ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এলপি গ্যাস দিয়ে গাড়ি চালানো হলে জ্বালানি খাতে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে সরকারি ২ হাজার গাড়িতে এলপিজি ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সিএনজির বিকল্প হিসেবে এলপিজি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হবে।

প্রতিনিয়ত দেশে গ্যাসের ঘাটতির কারণে সরকার সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে আবাসিক খাতে গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। অনেক আগে থেকেই নতুন সিএনজি স্টেশন অনুমোদনও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গাড়িতে জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করবে সরকার।