সামাজিক গণমাধ্যম থেকে: বাবুল মাতুব্বরের মৃত্যু ও প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশ

বাবুল মাতুব্বর

মুবাশশিরের ফেইসবুক টাইমলাইন থেকে: বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ফজলুর রহমান বলেছেন-
“পুলিশের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে এদের বড্ড বেশী বাড় বেড়েছে। এরা কেন এত বেপরোয়া আচরণ করছে, আসলে এরা কারা ?”
গত বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বাবুল মাতব্বর নামে এক চা দোকানিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার অভিযোগের ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবারে সংসদে প্রশ্ন উত্থাপণ করেন তিনি। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করে বলেন, ‘এরা বলছে- তারা নাকি দেশের রাজা, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসলে এরা কারা, এদের বিরুদ্ধে কি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন?
(http://goo.gl/NCMdXT)
আসলে সংসদ সদস্য ফজলুর রহমানের মত সবারই প্রশ্ন, পুলিশের হঠাৎ এত বাড় বাড়লো কেন ? আর পুলিশের ভেতর এরাই বা কে ? এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না কেন ?
পাঠক, আসলে এ ঘটনা কিভাবে ঘটলো, কার মাধ্যমে ঘটলো এবং কেন ঘটলো এ বিষয়গুলো পুলিশ যেভাবে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, ঠিক তেমনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে মিডিয়া। তবে আমি বাংলামেইল২৪ এর একটি খবরে নিহতের আত্মীয়ের রেফারেন্স দিয়ে কিছু খবর আপনাদের দিচ্ছি, আপনারাই যাচাই করুন, মূল ঘটনার পেছণে দায়ি পুলিশের কোন সদস্য –
১) “বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিকেলে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন (তখন পর্যন্ত) বাবুলের ছেলে রাজু বাংলামেইলকে জানিয়েছিলেন, এসআই শ্রীধাম ঘটনার দিন বেলা ১টায় এবং রাত ১০টার দিকে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের চায়ের দোকানে আসেন। এসময় তার সাথে সোর্স দেলায়ার এবং কয়েকজন কনস্টেবলও ছিল।
দুপুরে বাবুলের মৃত্যুর পর রাজু ঢাকা মেডিকেলে উপস্থিত অনেকের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাবাকে মেরে ফেলেছেন শাহ আলী থানার পুলিশ ও সোর্সরা। আমার বাবার কি অপরাধ? ফুটপাতে চা বিক্রি করেন, পুলিশকে চাঁদা দিতে পারেননি? আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শাহ আলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদারের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্য ও পুলিশের সোর্স তার গায়ে আগুন দিয়ে তাকে হত্যা করেছে। আমরা দুই ভাই ও তিন বোন এতিম হয়ে গেলাম। আমরা এই হত্যার ঘটনায় ন্যায় বিচার চাই।”
(http://goo.gl/8mM5u7)
২) কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাজু বলেন- “শাহ আলী থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদার আরো দুই পুলিশ কনস্টেবল ও সোর্স দেলোয়ারকে নিয়ে গতরাত নয়টার দিকে আমার বাবার দোকানে যান। এগুলো আমাদের কথা নয়, আমার বাবা মৃত্যু আগে আমাদের বলে গেছেন। তখন এসআই শ্রীধাম আমার বাবাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। আর বলেন, ফুটপাতে দোকান করিস, চাঁদা দে।”
(http://goo.gl/IjV7BD)
পাঠক, এবার আসুন দ্বিতীয় পর্যায়ে, চা বিক্রেতাকে আগুন দিয়ে হত্যা করার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে বরখাস্ত হয়েছে ৪ পুলিশ সদস্য। কিন্তু অবাক করার মত বিষয় হচ্ছে ঐ চার সদস্যের মধ্যে শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদার নেই। এরপর সংবাদেই বলা হচ্ছে শুধু শ্রীধামের নাম বরখাস্তের তালিকায় ঢুকাতে সারাদিন আলোচনা চলে পুলিশ প্রশাসনে। এরপর বৃহস্পতিবার রাতের বেলায় অবশেষে বরখাস্তের তালিকায় ঢুকে শ্রীধাম হাওলাদারের নাম।(http://goo.gl/nvqZlv)
অর্থাৎ মূল ঘটনায় শ্রীধাম নেতৃত্ব দিলেও তার নাম দাষী তালিকায় ঢুকাতে অনেক সময় পার করতে হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে। কিন্তু কেন ? শ্রীধামের এত পাউয়ার কিসের ? কেন শ্রীধামের নাম আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে ? পুলিশের ঐ দলের নেতৃত্ব ছিলো শ্রীধাম, তবে কেন ছাপোষা সোর্সকে দায়ি করা হচ্ছে ?
পাঠক, পুনরায় সংসদ সদস্য ফজলুর রহমানের প্রশ্নটি তুলে ধরছি। পুলিশ সম্পর্কে
ফজলুর রহমান প্রশ্ন করেছেন- “এরা এত বেপরোয়া আচরণ করছে কেন ?
এর উত্তর দিতে হলে আপনাকে যেতে হবে, কিছুদিন আগে ঢাকার মুহম্মদপুরে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার দিকে। সেখানে আশা ইউনিভার্সিটির এক মেয়ে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত হয়েছিলো এসআই রতন কুমার। এসআই রতন কুমার ঐ মেয়েটিকে নিপীড়ন করার সময় বলেছিলো-“আমার কাছে ওসি ডিসি কিছুইনা, কারও কাছে নালিশ করে লাভ নেই”। (http://goo.gl/cnws5Y)
রতন কুমারই বলছে। তার কাছে ওসি ডিসি কিছুই না, আবার কারো কাছে নালিশ করেও লাভ নেই। অর্থাৎ রতন কুমার আর শ্রীধামদের বেপরোয়া আচরণের কারণে পুলিশ এই দুরাবস্থা।
পাঠক মূল ঘটনা এটাই। পুুলিশে গণহারে হিন্দু নিয়োগের ফলে পুলিশের সিস্টেম ক্র্যাশ করেছে।এখন পুলিশ আর আগের ধারায় চলতে পারছে না, কারণ ঐপার থেকে মনোনিত বহু হিন্দুকে পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা ধরেই নিয়েছে- তারা যাই করুক, তাদের কিছুই হবে না, তাদের কিছু করার ক্ষমতা আওয়ামী সরকারের নেই। এ কারনেই বর্তমানে পুলিশের এই নিয়ন্ত্রিনহীন অবস্থা।
যাই হোক, এখন পুলিশে ডিসিপ্লিন ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব হচ্ছে পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসিপ্লিন) টুটুল চক্রবর্তী’র হাতে। দেখা যাক চক্রবর্তী দা পুলিশকে কতটুকু ডিসিপ্লিন শিখাতে পারেন।
সবাইকে ধন্যবাদ।