বিমানবন্দরে রাডার মেরামতের নামে ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের ষড়যন্ত্র, অনুসন্ধানে দুদক

রাডার মেরামত-দুদক

নিউজ নাইন২৪, ঢাকা: হজরত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মেরামত অযোগ্য পুরাতন রাডার মেরামতের নামে ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগের তীর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) চেয়ারম্যান ও সেন্ট্রাল ইঞ্জিনিয়ারিং মেইনটেনেন্সের পরিচালকসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে মেসার্স অ্যারোনেস নামের একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে বাজারমূল্যের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দামে ২৩ কোটি টাকার একটি ভুয়া প্রস্তাব দিয়ে প্রকল্প থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের চেষ্টা চলছে।

এমন অভিযোগ আমলে নিয়ে সম্প্রতি অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে দুদক উপপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও এ কে এম জায়েদ হোসেন খানকে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুদকের একটি সূত্র সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দরে এয়ার ট্রাফিক সার্ভিলেন্স সার্ভিসের জন্য স্থাপিত সিভিল এভিয়েশনের রাডার ব্যবস্থা প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রাডার সমন্বয়ে গঠিত। ফরাসি সরকারের অনুদানে ১৯৮৪ সালে প্রাইমারি রাডার এবং ১৯৮৬ সালে সেকেন্ডারি রাডার (১০ বছর আয়ুষ্কালসম্পন্ন) স্থাপনে মোট ১৭ কোটি ৬৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়। স্থাপনের সময় এর অ্যান্টেনার ঘূর্ণন ছিল প্রতি মিনিটে ১৫ বার। যন্ত্রাংশ পুরোনো হওয়ায় এটি চলমান রাখার স্বার্থে এর ঘূর্ণন সংখ্যা কমিয়ে বর্তমানে প্রতি মিনিটে সাড়ে সাতবার করা হয়েছে। এর পরও এটি পুরোপুরি কাজ করে না। অনেক সময় বিকল হয়ে পড়ে।

সিভিল এভিয়েশনের রাডারের অবস্থা নিরূপণ-সংক্রান্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলেছে, রাডারটির অধিকাংশ খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবহার ও মেরামত অযোগ্য এবং বর্তমান রাডারটি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান থ্যালাস বহু আগেই যন্ত্রাংশ তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে। তাই সিভিল এভিয়েশনের রাডার আপগ্রেডেশনবিষয়ক কমিটি বর্তমান রাডারটি পরিবর্তন করে নতুন রাডার স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছে।

সিভিল এভিয়েশনের প্রতিবেদনেই বর্তমানে এর প্রাইমারি অংশটি কাজ করে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেকেন্ডারি রাডার শুধু একটি প্রসেসর দিয়ে চালানো হচ্ছে এবং দীর্ঘক্ষণ চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার কারণে একাধারে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় রাডারটি কার্যকর রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে রাডার মেরামতের নামে ২৩ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিতে।

অভিযোগের বিষয়ে আরো জানা যায়, এমনকি ১৯৮৭ সালে চার কোটি ৫৪ লাখ টাকা, ১৯৯৪ সালে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ২০০৮ সালে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাডারের সম্পূর্ণ সিস্টেমে আপগ্রেড করা হয়েছে। এরপরও ৩০ বছরের পুরাতন মডেলের রাডারটির ঘূর্ণন বাড়ানো ও প্রাইমারি অংশটি সম্পূর্ণ ব্যবহারযোগ্য করা এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। মেরামতের নামে সিভিল এভিয়েশনের একটি চক্র মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রকল্প তৈরি করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে আরো জানা যায়, পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী, কোনো নতুন যন্ত্রাংশ কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই বাজার যাচাই করে এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে ক্রয়ের বিধান রয়েছে। কিন্তু সিএএবির চক্রটি সেই বিধান না মেনে মেসার্স অ্যারোনেস নামের একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান থ্যালাসের স্থানীয় প্রতিনিধি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। যদিও ই-মেইলে থ্যালাস খুচরা যন্ত্রাংশ মেরামতের জন্য ২০ কোটি দাবি করেছিল। কিন্তু সিভিল এভিয়েশনের ওই চক্রটি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এ ছাড়া কোনো ধরনের বাজার দর যাচাই না করে বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার আশায় মেসার্স অ্যারোনেস নামের একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে থ্যালাসের স্থানীয় প্রতিনিধি দেখিয়ে ২৩ কোটি টাকার ভুয়া প্রকল্প অনুমোদন করে, যা বাজারমূল্যের চেয়ে ছয় গুণ বেশি। এভাবে ২৩ কোটি টাকার একটি ভুয়া প্রস্তাব দিয়ে সরকারি ক্রয় নীতিমালার ৭৬ এর সুষ্পস্ট লঙ্ঘন করা হয়েছে।

এমনকি ক্রয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালের ২ জুলাই তারিখে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এর ধারা ৩২(১)(খ)(উ) এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৭৬(১)(ছ) বিধান অনুসারে সরকারি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্য ব্যতীত অন্য কোনো দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও অন্য কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকারী হতে পণ্য সরাসরি ক্রয় করা যাবে না। এরপরও চক্রটির রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের ফন্দি থামেনি।