চাঁদাবাজির সম্পদ ভাগ বাটোয়ারায় খুন-খুনিতে হিজড়ারা

ঢাকা: রাজধানী ও গোটা দেশজুড়ে হিজড়াদের প্রকাশ্য চাঁদাবাজি নতুন কিছু নয়। হিজড়া মানেই আতঙ্ক। তাদের চার-পাঁচজন করে তৈরি গ্রুপ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, বাড়ি, ট্রেন, বাস এমনকি লঞ্চেও চাঁদাবাজি করছে। জনপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা করে এ চাঁদার জন্য তারা চিৎকার-চেঁচামেচি, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও খিস্তি খেউর করে। প্রয়োজনে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। আর নবজাতকের খবর পেলে তো রক্ষা নাই। একাধিক গ্রুপ নিয়ে ওই বাড়িতে হামলা চালায়। ২০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত চাঁদা ধার্য করা হয়। চাঁদা দিতে না চাইলে প্রয়োজনে তাদের কেউ কেউ বিবস্ত্র হয়। তখন চাঁদার হার আরো বেড়ে যায়।

এভাবে প্রকাশ্যে সহজে চাঁদা মেলায়, চাঁদাবাজ হিজড়ার সংখ্যা দিন দিন রাজধানীতে বেড়ে যাচ্ছে। অনেক সক্ষম লোকও হিজড়া সেজে এই ব্যবসায় নেমে পড়েছে। রাজধানী জুড়ে শতাধিক গ্রুপে প্রায় ৫ হাজার হিজড়া এখন চাঁদাবাজি করছে। চাঁদার টাকায় একেকটি গ্রুপের প্রধানরা কোটিপতি বনে গেছেন। এদের মাসিক আয় গড়ে ২ লাখ টাকা। অনেকের রয়েছে নিজস্ব ফ্ল্যাট। নিজের বাসায় না থেকে এরা গ্রুপ ধরে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া করে থাকেন।

সম্প্রতি রাজধানীতে হিজড়াদের এই চাঁদাবাজির টাকার ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে দুটি খুনোখুনির ঘটনা ঘটে। গত ২৫ জানুয়ারি মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের ৮০/৩ নম্বর বাড়ির ৫ম তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে কোকিলা নামে এক হিজড়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় পুলিশ মমতা ও পায়েল নামে দুই হিজড়াকে গ্রেফতার করে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে কোকিলাকে তারা গলা কেটে হত্যা করে। পীরেরবাগ এলাকার বিভিন্ন দোকান, বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান থেকে সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকা চাঁদাবাজি হয়। এই হিসাবে মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে কোকিলার গ্রুপ। কিন্তু তাদেরকে চাঁদার মাত্র ৫ হাজার টাকা দেয়। এ কারণে তারা প্রতিশোধ নিতে কোকিলাকে হত্যা করে।

এ ঘটনার তিন সপ্তাহ পর মুগদা এলাকায় আরো এক হিজড়াকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। মুগদার আইসক্রিম গলির ভাড়া বাসা থেকে সুন্দরী (৪৫) নামে হিজড়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার প্রকৃত নাম সেলিম। এ ঘটনায় হিজড়াদের প্রধান শ্রাবন্তী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা করে। এই মামলায় রোমান নামে এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে। মুগদা থানার ওসি এনামুল হক এ ঘটনা সম্পর্কে বলেন, সুন্দরী নামধারী সেলিমের বাসায় শুধু হিজড়া নয়, পুরুষের যাতায়াত ছিল। সুন্দরীর টাকার দিকেও অনেকের নজর ছিল। লাশ উদ্ধারের সময় সুন্দরীর কোন টাকা-পয়সা পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে সুন্দরীর টাকার জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে।

রাজধানীর বনশ্রী, খিলগাঁও, মতিঝিল, উত্তরা, আশকোনা, মোহাম্মদপুর, আদাবর, গুলশান, বনানী, মগবাজার, মহাখালী, কলাবাগান, জিগাতলা, হাজারীবাগ, ফকিরাপুল, আরামবাগ, লালবাগ, শান্তিনগর, মধুবাগ, মিরপুর, মধ্যবাড্ডা, পীরেরবাগ, যাত্রাবাড়ী, রামপুরাসহ প্রায় সকল এলাকায় গ্রুপ ধরে হিজড়ারা চাঁদাবাজি করে। বিভিন্ন এলাকায় ভাগ করে হিজড়াদের চাঁদাবাজি চলছে। হিজড়াদের মধ্যে কারও কারও রয়েছে অনেক সম্পদ। খিলক্ষেত এলাকায় দলনেতা নাজমার অধীনে রয়েছে ৪০হিজড়া। ৩০ বছর আগে পুরুষাঙ্গ কেটে হিজড়া হয় নাজমা। সে এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে বেশ পরিচিত। তার প্রায় অর্ধকোটি টাকা বিভিন্ন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর কাছে সুদে দেয়া আছে। খিলগাঁও তিলপাপাড়ার ময়নাও কয়েক বছরের ব্যবধানেই বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছে। ময়না দক্ষিণ গোড়ান সিদ্দিকবাজার এলাকায় দেখতে দেখতেই পাঁচ তলার বিরাট বাড়ির মালিক বনে যায়। কয়েক কোটি টাকা দামে আরেকটি বাড়ি ক্রয়ের জন্যও প্রস্তুত হয়েছে সে। তার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে শুধু মাদক ব্যবসা চালিয়েই রেখা আক্তার ফাতেমাও খিলগাঁও এলাকায় তিনতলা ভবনের মালিক বনেছে। ধলপুর এলাকার আবুল হিজড়ার দুটি বাড়ি আছে। গোলাপবাগ এলাকার ১৩/বি/১ নম্বর পাঁচ তলা ও ধলপুর লিচুবাগানে একটি চার তলা ভবনের মালিক সে।