কুরআনের রেফারেন্স দিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় উচ্চ আদালতে

উচ্চ আদালত

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: হত্যাকাণ্ড আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বিধানটি এসেছে পবিত্র কুরআনের বানী থেকে। সঙ্গত কারণে পবিত্র কুরআনের আয়াতের রেফারেন্স দিয়েই সাবেক ব্রিটিশ হাইকশিনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যবেক্ষণ করা হলো উচ্চ আদালতে। রায়ে তিন সন্ত্রাসীকে মৃত্যুদণ্ড ও দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

অন্যায়ভাবে হত্যাকাণ্ডকে ইসলাম কতটা গুরুতর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তার প্রাসঙ্গিকতা টানতে পবিত্র কুরআনের তিনটি আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে। বৃহস্পতিবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির জানান, হাইকোর্টের রায়ে প্রথমবারের মতো পবিত্র কুরআনের আয়াতকে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনের যে তিনটি আয়াত রায়ে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে পবিত্র সূরা মায়েদার ৩২ ও সূরা নিসা ২৯-৩০ নম্বর আয়াত। এর মধ্যে সূরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, এ কারণেই আমি বনী ইসরাইলের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে, সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। তাদের কাছে আমার পয়গম্বরগণ প্রকাশ্য নির্দেশনাবলী নিয়ে এসেছেন। বস্তুত: এরপরও তাদের অনেক লোক পৃথিবীতে সীমাতিক্রম করে।

আর সুরা নিসার ২৯ ও ৩০ নম্বর আয়াতে আছে- (২৯) হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি দয়ালু। (৩০) আর যে সীমালঙ্ঘন করে কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে শীঘ্রই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। আর এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজসাধ্য।

সন্ত্রাসবাদী হামলার বিচারের ক্ষেত্রে কুরআনের আয়াত সম্বলিত এই পর্যবেক্ষণ নতুন তাৎপর্য বহন করে। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের উৎস হিসেবে কুরআনের কিছু আয়াতের অপব্যাখ্যা করা হয়। এমনকি অন্য ধর্মাবলম্বীরাও সন্ত্রাসবাদের জন্য ইসলামে বর্ণিত জিহাদকে দায়ী করে থাকে। এর প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি বিরাজ করছে। এসব বিভ্রান্তির মধ্যে আদালতের রায়ে সুস্পষ্টভাবে অন্যায় হত্যাকাণ্ডকে ইসলাম বিরোধী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যার সমর্থনে এসব আয়াত তুলে ধরা হয়েছে। এটি বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত পরবর্তী বিচারগুলোর ক্ষেত্রে এটি একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।

এ ব্যাপারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টে এর আগে এ ধরনের (কুরআনের আয়াত উদ্বৃত করে) কোনো রায় আসেনি। হাইকোর্টের ইতিহাসে এটাই প্রথম। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উনি (বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম) যখন ছিলেন তখন মনে হয় কোনো রায়ে তেমনটি তিনি উল্লেখ করেছিলেন। সন্ত্রাসবাদ দমন ও এ সংক্রান্ত কার্যক্রমের বিচারের ক্ষেত্রে এটি নতুন একটা নিদর্শন হয়ে থাকবে। এই মামলায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি জেল আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে মুফতি হান্নানসহ ৩ জনের ফাঁসি ও ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বহাল রাখেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি এ কে এম আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ।

বৃহস্পতিবার এ রায়ের ১৬৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে ২১ মে সিলেটের হয়রত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি এর মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা করা হয়। এ হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ প্রায় অর্ধ-শতাধিক ব্যক্তি আহত হয় এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে শিপনকে মৃত্যুদণ্ডদেয়। আর মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ এবং মুফতি মঈনউদ্দিন কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন।