রোজার আগেই খাদ্য মজুদদারি হচ্ছে এখনই: ক্যাব

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: বাজারে পেঁয়াজ, রসুন, লবণ, ডাল, সুগন্ধি চালসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় ‘রোজা সামনে রেখে মজুদদারির’ সন্দেহের কথা বলেছেন ভোক্তা অধিকার কর্মীরা।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ‍দুই দিনে সুগন্ধি চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে। ডাল, ছোলা, রসুন আর লবণের দামও কম-বেশি বেড়েছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মজুদদার পর্যায়ে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে; এর পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণও তারা দেখছেন না।
আর কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলছেন, রোজা সামনে রেখে অতিরিক্ত মুনাফা করার আশায় ‘ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট’ এক মাসেরও বেশি আগে থেকে পরিকল্পিতভাবে বাজার চড়িয়ে দিচ্ছে বলে তারা ধারণা করছেন।

“সমনে রোজার মাস, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের জন্য অধিক মুনাফার একটা সুযোগ। রোজা উপলক্ষে দাম বাড়ানো হয়েছে- এমন যাতে কেউ বলতে না পারে তাই অনেক আগেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে।”
এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর ভূমিকারও সমালোচনা করেন নাজের হোসাইন।

“যৌক্তিক কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে ডাল, লবণ, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর মনিটরিং সেল না থাকায় এটা সম্ভব হচ্ছে।”

লবণের দাম বাড়ছে গত এক মাস ধরেই। খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা দরের লবণ গত সপ্তাহেও ৩০/৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আর এ সপ্তাহে সেই লবণ ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে নাজের বলেন, “কৃষকরা দেড়শ-দুইশ টাকা মণ দরে অপরিশোধিত লবণ বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে। তাদের কাছ থেকে কাঁচামাল হাতিয়ে নেওয়ার পর এখন তারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে।”
কারওয়ান বাজারের এক পাইকারি দোকানের বিক্রেতা আব্দুর রাকিব বলেন, গত সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩২ টাকা। এ সপ্তাহে বেড়ে ৪৫ টাকা হয়েছে।

“পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের কৃষকরা এখন বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। দেশি রসুনের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন ১০০ টাকা হয়েছে।”
পেঁয়াজচাষীরা এ অবস্থার জন্য শিলাবৃষ্টিকে দায়ী করছেন।

সুজানগর উপজেলার কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, “এবার শিলাবৃষ্টিতে মাঠে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে।যেসব পেঁয়াজ দ্রুত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা, সেগুলো কম দামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। আর যেগুলো সংরক্ষণ উপযোগী, সেগুলো ছাড়া হচ্ছে ৪০/৪৫ টাকা কেজি দরে।”

নূর জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী রাসেল জানায়, পাইকারিতে মসুর ডালের ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি ছোলা ৭৬ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৪৫ টাকা, মুগ ডাল ১০০ টাকা, মসুর ডাল দেশি ১৩৮ টাকা ও বিদেশি ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব পণ্যের প্রতিটির দাম গত এক সপ্তাহে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা করে বেড়েছে বলে জানান তিনি।

চাটখিল রাইস এজেন্সির বিক্রয়কর্মী বিশু জানান, বাজারে বিআর-২৮, নাজিরশাইলসহ কয়েক জাতের নতুন চাল আসায় সেসব চাল কেজিতে ২-৩ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে। তবে সুগন্ধি চালের দাম ‘বাড়িয়েছেন’ মিল মালিকরা।
“গত রোজার আগে প্রতি কেজি সুগন্ধি চাল ৭৫ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। এবার রোজার এক মাস আগে থাকতেই দাম বাড়া শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি চিনিগুঁড়া ও কালোজিরা চাল ছিল ৯০ টাকা। এ সপ্তাহে সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।”

শুক্রবার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে ভোজ্যতেলের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল। সবজি, মাছ-গোস্ত, মসলাসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য মিলছে আগের দামেই।

বেঙ্গল অয়েল স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী মহিউদ্দিন জানান, বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির সয়াবিনের পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৪৩৫ টাকায়; এক লিটারের বোতল ৯০ টাকায়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ৭৫ টাকা ও পাম তেল ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর প্রধান এ বাজারে গত সপ্তাহের মতোই প্রতি কেজি ফার্মের মুরগি ১৫০ টাকা ও গরুর গোস্ত ৪২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আর করলা, টমেটো, বেগুন, চিচিঙ্গার কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা; ঢেঁড়শ ও পটল ২০ টাকা এবং আলু ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।