প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে- সব বোর্ডে একই প্রশ্ন, সব কোচিং সেন্টার বন্ধ, ফাঁস হলেই পরীক্ষা বাতিল

ঢাকা: আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার সব শিক্ষাবোর্ডের ছাত্রছাত্রী পাবে একই প্রশ্ন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন এ তথ্য জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পরীক্ষা নিয়ে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকের পর তিনি এ কথা জানান।

সচিব বলেন, সারাদেশে শিক্ষার মান যেন একই হয় সেজন্য এসএসসি পরীক্ষায় সব বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্ন রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আগে আলোচনা হয়েছে বিভিন্ন বোর্ডে বিভিন্ন প্রশ্ন থাকার কারণে শিক্ষার মান একইরকম থাকে না। এজন্য শিক্ষার্থীরা এবার একই প্রশ্নে পরীক্ষা দেবেন।

সব কোচিং সেন্টার আজ শুক্রবার থেকে বন্ধ-
দেশের সব কোচিং সেন্টার আজ (২৫/০১/২০১৮) থেকেই বন্ধ থাকবে। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা চলাকালীন পর্যন্ত এ ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলা থাকতে পারবে না। আজ সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পরীক্ষা নিয়ে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকের পর এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

শিক্ষামন্ত্রীর ভাষ্য, কোচিং সেন্টার হচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের আখড়া। এ কারণে পরীক্ষার সাত দিন আগে থেকে এই কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে আমরা মরিয়া ও কঠোর। কারণ আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা সবদিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। আগে বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নফাঁস হতো, সেটা বন্ধ করেছি। কিন্তু এখন শিক্ষকরাই প্রশ্নফাঁস করছেন। তবে সব শিক্ষক নন, কিছু শিক্ষক এসবের সঙ্গে জড়িত।

ফেসবুক বন্ধের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, যেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়, পরীক্ষা চলাকালীন সীমিত সময়ের জন্য এগুলো বন্ধ রাখার উদ্যোগ নিয়েছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বৈঠকে জানানো হয়, পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষার ৩০ মিনিট আগেই প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে এসে নিজ নিজ আসনে বসতে হবে। এরপর আর কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। ছবি তোলা যায় না এমন একটি মোবাইল ফোন শুধু কেন্দ্র সচিবের কাছে থাকবে। এছাড়া পুরো কেন্দ্রে আর কোনও মোবাইল ফোন থাকবে না। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোনও ধরনের ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকা যাবে না। এমনকি পরীক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আংটি আর ঘড়ি পরীক্ষা করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশের সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা কর্মকর্তারা একটি টিম করে দেবেন যারা পরীক্ষার আধঘণ্টা আগেই কেন্দ্রে পৌঁছাবে। তবে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কোনোভাবেই প্রশ্নের প্যাকেট খোলা যাবে না। কেউ এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া কেন্দ্রে মোবাইল কোর্টও থাকবে, তবে দেশের সব কেন্দ্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত দেয়া হয়তো সম্ভব হবে না। আর এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মিললেই পরীক্ষা বাতিল-
আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলেই সে পরীক্ষা বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার। আগামী ১ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় বিষয়ে পরীক্ষা হবে। গত কয়েক বছর ধরে পরীক্ষার আগে ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মিললেও পরীক্ষা বাতিল করেনি সরকার।

সচিব সোহরাব বলেন, আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যদি এ রকম ঘটনা (প্রশ্ন ফাঁস হয়) ঘটে, পরীক্ষার পরেও যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে, পরীক্ষার আগে প্রশ্ন আউট হয়েছে সেক্ষেত্রে সে পরীক্ষা বাতিল হবে। কোনো অবস্থাতেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না।

পরীক্ষা হওয়ার পরেও যদি প্রমাণ হয় যে, এই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে তাহলে সেই পরীক্ষাটি অবশ্যই বাতিল করব। কোনো অবস্থাতেই কোনো ধরনের আপস আমরা করতে রাজি নই। প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার মত যত পথ আছে তা বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দাবি করে সোহরাব বলেন, কোনো অবস্থাতেই আমরা আমাদের এই প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য কাউকে সে পথে এগোতে দেব না। যদি কেউ এগোন এবং ধরা পড়েন, নিশ্চিত প্রমাণ পেলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঝুঁকি আমরা এবার নিচ্ছি, পুরোপুরি নিচ্ছি, আমরা পরীক্ষা বাতিল করব। কোনো অবস্থাতেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নে (যদি ফাঁস হয়) পরীক্ষা নেব না। শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সতর্ক করে সোহরাব বলেন, কোনো অবস্থাতে যদি কেউ ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে আনন্দিত হন, তাহলে তার জন্য সংবাদ হচ্ছে, সেই পরীক্ষাটি বাতিল হবে।