দুদকের উপর মানুষের আস্থা ফিরবে : দুদক চেয়ারম্যান

 

নিউজ নাইন২৪ডটকম, সাতক্ষীরা: কাজের মাধ্যমেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপর মানুষের আস্থা ফিরে আসবে বলে আশা ব্যাক্ত করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

শনিবার দু’দিনের সফর শেষে সাতক্ষীরা ত্যাগের আগে স্থানীয় সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ১৪ এপ্রিল আমার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পূর্ণ হয়েছে। শ্যামনগর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা এবং সর্বশেষ প্রান্তে অবস্থিত। এজন্যই এখান থেকে শুরু করলাম। মূলত টেকনাফ, তেতুলিয়া, জকিগঞ্জ ও শ্যামনগর-দেশের চার প্রান্ত একই সুতায় গেঁথে আমরা দুর্নীতি বিরোধী প্রচারণা শুরু করবো।

তিনি বলেন, দুদকের মামলার কোনো আসামি বাইরে থাকবে না। কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসেই বাইরে থাকতে হবে। দুদকে প্রায় তিন হাজার মামলা রয়েছে, যার প্রত্যেকটিই প্রাথমিকভাবে সত্য। এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হবে এবং সাজা হবে। কারণ প্রত্যেকটিই আগে অনুসন্ধান করা। এছাড়া প্রায় আড়াইহাজার অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মানুষকে জেলে ভরেই যে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব, আমি তা মনে করি না। দুর্নীতির বিষয়গুলোতে মানুষকে সচেতন করা দরকার।

তিনি বলেন, যাদের বয়স বেশি হয়ে গেছে, তাদের ফেরানো কঠিন। কিন্তু যারা বাচ্চা, তারা কাঁদামাটির মতো। তাদের যেভাবে গড়ে তোলা হবে, সেইভাবেই গড়ে উঠবে। এজন্য দেশের ৮৫ লাখ শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে যদি এক লাখ শিশুও লিফলেট থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহণ করে, তবে তাই হবে আমাদের অর্জন।

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকের নখও আছে, দন্তও আছে। শক্তিশালী আইন ও ক্ষমতা আছে। সমস্যা হলো ক্ষমতা ও আইনে জং (মরিচা) পড়েছে। তবে, কাজের মাধ্যমে দুদকের উপর মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।

দুদকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, দুদকে প্রবেশে সাংবাদিকদের উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। মূলত আমাদের স্টাফরা সব সময় অজুহাত দেখায়, সাংবাদিকদের কারণে তারা কাজ করতে পারছে না। কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করি না। তাই একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। তবে তাও নতুন নয়। ২০১২ সালে একটি নিয়ম করা হয়েছিল, সাংবাদিকরা পিআরও’র সঙ্গে সারাদিন কথা বলতে পারবে, যেতে পারবে। আর বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সচিবের সঙ্গে দেখা করতে পারবে। তারপরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচিবের সঙ্গে যেকোন সময় দেখা করতে পারবে।

এটা আগেও ছিল, কিন্তু কার্যকর ছিল কম। তাই কার্যকরের চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। কিন্তু আমরা পত্রিকায় দেখলাম, দুদকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার খবর।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বিনা কারণে কাউকে হয়রানি করবো না। দুর্নীতিবাজদেরও ছাড় দেব না। তবে, আমাদের মূল কাজ সচেতনতা সৃষ্টি করা।

বাচ্চারা দুর্নীতি কি তা বোঝে না, কিন্তু আমরা আদর্শলিপির কথা-বার্তাগুলোর মাধ্যমে তাদের জাগিয়ে তুলতে চাই। এজন্য দেশে ২০ হাজার ৮৮৫টি সততাসংঘ গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলো কার্যকর করা হবে।

দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব সময় অজুহাত দেখায়। তাদেরকে স্পষ্ট বলে দিয়েছি, কাজ করলে পুরস্কৃত হবেন, কাজ না করলে তিরস্কার। এ সময় তিনি অভিযোগ তদন্তের বিষয় তুলে ধরে বলেন, একটি অভিযোগ তদন্তে ৬০দিন সময় দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা তা করতে পারছেন না। এজন্য তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন তদন্তের কাজ শেষ হয়নি। এটাকে তারা আবার ঘুরিয়ে বলছে, তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আমি মূলত জানতে চেয়েছি, তদন্ত ৬০ দিনে না হলে কত সময় লাগবে? চার বছর না দশ বছর, সেটা জানতে পারলে আইন সংশোধন করা যাবে।