লাগামহীন চালের দাম

ঢাকা: হঠাৎ করে চিকন চালের পাশাপাশি মোটা চালের দামও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারন মানুষের। বাজারে চাল কিনতে আসা দিনমজুর সেকেন্দার আলী জানান, সপ্তাহ খানেক আগেও চাল কিনেছি প্রতি কেজি ৪০ টাকায়। কিন্তু সেই চালই এখন ৪৫ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। দ্রুত চালের দাম বাড়ায় আমরা মহাবিপাকে পড়েছি।

বাহাদুর বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা এরশাদ হোসেন বলেন, গত পাঁচদিনের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বস্তায় ৫০ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চাল মজুদ করে খুচরা ব্যবসায়ীদের উপর চাপ প্রয়োগ করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে চাল ছাড়ছে।

ধানচালে দাম নির্ধারণে মধ্যস্বত্বভোগীদের একচ্ছত্র আধিপত্যের ফলে দেশের ধান উৎপাদনে নিয়োজিত কৃষকরা যেমন ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন, তেমনি বেশি দামে চাল কিনে সাধারণ ভোক্তারও ক্ষতিগ্রস্ত হন। গবেষণায় বলা হয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা করছেন অতিমাত্রায়। কৃষকরা দীর্ঘ সময় বিনিয়োগ করে প্রতিকেজি ধানে ১ থেকে ২ টাকার বেশি মুনাফা করতে পারে না। দাম নির্ধারণে অক্ষমতার কারণে। অনেক সময় তারা বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হন। অন্যদিকে ধান থেকে চাল তৈরি প্রক্রিয়ায় জড়িত ব্যবসায়ী ও মিলাররা সেই ধান কেনে কৃষকের বিক্রি দামের চেয়ে দেড়গুণ বেশি দাম দিয়ে। এতে মিলারদের ধান সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় ধানের দামের ৫০ শতাংশ চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। কৃষকের কাছ থেকে প্রতিকেজি ২৪ টাকা দামে ধান কিনে তার সঙ্গে আরও ৫০ শতাংশ খরচ যোগ করেও চালকল মালিকদের যৌক্তিক মুনাফাসহ প্রতিকেজি চালের দাম ৪০ টাকার মধ্যে থাকাই যুক্তিযুক্ত। বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রীদের মতে প্রতিকেজি চালের দাম ৪০ টাকার আশপাশেই থাকবে। চালের দামের সঙ্গে কৃষকের উৎপাদন খরচের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। প্রতিমণ বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। ওই ধান যদি তারা ১০০০ টাকা মণের নিচে বিক্রি করেন, তা হলে কৃষককে লোকসান গুনতে হবে?
ধান বিক্রি করে যদি আমাদের মূল খাদ্যের উৎপাদনকারী কৃষককে লোকসানই দিতে হয়, তাহলে তারা ধানচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিঘিœত হবে।