‘ভয়াবহ পরিণতি’র হুমকি দিয়ে মাইকিং- নো-ম্যানস ল্যান্ডে আতঙ্কে রোহিঙ্গারা

ডেস্ক: তমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা অচিরেই বাংলাদেশে প্রবেশ না করলে ‘ভয়াবহ পরিণতি’ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে মাইকিং করছে বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। নেতৃত্ব দিচ্ছে উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল অং সো। যে কোনও মুহূর্তে ‘বিপদের সম্মুখীন হওয়ার’ ভয় দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের নো-ম্যানস ল্যান্ড ছাড়া করতে প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তে মাইকিং করছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে। কোথায় যাবেন, কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না তারা।

তমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ডের বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাখাইন রাজ্য সফরের সময় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আসে মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল অং সো। এসময় সে রোহিঙ্গাদের ডেকে নিয়ে অচিরেই বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার ইঙ্গিত দেয়। তা না হলে তাদের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে।
এই রোহিঙ্গারা আরও জানান, ৯ ফেব্রুয়ারির পর থেকে তাদের তমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ড থেকে তাড়াতে নানা কর্মকা- শুরু করেছে বিজিপি। ওই দিনের পর থেকে তারা তাবু খাটিয়ে তমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ডেই দিনরাত অবস্থান করছে। প্রতিরাতেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে বিজিপি। মাঝে মাঝেই তারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে ভয় দেখাচ্ছে। একইসঙ্গে তারা প্রতিদিনই মাইকিং করে হুমকি দিচ্ছে, নো-ম্যানস ল্যান্ড না ছাড়লে যেকোনও মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের চরম বিপদের সম্মুখিন হতে হবে।

গত বছরের ২৪ আগস্ট থেকে বৌদ্ধদের নির্যাতন শুরু হওয়ার পর থেকে রাখাইন রাজ্য থেকে প্রাণ বাঁচাতে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসেন। এসময় অনেক রোহিঙ্গা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুম ও তমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ডে আটকা পড়ে এবং সেখানেই আশ্রয়শিবির তৈরি করে অবস্থান নেয়। পরে ঘুনধুম নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে সরিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে আসে বাংলাদেশ সরকার। তবে তমব্রু সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়া হয়নি। এখনও সেখানে প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।

তমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ডে বাংলাদেশ অংশ থেকে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে। নিজেকে রাখাইন রাজ্যের রাইম্যাখালী এলাকার বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, প্রায় পাঁচ মাস ধরে আমি এই নো-ম্যানস ল্যান্ডে আছি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল অং সো আমাদের কাঁটাতারের বেড়ার পাশে ডাকে। ভয়ে আমরা কাঁটাতারের বেড়ার খানিকটা দূরে দাঁড়াই। এসময় সে আমাদের উদ্দেশে বলে, এই জমি থেকে শিগগিরই অন্য কোথাও সরে যাও। নয়তো পরিণতি ভয়াবহ হবে।’

আবুল হোসেন (৬৫) নামের অন্য এক রোহিঙ্গা বলেন, রাত হলেই মিয়ানমারের পাহাড় থেকে ইট ও কাঠের টুকরো নিক্ষেপ করা হয়। এসব ইট ও কাঠের টুকরো ত্রিপলে এসে পড়ে তা ছিদ্র হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, এভাবে ইট-কাঠের টুকরো ছুড়ে মারায় আমাদের শিশু সন্তানদের মনে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে।’

খালেদ হোসেন নামে আরও এক রোহিঙ্গা বলেন, নির্যাতনের ভয়ে রাখাইন রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে সীমান্তে নো-ম্যানস ল্যান্ডে এসে আশ্রয় নিয়েছি। এখানেও আমাদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। এ পৃথিবীতে আমাদের কোনও জায়গা নেই। আমরা যাবো কোথায়? আমাদের যদি এখন কুতুপালং বা বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরিয়ে নেয়া হয়, তবে খুবই উপকার হবে। মিয়ানমার সরকারের ওপর ভরসা নেই। এ সরকার যে কোনও মুহূর্তে আমাদের গুলি করার নির্দেশ দিতে পারে।’
কক্সবাজার বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবদুল খালেক বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তের তমব্রু পরিদর্শন করে গেছেন সেদেশের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অং সো। মিয়ানমার সরকারই এটা আমাদের জানিয়েছে। ওই সময় অং সো নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে সরে যেতে বলেছেন, এটাও আমরা শুনেছি। রোহিঙ্গারা নো-ম্যানস ল্যান্ড থেকে অন্যত্র যাবে কিনা এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। রোহিঙ্গারা নো-ম্যানস ল্যান্ড ক্রস করলে এ নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করবো। বিজিপির মাইকিংয়ের ব্যাপারেও আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি।’