৫ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের লোকসান ৪৩৫১ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে জরাজীর্ণ চিনিকলগুলো প্রতিস্থাপন, মেরামত, বহুমুখী পণ্য উৎপাদন, রিফাইনারি প্রতিষ্ঠাসহ নানামুখী পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। কিন্তু আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় কাজে আসেনি কিছুই।

একসময়ের লাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি বারবার লোকসানের কারণে অর্থসহায়তাও পাচ্ছে না। তাদের সহায়তা করতে আগ্রহী নয় সরকারি-বেসরকারি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এখন তাকিয়ে রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগের দিকে। সেটাও বেশ কয়েক বছর কার্যত প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। সবমিলে উন্নয়ন কর্মকা- দূরের কথা, বর্তমানে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে সংকটের সময় বিদেশ থেকে কিছু চিনি এনে বিক্রি করার সামর্থ্যও নেই বিএসএফআইসির।

এর মধ্যে কয়েক মাস আগে শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এ প্রতিষ্ঠানকে রমজানে চিনির সংকট মেটাতে চিনি আমদানির সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সেটাও পারেনি অর্থ না থাকায়।

তথ্য বলছে, কয়েক দশক ধরে লোকসানে চলছে বিএসএফআইসি। এর মধ্যে গত পাঁচ বছরে মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় চার হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ৯৭২ কোটি টাকা। তার আগের বছরও (২০১৯-২০ অর্থবছর) লোকসান ছিল ৯৭০ কোটি। সব মিলিয়ে আট হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংকঋণের দায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ওপর।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, শেষ ২০২০-২১ অর্থবছর রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশনগুলোর লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) লোকসান সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন (বিসিআইসি) এবং তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সুগার মিলস করপোরেশন গঠিত হয়। পরবর্তীসময়ে এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ ফুড অ্যান্ড অ্যালাইড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন একত্রীভূত হয়ে গঠিত হয় বিএসএফআইসি। বর্তমানে করপোরেশনের ১৫টি চিনিকল, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং, একটি ডিস্টিলারি ও একটি জৈবসার কারখানা আছে। তবে ১৫টির মধ্যে ছয়টি চিনিকল বন্ধ রাখা হয়েছে ২০২০ সাল থেকে।

এদিকে অর্থাভাবে এ করপোরেশন এখন চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি আখ চাষেও কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। কয়েক মৌসুম থেকে নিবন্ধিত আখচাষিদের সার, কীটনাশক ও সেচের জন্য ঋণ দিতে পারেনি। ফলে দ্রুত কমছে আখের উৎপাদন। এতে পরবর্তীসময়ে চাইলেও বেশি চিনি উৎপাদনের কাঁচামাল সংকটের শঙ্কায় পড়ছে কলগুলো।

করপোরেশনের অধিকাংশ কর্মকর্তা মনে করেন, বর্তমানে চিনিকল দিয়ে এ প্রতিষ্ঠান লাভজনক অবস্থানে ফেরানো সম্ভব নয়। কারণ দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে তিনটি ত্রিশের দশক, তিনটি পঞ্চাশের দশক, সাতটি ষাটের দশক ও দুটি বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে স্থাপিত হয়েছে। অধিকাংশ চিনিকলের যন্ত্রাংশ অতি পুরোনো ও জরাজীর্ণ। এসব চিনিকলে উৎপাদন খরচ বিক্রিমূল্যের কয়েকগুণ বেশি।