১৮ বছরের নিচের বয়সীদের কুরবানী নিষিদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া

ঢাকা: আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহায় পশু জবাইর জন্য ১৮ বছরের নিচে কিশোরদের ব্যবহার না করার জন্য সরকারের তরফ থেকে যে আহ্বান জানানো হয়েছে সে বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে দেশ জুড়ে। সাধারণত, সারাদেশে বিভিন্ন মাদরাসাগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ কুরবানীর পশু জবাই এবং চামড়া সংগ্রহের কাজ করে থাকেন।

তাদের কেউ কেউ বলছেন, ১৮ বছরের নিচে শিশুদের তারা সরাসরি জবাইর কাজে নিয়োজিত করেন না। তবে অনেকেই বলছেন, সরকারের এই নির্দেশনা মানতে গেলে তাদের চামড়া সংগ্রহের মাধ্যমে আয়ের পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। বাংলাদেশে শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে দেশে প্রায় ১৪ হাজার মাদরাসা রয়েছে, যার শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এ মাদরাসাগুলোর আয়ের উৎস মূলত দান-অনুদান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের দুটো সময়ে তারা বড় ধরনের আয় করেন, একটি পবিত্র রমযান মাসে যাকাত থেকে এবং অপরটি ঈদুল আযহায় কুরবানীর পশুর চামড়া থেকে। “আমাদের মাদরাসার বার্ষিক খরচের দেড় থেকে দুই মাসের খরচ আসে শুধুমাত্র কুরবানীর চামড়া সংগ্রহ থেকে। আরো বড় মাদরাসাগুলোতে এটা আরো বেশি আসে” বলেন ঢাকার এক মাদারাসার শিক্ষক মোহাম্মদ শাহজালাল খান। তিনি বলেন, “যেহেতু দ্বীন ইসলামে কুরবানী পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের কোনো বিধি-নিষেধ নেই সেকারণে আমরা ১৮ বছরের নিচে পশু জবাই না করার অনুরোধের সাথে একমত নই।”

স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত আখতার প্রায় ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে পশু জবাই করে আসছেন। ছোট বয়সে পশু জবাইয়ে চাপ অনুভব করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটাকে আমরা খারাপভাবে নিই না, খারাপ হতে পারে না। কারণ এটা ইসলামী বিধান। আর এটা আমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করি। ইসলাম মানুষকে মহান ও মহৎ হতে শিক্ষা দেয়। এর মাধ্যমে যেই অর্থটা আসে সেটা দিয়ে আমাদের লালন-পালন করা হয়, আমাদের কিতাবাদি কেনা হয়।” ১৮ বছর বয়সী আরেকজন শিক্ষার্থী আমজাদ হোসেন কুরবানীর পশু জবাই করছেন প্রায় ১২ বছর বয়স থেকে। তিনি বলেন, “জবাইয়ের ক্ষেত্রে বয়সটা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি, মনের সাহসটাই বড়।”

অগাস্টে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জানায় যে, যাদের বয়স এর চেয়ে কম তাদের পশু জবাই না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, নির্দেশনাটি আগে থেকেই দেয়া থাকলেও এবার ঈদে এটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক কাউকে কুরবানীর কাজে অংশ না লাগানো হয় সে অনুরোধ করেন কর্মকর্তারা। এর কারণ হিসেবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের শারীরিক ও মানসিক অপরিপক্কতার অজুহাত তুলে ধরা হয়।

ঢাকার আরেকটি মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতী আবুল কালাম বলেন, আমরা সরকার থেকে এধরনের অনুরোধ নিয়ে অসন্তুষ্ট। আমরা মনে করি, সরকার মাদরাসার উপর বাড়তি একটি চাপ প্রয়োগের জন্য এমনটা করেছে। “শত-শত গরু জবাই হয় পরিবারের লোকেরা, স্কুল-কলেজের ছেলেরা দেখে। আনন্দ পায় যে আমাদের গরু জবাই হচ্ছে। এটাতো কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় না। ইসলামের কাজে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই” বলেন মাদরাসা অধ্যক্ষ আবুল কালাম।

মনস্তত্ববিদ অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, “পশু জবাই করার মোটিভ মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা। এরকম একটি ইনটেনশন ছোটবেলা থেকে হলে ধর্মীয় অনুশাসনের দিক থেকে একটি ইতিবাচক দিক থাকবে। বাচ্চরা ছোট থেকেই সৎ ও খোদাভীরু হয়ে উঠবে। তারা হিংস্রতা মুক্ত থাকবে। অধ্যাপক কামাল মনে করেন, কুরবানীর কাজে নিয়োজিত হলে শিশু-কিশোরদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে এমনটা বলার সুযোগ নেই। মাদরাসাগুলোও বলছে, ধর্মীয় বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তারা সরকারের এই অনুরোধের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন।