হানিফ ফ্লাইওভারের গোড়ায় ‘মাদকরাজ্য’

রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের গোড়ায়, চানখাঁরপুল অংশের ফুটপাতের নিত্যদিনের দৃশ্য এটি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের তৎপরতার অভাবে স্থানটি কয়েক বছর ধরেই মাদকসেবীদের ‘রাজ্য’।

গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন কেনাবেচা ছাড়াও চলে মাদকসেবীদের রাত্রিযাপন। দুর্গন্ধ আর মাদকের আস্তানা হওয়ায় পথচারীরাও এ পথকে ‘ত্যাজ্য’ করেছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে চানখাঁরপুল মোড় থেকে নিমতলী গেট পর্যন্ত ঘুরে ফুটপাতজুড়ে অর্ধশতাধিক মাদকসেবীর দেখা মিলল। কয়েকজনকে দেখা গেল, ফুটপাতেই হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। কেউ ঝিমুচ্ছে।

এদেরই একজন দুলাল মিয়া। কোনো কাজ করেন না, অথচ বছরের পর বছর ধরে এই এলাকাতেই মাদকসেবন করছেন বলে জানান ।

“এক সময়ে ট্রাক চালাইতাম। সাড়ে ৭ বছর ধরে কোনো কাজ করি না। এখানেই নেশা করি। লোকজনের কাছে চেয়ে খাওয়া-দাওয়া করি।”

কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরা, কুমিল্লা ও সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা পেরিয়ে মাদক এখানে পৌঁছায় জানিয়ে তিনি বলেন, “বড় ব্যবসায়ীদের নিয়ে আসা মাদক কেনে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পরে তারা দিনভর বিক্রি করে।”

এখানে ইয়াবার কেনাবেচাই বেশি হয় বলে জানান তিনি।

আরেক মাদকসেবী গাফফার মিয়া জানান, তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায় বলে সারাক্ষণই এখানে মাদকসেবীদের আনাগোনা থাকে।

কিছুদূর এগোতে জনা দশেক মাদকসেবীর দেখা পাওয়া গেল। এক ‘ময়লা কুড়ানিকে’ ঘিরে তারা ভিড় জমিয়েছেন, চাহিদা মোতাবেক ময়লার ব্যাগ থেকে যিনি বের করছিলেন কাঙ্ক্ষিত মাদক।

কাছে যেতেই এক নারী মাদক বিক্রেতার ধমক, ‘মাইয়া মানুষ এহানে কি করেন? লাগব? লাগলে আইসেন।’

স্থানীয়দের ধারনা, এখানে যারা মাদক কিনতে বা সেবন করতে আসে, তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের শিক্ষার্থীও থাকতে পারে। চানখাঁরপুলের কাছেই এ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

“কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, রিকশাচালক থেকে শুরু করে সবধরণের মানুষকেই এখানে দেখা যায়। কেউ কেউ তো প্রাইভেট কার নিয়ে আসেন,” বলেন নিমতলীর বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম।

ক্ষুব্ধ তরিকুলের অভিযোগ প্রশাসনের দিকেই।

আগে এ রাস্তায় গাড়ি পার্কিং ছিল। তখন এসব চলত। ফ্লাইওভার হওয়ার পর ভাবছিলাম এসব দূর হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি, আরও বাড়ছে এখন। এভাবে তো চলতে পারে না।”

আগামসি লেনের বাসিন্দা নজরুল ইসলামের মতে, সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার ছেলেরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এ ‘মাদক রাজ্যে’র অংশীদার বলে অভিযোগ তার।

“দিনের পর দিন এখানে প্রকাশ্যে মাদকসেবন, বেচাবিক্রি চলে, আর প্রশাসন কিছু বলে না; এটা কিভাবে সম্ভব?”

তবে এ অভিযোগ মানতে নারাজ শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকী।

 “কিছুদিন পরপরই ওখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের পর ওরা চলে যায়। কিন্তু পরে আবার ফিরে আসে। এমন একটা অবস্থা যে, ওদের অ্যারেস্টও করা যায় না।”

নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে এ পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি ‘আরও ভালো করে দেখা’র প্রতিশ্রুতি দেন।