সেরে উঠছেন ‘বৃক্ষমানব’, হাত-পা শেকড়মুক্ত

ঢাকা: বাংলাদেশে ‘বৃক্ষমানব’ বলে পরিচিত আবুল বাজনদার গত চার মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাত-পায়ে শেকড়ের মতো গজিয়ে উঠা বিরল এক রোগের চিকিৎসা দিতে তাকে গত চার মাসে দফায়–দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

গত ১০ বছর ধরে বিরল এ রোগে ভুগতে থাকা আবুল বাজানদারকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তখন এনিয়ে অনেকরই ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আবুল বাজানদারের দু’হাত এবং দু’পা মোটা ব্যান্ডেজ দিয়ে মোড়ানো।

চারমাস আগে তাকে যখন এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তার চোখে মুখে ছিল উদ্বেগ আর আতংকের ছাপ।

কিন্তু চারমাস পরে সেটি অনেকটাই কাটিয়ে উঠে এখন তিনি আত্মবিশ্বাসী। নিজের পরিপূর্ণ সুস্থতার বিষয়ে বাজানদার এখন আশাবাদী।

বাজনদার বলেন, ‘ওনারা (ডাক্তাররা) সবাই আশা করছেন যে আল্লাহর রহমতে আমি আবার সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে চলতে-ফিরতে পারব।’

গত চারমাসে আবুল বাজনদারের হাতে এবং পায়ে মোট ছয়টি অপারেশন হয়েছে। এখন মোটা ব্যান্ডেজ খুলে তাকে নিয়মিত ড্রেসিং করানো হয়। দফায়-দফায় অস্ত্রোপচার করা হলেও তার হাত-পা এখনো কর্মক্ষম হয়নি।

খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতে তাকে অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়। হাসপাতালের কেবিনে গিয়ে আবুল বাজনদারের সাথে দেখা গেল তার বাবা-মাকে।

ছেলের চিকিৎসার বিষয়টি একসময় কল্পনাও করতে পারেননি আবুল বাজানদারের মা আমেনা বিবি। ছেলের সুস্থতার আশায় মাসের পর মাস তিনি হাসপাতালে কাটাচ্ছেন।

আমেনা বিবি বলছিলেন, ‘আমি এ ছেলে নিয়ে দশটি বছর মানুষের কাছ থিকি সাহায্য নিয়ে পথে পথে বেড়াইছি। সবাই আশা দেচ্ছে যে তোমার ছেলে সুস্থ হইয়ে যাবে।’

আমেনা বিবি জানান ডাক্তাররা ধারনা দিয়েছেন যে প্রায় বছর খানেক হাসপাতালে থাকতে হবে।

আবুল বাজনদারের হাতে-পায়ে শিকড় গজিয়ে উঠাকে ‘ট্রিম্যান সিনড্রোম’ বলে বর্ণনা করেছিলেন চিকিৎসকরা। বিরল এ রোগ পৃথিবীতে এর আগে মাত্র দু-একজনের হয়েছিল বলে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা জানতে পেরেছেন।

গত চারমাসে দফায়-দফায় অস্ত্রোপচার করা হলেও চিকিৎসায় অগ্রগতি কতটা হয়েছে?

শেকড় কি আবার উঠবে?

আবুল বাজনদারের চিকিৎসা পর্যবেক্ষণকারী চিকিৎসক দলের অন্যতম  সামন্ত লাল সেন মনে করেন অগ্রগতি এখনো পর্যন্ত ভালোই হচ্ছে।

সেন বলেন, ‘আমরা প্রথম দিকে তো তার আঙুলগুলো আইডেন্টিফাই (চিহ্নিত) করতে পারতাম না। কোনটা বুড়ো আঙুল, কানিয়া আঙুল। অপারেশনের মাধ্যমে আমরা তার আঙুলগুলো আলাদা করতে পেরেছি।’

সেন আশা করেন, বাজনদারের হাতে আরো কয়েকবার অস্ত্রোপচার করলে সে হাত দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবে, নিজের কাপড় পড়তে পারবে এবং বাচ্চাকে কোলে নিতে পারবে।

কিন্তু অস্ত্রোপচার করে শেকড়ের মতো জিনিষগুলো অপসারণ করা হলেও সেটি কি আবারো ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে?

এ বিষয়টি নিয়ে ডাক্তাররা অবশ্য চিন্তিত। তবে এখনো পর্যন্ত অগ্রগতি ভালো বলে উল্লেখ করছেন চিকিৎসকরা।