সিসি ক্যামেরা কি আসলেই নিরাপত্তা দিতে পারে?

cc camera vs security guard

সোস্যাল নেটওয়ার্ক থেকে: নিরাপত্তার জন্য সিসিক্যামেরা প্রয়োজন? নাকি সিসি ক্যামেরার জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজন? সিসি ক্যামেরা কি আসলেই নিরাপত্তা দিতে পারে?

ধরুন, কোথাও সিসি ক্যামেরা থাকা অবস্থায় সেখানে চুরি হলো, ডাকাতি হলো, কোন অপরাধ হলো, মানুষ খুন হলো। পরে হয়তো সিসিক্যামেরার রেকর্ড খুঁজে ফুটেজ পাওয়া গেলো। কিন্তু ঘটনা যা ঘটার তা তো ঘটেই গেলো। একটা মানুষ খুন হয়ে যাবার পর হয়তো ফুটেজ দেখে অপরাধী সনাক্ত করা যাবে কিন্তু মানুষটাতো মারা গেলো। তাহলে এটা কিভাবে নিরাপত্তা দিলো?
কিন্তু সিসি ক্যামেরা মেইনটেন্যান্স-এর জন্য যে ব্যায় করতে হয় সেটা দিয়ে নিরাপত্তা প্রহরী রাখলে কি হতো-
১. সরাসরি অপরাধ ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে পারতো।
২. চোর/ডাকাত ধরতে পারতো
৩. সিকিউরিটি গার্ড দেখলে চোর চুরি করার সাহস পেতো না
৪. আদালতে স্বাক্ষী হিসেবে দাড়াতে পারতো
তাহলে বোঝা গেলো নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা কথাটি ভুল। আসলে নিরাপত্তা প্রহরীর বিকল্প নেই।

কিছুদিনে আগে খবর দেখলাম, চোরদের টার্গেট এখন সিসি ক্যামেরা। এতে তাদের দুই ধরণে লাভ। ১. ক্যামেরাটি চুরি করে নগদ টাকায় বিক্রি, ২. ওইখানে সিসি ক্যামেরা না থাকলে পরবর্তী চুরির সুবিধা।

তাহলে দেখা যাচ্ছে কথিত নিরাপত্তা দানকারী সিসি ক্যামেরার জন্যই নিরাপত্তা দরকার অর্থাৎ ক্যামেরা পাহাড়ার জন্যও নৈশ প্রহরী নিয়োগ দেয়া দরকার।

বলাবাহুল্য, যে ইউরোপ-আমেরিকার অন্ধ অনুকরণে জায়গায় জায়গায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন হচ্ছে খোদ সেই ইউরোপ-আমেরিকায় এই সিসিটিভির সফলতা পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ। আসুন এ সম্পর্কে ইউরোপ’র কিছু খবর দেখি:
ক) ব্রিটিশ পুলিশ বলেছে, সিসিটিভি মাধ্যমে অপরাধ হ্রাস পায় না। ইউরোপের সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি আছে ব্রিটেনে (১০ লক্ষের উপর) কিন্তু অপরাধ দমনে এর তেমন কোন প্রভাব নেই। এর দ্বারা যদি সামান্য কিছু (মাত্র ৩ % সফলতা) আউটপুট আসেও, কিন্তু এর পেছনে যে বিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয় সে তুলনায় তা একেবারেই নগণ্য। পাশাপাশি সিসিটিভি’র দুর্বল চিত্র দিয়ে অপরাধী চেহারাও সনাক্ত করা কঠিন এবং কোর্টে তা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। সিসিটিভি সনাক্তকরণ কঠিন হওয়ায় পুলিশ অনেক সময় সেই পদ্ধতিতেই যায় না। (সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল—৬ মে ২০০৮)

খ) স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড পুলিশ বলছে: সিসিটিভি কার্যক্ষমতা খুবই কম। ১ হাজার সিসিটিভি দিয়ে ১ বছরে মাত্র ১টি অপরাধ দমন করা সম্ভব। (সূত্র: ডেইলি মেইল, ২৫ আগস্ট ২০০৯)

গ) লন্ডনে ১০ হাজার সিসিক্যামেরা, খরচ ২০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু সিসিটিভি’র প্রমাণ দিয়ে ৮০ ভাগ অপরাধের সমাধান করা যায় না। (সূত্র: লন্ডন ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড, ১৯ সেপ্টেম্ব ২০০৭)

ঘ) সিসিটিভি মানুষের গোপনীয়তা নষ্ট করে দেয়। এর মাধ্যমে মানুষের অনেক ব্যক্তিগত মুহুর্ত ধারণ করা সম্ভব, যা দিয়ে পরবর্তীতে জঘন্য অপরাধ ও ব্ল্যাকমেইল সংগঠিত হয়। উল্লেখ্য, লন্ডনের ২০০টি স্কুলের টয়লেট এবং কাপড় পরিবর্তনের রুমে সিসিটিভি সেট করা আছে। (সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২)

(আরো কিছু রিপোর্ট লিংক- http://goo.gl/PrZH8ahttp://goo.gl/3gNYel, http://goo.gl/2Ef9rX, http://goo.gl/2JHjNw)

যে বিষয়গুলো বোঝা গেলো-
-সিসিটিভির হাত নেই যে, সে অপরাধীকে ধরে ফেলবে।
-সিসিটিভি ক্রয় ও মেইনটেইন্সে যে খরচ করে সে অনুসারে আউটপুট খুবই সামান্য।
-সিসিটিভি দিয়ে মানুষের ব্যক্তিগত/গোপন বিষয়গুলো ধারণ হয়ে যায়, যা দিয়ে পরবর্তীতে ব্ল্যাক মেইল হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
-সিসিটিভি ফুটেজ অপরাধী সনান্তকরণে পুলিশের কাছে খুব কম সময়ই দলিল হিসেবে গ্র্রহনযোগ্য হয়।
-সিসিটিভির যদি কোন গুরুত্ব থেকেই থাকে, তবে তা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরে। কিন্তু অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগে সিসিটিভি কোন গুরুত্ব নেই। বিষয়টি অনেকটা ‘রোগি মারা যাওয়ার পর ডাক্তার আসিলো’ টাইপের।

সিসিটিভি বনাম নিরাপত্তরক্ষী:
ধরুন একটি রাস্তায় নিরাপত্তার কথা ভাবছেন আপনি। আপনি সেই রাস্তাটি পুরোটা আয়ত্বে আনতে ১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করলেন। পুরো সিস্টেম সেট আপ এবং মেইনটেইন্সের জন্য আপনার বছরে খরচ হলো প্রায় ৫ লক্ষ টাকা।
আবার আপনি, ঐ একই রাস্তায় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য রাতে ২ জন এবং দিনের বেলায় ২ জন, মোট ৪ জন নিরাপত্তা রক্ষী রাখলেন। প্রত্যেক নিরাপত্তারক্ষীর বাৎসরিক বেতন যদি ১ লক্ষ টাকা হয়, তবে ৪ রক্ষীর পেছনে খরচ ৪ লক্ষ টাকা। এটা বাস্তব, ঐ মানব নিরাপত্তা রক্ষীরা আপনাকে যে সার্ভিস দিতে পারবে তার সিকিভাগও দিতে পারবে না সিসিটিভি। সিসিটিভি ধরতেও পারবেনা, চিৎকারও দিতে পারে না, চোরকে আটতেও পারে না। অপরদিকে একজন মানব রক্ষীর যোগ্যতা অপরিসীম। মানবরক্ষীর উপস্থিতি-ই অপরাধীর অপরাধের জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।