রাজকোষ কেলেঙ্কারি: সিআইডির নজরদারিতে ৮ ব্যক্তি

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: রাজকোষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দেশে ৮ জনকে নজরদারির আওতায় এনেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানের লোকজনও রয়েছেন। সিআইডির উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের গাফিলতির কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা হ্যাকাররা নিয়ে গেছে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তাদের কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা প্রযুক্তি না জানার দোহাই দিয়ে রিজার্ভ চুরির দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সিআইডি কর্মকর্তারা নিছকই প্রযুক্তিগত অজ্ঞতা নাকি ‘ক্রিমিনাল ইনটেনশন’ ছিল তা খতিয়ে দেখছেন। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল্লাহহেল বাকী বলেন, ‘মামলার কিছু অগ্রগতি হয়েছে। জড়িত বিদেশিদের শনাক্ত করা হয়েছে। দেশীয় কেউ জড়িত কি না তা বের করার জোর প্রচেষ্টা চলছে।’ তিনি বলেন, ‘কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। তাদের বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে।’

সিআইডি সূত্র জানায়, সিআইডির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট দল বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক শাখা থেকে কয়েক ট্যারাবাইট তথ্য সংগ্রহ করেন। এসব তথ্য সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার পর এখন চলছে তথ্য বিশ্লেষণের কাজ। ফরেনসিক পরীক্ষার পর সিআইডির তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েক কর্মকর্তার দায়িত্বে চরম অবহেলার প্রমাণ পেয়েছেন। পরে তাদের এসব তথ্য সামনে হাজির করে কয়েক দফা সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু বারবারই ওই কর্মকর্তারা নিজেদের প্রযুক্তিগত দিক থেকে অজ্ঞ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। সিআইডি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা ছাড়াও একাধিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ও অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টে যে ধরনের সাইবার নিরাপত্তা দেয়ার কথা ছিল তারা তা দিতে পারেনি। এই নিরাপত্তা যে পর্যাপ্ত নয় তা তারা জানার পরও তথ্য গোপন করে কোনোমতে চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। সিআইডির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। আদালতে তাদের দায় নির্ধারণ করেই অভিযোগপত্র দেয়া হবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও তদারকিতে গাফিলতি ছিল বলে সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, তারা এসব বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানের সঙ্গেও কথা বলবেন।

সিআইডি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের যেই কর্মকর্তার কম্পিউটার হ্যাকাররা হ্যাক করে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে, তা মোটামুটিভাবে নিশ্চিত হওয়ার পথে রয়েছে। এ কম্পিউটার থেকে মিশরের অপর একটি কম্পিউটারে কিছু বার্তা লেনদেন হয়। সিআইডির কর্মকর্তারা মিশরের ওই কম্পিউটারের আইপি (১০.৩৮.১০১.৬১) শনাক্ত করে এর বিস্তারিত জানার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে চিঠি পাঠিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে এটি প্রক্সি আইপি বলে মিশরীয় কর্তৃপক্ষ জানালেও এর বিস্তারিত খোঁজখবর চলছে। সিআইডি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনাটি হ্যাকিং বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। হ্যাকারদের শনাক্ত করার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কান পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে সিআইডি। ওই সূত্র জানায়, হ্যাকারদের শনাক্ত করতে পারলেই টাকা চুরির পুরো রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হবে। এরপরের অভিযান হবে পুরো টাকাটা কীভাবে ফেরত আনা যায়। সিআইডি সূত্র জানায়, ফিলিপাইনের যেসব ব্যবসায়ী রিজার্ভের ৮১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে তারা প্রত্যেকে চাইলেই ৮১ মিলিয়ন ডলার ফেরত দিতে পারে। তাদের সেই সামর্থ্যও রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে তাদের সেই চাপ দেয়ার প্রক্রিয়াও চলছে।

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি যাওয়ার ৪০ দিন পর গত ১৫ই মার্চ মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে মামলাটি করেন। দায়ের হওয়ার পর পরই মামলাটির তদন্তের ভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির কাছে স্থানান্তর করা হয়।