সাভার চামড়া শিল্পনগরী : প্রথম চালানেই পরিবেশ বিপর্যয়

Image result for সাভার চামড়া শিল্পনগরী
সাভার : কাঁচা চামড়ার প্রথম চালানেই পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তরিত চামড়া শিল্পনগরী। বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত স্থাপনাগুলো এখনো প্রস্তুত না হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উন্মুক্ত স্থানেই ফেলে দেয়া হচ্ছে কাঁচা চামড়ার ছেটে ফেলা অংশ। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার প্রস্তুত না হওয়ায় পরিশোধন হচ্ছে না তরল বর্জ্যেরও। ফলে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে শিল্পনগরীসহ আশপাশের লোকালয়গুলোতে।

জানা গেছে, ঈদুল আযহায় চামড়া সংগ্রহের পর প্রায় ১৯টি কারখানা প্রথমবারের মত কাঁচা চামড়ার চালান নিয়ে গেছে হেমায়েতপুর চামড়া শিল্পনগরীতে। ঈদের পর অন্তত ৩০টি কারখানা নতুন শিল্পনগরীতে উৎপাদন শুরু করবে বলে সরকারের কাছে আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্যানারি ব্যবসায়ীরা। তবে মাত্র ১৯টি ট্যানারি কাঁচা চামড়া নিয়ে গেছে সেখানে। ১৯টির মধ্যে এখনও উৎপাদন কাজ শুরু করেনি অর্ধেকও। শুধু কাঁচা চামড়া নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছে গুদামজাত করে। বর্জ্য শোধনাগার প্ল্যান্টের পাইপ লাইনের সঙ্গে সংযোগ না পাওয়া, কারখানার নিজস্ব মেশিনারিজ প্রস্তুত না হওয়া এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাসের স্বল্পতাই উৎপাদনে না যাওয়ার কারণ বলে জানা গেছে।

সরেজমিন চামড়া শিল্পনগরীর অ্যাপেক্স ট্যানারি লিমিটেডে গিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম দেখা গেছে। তবে বর্জ্য শোধনাগার প্লান্টের পাইপ লাইনের সঙ্গে সংযোগ না পাওয়ায় কারখানার নিজস্ব হাউসেই তরল বর্জ্য সংরক্ষণ করছে কারখানাটি। আর কারখানার নিজস্ব ট্রাকে করে শুকনো বর্জ্য নিয়ে ফেলা হচ্ছে শিল্পনগরীর পশ্চিম মাথায় একটি উন্মুক্ত স্থানে।

এ বিষয়ে কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের পরপরই আমরা এই কারখানায় কয়েক ট্রাক কাঁচা চামড়া নিয়ে এসেছি। সেগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণে এক সপ্তাহ ধরে আমাদের ৩৫টি ড্রাম চালু আছে। কিন্তু এখনও আমরা বর্জ্য শোধনাগার প্ল্যান্টের সঙ্গে সংযোগ পাইনি। যদি দুই একদিনের মধ্যে সংযোগ না পাওয়া যায় তবে এখানে আমাদের উৎপাদন বন্ধ রাখা ছাড়া বিকল্প নেই।’

এ কে লেদার লিমিটেড নামক অপর একটি কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, তারা কাঁচা চামড়া নিয়ে গেলেও উৎপাদন কাজ শুরু করেনি। উৎপাদনে যাওয়ার মত পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিও নেই কারখানাটিতে।

বর্জ্য শোধনাগার প্ল্যান্টের পাইপ লাইনের সঙ্গে সংযোগ পাওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে পুরোপুরি উৎপাদনে গেছে মেসার্স আজমিরি লেদার কমপ্লেক্স। ওই কারখানাটিতে চলমান আছে ১০টি ড্রাম।

আজমিরি লেদার কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমির হোসেন জানান, প্রতিদিন এই কারখানা থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার লিটার তরল বর্জ্য পাইপ লাইনে যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলো এখনও পরিশোধন শুরু করেনি ইটিপি কর্তৃপক্ষ। ফলে এই বর্জ্যগুলো পাইপ লাইনেই থেকে যাচ্ছে। আর শুকনো বর্জ্য, যেমন গরুর চামড়ার লেজ, শিং, চামড়ার পায়ের অংশ- এসবও ফেলার নির্দিষ্ট স্থান দেখিয়ে দেয়নি বিসিক। উৎপাদনে যাওয়া কারখানাগুলো থেকে তরল বর্জ্য এসে নিজেদের কারখানার পাইপ লাইন ভর্তি হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ফেন্সি লেদার কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধায়ক নুরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কারখানার চামড়ার মজুদ কয়েক ট্রাক। শ্রমিকরাও ঈদের পর চলে এসেছেন। কিন্তু আমরা উৎপাদনে যেতে পারছি না। অন্য কারখানার পানি এসে ভর্তি হয়ে গেছে আমাদের ট্যাংকি। পাম্পের সাহায্যে টেনে নিয়ে এই বর্জ্যগুলো পরিশোধন করার কথা ইটিপি প্ল্যান্টের।’

এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল কাইয়ুম মুঠোফোনে দাবি করেন, এক মাস ধরে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের একটি প্ল্যান্ট চালু রয়েছে। ‘কাউকে পাইপ লাইনের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া হয়নি’ এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। বরং আমরা পরিশোধনের জন্য পর্যাপ্ত বর্জ্য পাচ্ছি না। প্রতিদিন আমাদের দরকার ১০ হাজার কিউসেক তরল বর্জ্য। কিন্তু এখন পাচ্ছি ৪ থেকে ৫ হাজার কিউসেক। কিন্তু প্রকল্প এলাকায় গিয়ে ইটিপি প্ল্যান্ট বন্ধ পাওয়া গেছে- এমন কথায় তিনি বলেন, ‘ইটিপি চালু হয়েছে। এরচেয়ে আমি বেশি কিছু বলব না।’ শুকনো বর্জ্যের কি ব্যবস্থাপনা হচ্ছে? এ প্রশ্ন করা হলে ব্যস্ততার কথা বলে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।

চামড়া শিল্প নগরীর পার্শ্ববর্তী ঝাউচর গ্রামের বাসিন্দা শরীফুল ইসলাম নিলয় অভিযোগ করে বলেন, ‘বাতাসের সঙ্গে গ্রামে উৎকট দুর্গন্ধ ভেসে আসছে। নাক পেতে চলা এখনি মুশকিল। যদি বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না হয় তাহলে এই গ্রামে আমাদের বসবাস অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।