সহিংসতা দমনে কঠোর সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে বিএনপির দুই দিনব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচি শেষ হয়েছে। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে সভা—সমাবেশ ও পদযাত্রা পালনে দেয়া প্রতিশ্রম্নতি রাখতে পারেননি দলটির নেতারা। মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত—সংঘর্ষে প্রাণ ঝরার পর পদযাত্রার দ্বিতীয় দিন বুধবার লাঠিসোঁটা হাতে রাজপথে নামেন তারা। শুধু কর্মীরা যে মারমুখী অবস্থানে ছিলেন— বিষয়টি এমন নয়। নেতারাও তাদের বক্তব্যে কাউকে ছাড় না দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পদযাত্রা শুরুর আগে আব্দুল্লাহপুরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতারা হুমকি দিয়ে বলেন, ছেড়ে দেয়ার দিন শেষ, এখন খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ। আর কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না। জীবন দিয়ে হলেও দাবি আদায় করে নেয়া হবে। আর গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শোক র‌্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দাবি আদায়ে সরকারকে হুঁশিয়ারি করেন তারা। তাদের এসব বক্তব্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে, মুখে শান্তিপূর্ণভাবে সভা—সমাবেশ ও পদযাত্রার কথা বললেও তাদের অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা মারমুখী। সংঘাত—সংঘর্ষের মধ্য দিয়েই দাবি আদায় করতে চায় দলটি। তবে রাজপথের এই বিরোধী দলের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্সে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। শান্তি সমাবেশ নিয়ে রাজপথে থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। নির্বাচনের আগে সব ধরনের সংঘাত ঠেকাতে বদ্ধ পরিকর ক্ষমতাসীনরা।

সরকারের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, সংঘাতে সরকারের কেউ জড়িত থাকলে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না। তাদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার করা হবে। ঢাকা—১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির পদযাত্রায় মঙ্গলবার বিকালে লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে কৃষক দল নেতা সজীব নিহতের ঘটনায়ও মামলা হয়েছে। এদিকে দুই দিনের পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা ও গুলিতে একজনকে হত্যা এবং অন্তত তিন হাজার নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এসব ঘটনার জন্য সরকার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেছেন তিনি।

তবে সরকারপক্ষ বলছে, নির্বাচন বানচালের জন্য অন্যান্যবারের মতো ষড়যন্ত্র এবং হত্যার রাজনীতিই বেছে নিয়েছে জিয়ার দলটি। বিএনপির পদযাত্রায় লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানে নিহত হয়েছেন কৃষক দলের এক কর্মী। আরো ছয়টি জেলায় বিএনপির পদযাত্রায় বাধা, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশের সদস্য, সাংবাদিকসহ চার শতাধিক ব্যক্তি। রাজধানীতেও দলটির পদযাত্রায় ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। পদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম ও দিনাজপুরে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এ সময় তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে কার্যালয় ভাঙচুর ও আশপাশের ভবনের গ্লাস লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে। পরে তারা ওই সড়কে চলাচলরত যানবাহনের ওপরও চড়াও হয়। বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ—যুবলীগের নেতাকর্মীরা সন্ধ্যার পর নাসিমন ভবনে বিএনপি কার্যালয়ের বাইরে ভাঙচুর এবং ব্যানার ফেস্টুনে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগামী নির্বাচন ঘিরে দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মনে শঙ্কা—উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই পরিস্থিতির লাগাম টানতে না পারলে সামনে দেশ এক ভয়ানক বিপদের মুখে পড়তে পারে।