সরিষা ও মধু চাষে লাভবান কৃষক

সরিষা ও মধু চাষে লাভবান কৃষক

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা: সিরাজগঞ্জে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের হলুদ রঙের সমারোহ। সরিষা খেতের পাশেই বসানো হয়েছে মৌ চাষের বাক্স। এতে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়ন হচ্ছে। ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, অপর দিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে সরিষা চাষি ও মৌ চাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ হাজার ৬৮০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৪৯ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। আর এ থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭১ হাজার ১১৮ মেট্রিক টন।

উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান জানান, সরিষার ভালো ফলন হবে এমনটাই আশা করছি। তবে সরিষা চাষে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সার্বক্ষণিক আমাদের পরামর্শ দিচ্ছে।

সদর উপজেলার সয়দাবাদ গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, এবার বন্যার কারণে সরিষা চাষে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে আবহাওয়া ভালো থাকায় সরিষার ফলন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাজারে সরিষার দামও ভালো। তিনি জানান, বিঘা প্রতি সাড়ে ৩ মণ কিংবা ৪ মণ সরিষা পাওয়া যাবে। এবার দাম ভালো পেলে আগামীতে আরও বেশি সরিষা চাষ করা হবে।

মৌ চাষিরা জানান, জেলায় এ বছর প্রায় ২০ হাজার মৌ বাক্স বসানো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার মধু সংগ্রহ বেশি হবে। এই মধু শিল্পের উন্নয়নের জন্য আর্থিক ঋণ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়েছেন মৌ চাষিরা। জেলার সরিষা ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা উন্নতমানের মধু পাইকারি ২৫০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আদর্শ মৌ খামারের মালিক শহিদুল ইসলাম জানান, ৩০০ মৌ বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ মণ মধু সংগ্রহ করা যায়। সরিষার ক্ষেতে মৌ বাক্স বসানোর কারণে সরিষার ফলনও বাড়ে। খাঁটি মধু কিনতে অনেকেই মাঠে যান।

মৌ চাষি আশরাফুল ইসলাম জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসেন পাইকারি ব্যাবসায়ীরা। তবে মধু সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্খিত দাম পাওয়া যায় না।

মাঠে মধু কিনতে আসা শহিদুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রতি বছরই আমি মাঠ থেকে ভালো মধু সংগ্রহ করি। এ বছর প্রায় ১০ কেজি মধু সংগ্রহ করবো। এই মধু সারা বছর ব্যবহার করি। মাঠ থেকে কিনলে খাঁটি মধু পাওয়া যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হানিফ বলেন, সরকারের প্রণোদনা থাকায় চাষিরা সরিষা চালে আগ্রহী হয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে। এই মৌ বাক্সের মধু থেকে কৃষকরা বাড়তি আয় করেন। মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে ১০% ফলন বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।