সরকারের পদত্যাগের দাবি বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক:সরকারের পদত্যাগ ও নতুন করে ফের নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতাদের দাবি, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ধার্য থাকলেও ২৯ তারিখ রাতেই ‘ভোট হয়ে’ গেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট ‘ডাকাতি’ হয়েছে। আর এর কোনো বৈধতা নেই।

৩০ জানুয়ারি, বুধবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদী মানববন্ধনে এ দাবি করা হয়।এ সময় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা এই সরকারের পদত্যাগ দাবি করি এবং তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে নতুন করে নির্বাচন দাবি জানাই। আর এটার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আজ যে সংসদ বসতে যাচ্ছে এ সংসদ জনগণের সংসদ নয়, জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এই নির্বাচনে মানুষ তাদের ভোটের অধিকার হারিয়েছেন। এই নির্বাচনে ভোটারদের, প্রার্থীদের কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। এই নির্বাচন করেছে প্রশাসন, পুলিশ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। এই নির্বাচনে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।’

নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুনরায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচনের সাথে সাথে ফলাফল প্রত্যাখান করেছি। তখনই আমরা বলেছিলাম, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় একটি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের রায়ের মধ্যে দিয়ে একটি সরকার গঠন করতে হবে। আজকে আমরা আবার তারই পুনরাবৃত্তি করছি। আমরা বলতে চাই, অবিলম্বে এই নির্বাচন বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেখানে জনগণ যেন সুষ্ঠুভাবে তাদের রায় দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে পূর্বে থেকেই জনগণ যেন অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছে। প্রায় এক বছর আগে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একইভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক মাস পর কর্মসূচিতে নেমেছে বিএনপি। নির্বাচনে ‘ব্যাপক কারচুপি’র অভিযোগ এনে নতুন করে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে প্রথম কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানববন্ধন করেছে দলটি। যদিও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল বুধবার বেলা ১১টার দিকে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শুরু হয়ে যায় মানববন্ধন। সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই আসতে শুরু করেন বিএনপি ও দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে ব্যানার নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। পরে তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা মাইকে বক্তব্য দিতে শুরু করেন।

ব্যারিস্টার মওদুদ আরও বলেন, ‘এই নির্বাচন দেখে আমরা হতবাক হয়েছি যেটা প্রত্যাশা করেছিলাম সেটা পাইনি। এই নির্বাচন আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি শুধু তাই নয় অবিলম্বে নতুন করে আরেকটা নির্বাচন করার দাবি জানাচ্ছি। একটি নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে তাহলে এদেশের মানুষ আবার ভোটের অধিকার ফিরে পাবে এবং একটি কার্যকরী সংসদ বাংলাদেশ দেখতে পাবে। আর সেটা করার জন্য দেশের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং আমাদের যে সকল নেতাকর্মী জেলে আছে, পালিয়ে আছে তাদেরকে মুক্ত করতে হবে তাহলে দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।’

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট নেওয়া হয়। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা পান মাত্র আটটি আসন। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর নতুন করে ভোট গ্রহণের দাবি জানায়। তাদের বিজয়ী প্রার্থী এখনো শপথ নেননি। নির্বাচিত অন্যরা ইতোমধ্যে শপথ নিয়েছেন এবং মন্ত্রিসভাও গঠন করা হয়েছে। আর আজ বেলা ৩টায় বসছে সংসদের প্রথম অধিবেশন।