শপথ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক গণফোরামের দুই এমপি

নিউজ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও মোকাব্বির খান বলছেন, তারা কখনও বলেননি তারা শপথ নেবেন না। শপথ নেওয়ার ব্যাপারে তারা ইতিবাচক। গণফোরাম থেকে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত এই দুই নেতা বলেন, ‘জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, আমরা তাদের ভোটের মর্যাদা রক্ষা করবো।’
সোমবার (২৮ জানুয়ারি) বিকালে টেলিফোনে  সাক্ষাৎকারে তারা শপথ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানান।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন (৩০ ডিসেম্বর) রাতেই ফল প্রত্যাখান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা এই প্রহসনের নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করছি। নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিলের দাবি করছি।’ এরপর ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাধিকবার বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত কোনও সংসদ সদস্য শপথ নেবেন না। আমরা তো নির্বাচনের ফলই প্রত্যাখান করেছি।
শুধু মির্জা ফখরুল নন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু নানা সময়ে বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের কেউ শপথ নেবেন না।

ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর  বলেন, ‘আমি এখন অসুস্থ। বাসায় আছি। শপথ নেওয়ার তারিখ তো এখনও শেষ হয়ে যায়নি। শপথ নেওয়ার এখনও ৯০ দিন বাকি আছে। আর আমরা তো কখনও শপথ নেবো না বলি নাই। কবে শপথ নেবো না নেবো তা সময় বলে দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনও বলেছেন, শপথ নেওয়ার ব্যাপারে আমরা ইতিবাচক। আর এটাই আমাদের কথা। এর বাইরে অন্যরা কে কী বলেছে, তা আমি জানি না। শপথ না নেওয়ার ব্যাপারে ড. কামাল হোসেন কিছু বলেন নাই। আমরাও কিছু বলি নাই। সময় তো আছে, তাড়াহুড়ার কিছু নাই।’

তাহলে আপনারা শপথ নিচ্ছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে সুলতান মনসুর বলেন, ‘শত প্রতিকূলতার মধ্যে জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, তাদের ভোটের সেই মর্যাদা আমাদের দিতে হবে। আমি শপথ নেওয়ার ব্যাপারে পজেটিভ। আমার যে দায়িত্ব, তা আমি পালন করবোই।’
শোনা যাচ্ছে আপনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং আওয়ামী লীগে আবার ফিরে যাচ্ছেন— এমন প্রশ্নে সুলতান মনসুর বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি অসুস্থ; সুস্থ হওয়ার পরে এসব বিষয়ে কথা বলবো।’
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা আছে— ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’
সিলেট-২ আসন থেকে ‘উদীয়মান সূর্য’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মোকাব্বির খান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শপথ নেওয়ার এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা শপথ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। শপথ নেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ড. কামাল হোসেন দেশে ফিরে আসলে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন এর আগে শপথ নেওয়ার ব্যাপারে বলেছেন ইতিবাচক। ফলে আমরা ধারণা করছি শপথ নেওয়া হতে পারে।’
তবে গণফোরামের এই দুইজনের শপথ নেওয়া না-নেওয়ার ব্যাপারে নাম প্রকাশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নাম গোপন রাখার শর্তে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন— এমন গুঞ্জন রয়েছে। তবে এই বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হয়নি। ড. কামাল হোসেন দেশে আসলে বৈঠক করে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে।’
আর এদিন সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গণফোরাম সদস্যদের শপথ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি কিছু জানে না। আমি যতটুকু জানি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিএনপিসহ সবাই একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। যা করা হবে সবার একই সিদ্ধান্তে হবে। আমি মনে করি, শপথ না নেওয়ার বিষয়ে এর আগে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেটা এখনও বলবৎ আছে।’
পরে দুপুরে সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণফোরামের দুই প্রার্থী শপথ নেবেন বলে শুনেছি। বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই। কারণ, জয়ী হয়ে শপথ না নেওয়া ভোটারদের প্রতি অসম্মান করা। বিজয়ীরা সংসদে আসবেন, কথা বলবেন, এতে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। কারণ, গণতন্ত্র এক চাকার সাইকেল নয়।’
প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৮ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে গণফোরামের দুজন।