লবণসহিষ্ণু শিমের নতুন জাত উদ্ভাবন

লবণসহিষ্ণু শিমের নতুন জাত উদ্ভাবন

গাজীপুর সংবাদদাতা: শিমের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) একদল গবেষক। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রফেসর ড. গোলাম রসুল। সম্প্রতি জাতীয় বীজ বোর্ড এটি অনুমোদন করেছে।

নতুন বিইউ শিম-৭ জাতটি লবণসহনশীল ও উচ্চফলনশীল হওয়ায় বাংলাদেশের বিস্তৃত দক্ষিণাঞ্চলে শীত মৌসুমে পতিত থাকা জমির সুষ্ঠু ব্যবহার ও অধিক পরিমাণ সবজি উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

প্রফেসর ড. গোলাম রসুল জানান, নতুন উদ্ভাবিত এ জাতে গাছপ্রতি ২.৪ থেকে ৩.৫ কেজি শিম উৎপাদিত হয়। সেই হিসেবে হেক্টর প্রতি সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ফলনশীলতা ৩৫ টন।

তিনি বলছেন, ১২ ডিএস/এম লবণাক্ততা সহনশীল হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি উপকূলীয় জেলাসহ সারাদেশে আবাদ করা সম্ভব এই জাতের সিম। তিনি আরও বলেন, বিশ্বে টাটকা সবজিতে ০.৫ থেকে ৩২.০ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম অ্যান্থসায়নিন পাওয়া যায়। তবে নতুন এই জাতটিতে উচ্চমাত্রায় অ্যান্থসায়ানিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেছে।

প্রফেসর ড. গোলাম রসুল জানান, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে রোপণ করলে ১৩০ দিনে ভক্ষণযোগ্য ফল সংগ্রহ করা যায় নতুন জাতের এই শিম থেকে। তবে বীজ সংগ্রহের জন্য আরও ২০ দিন সময় বেশি লাগবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে ২০ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৪৪ হাাজর ৫০ টন শিম উৎপাদিত হচ্ছে (বিবিএস, ২০২০)। দেশের প্রায় সব জাতগুলো মৌসুমের একই সময়ে ফলন দেয় এবং বেশিরভাগ চাষি একই সময়ে তাদের শিম বাজারে নিয়ে আসেন। এতে করে শিমের বাজারমূল্য হ্রাস পায়।

বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৩৭% উপকূলীয় এলাকা। ওই এলাকাতে চাষ উপযোগী সবজি তথা শিমের অনুমোদিত উফশি তেমন জাত নেই। এমতাবস্থায় টেকসই খাদ্য উৎপাদন বজায় রাখা এবং খরা, অতিবৃষ্টি ও লবণাক্ততার প্রভাব প্রতিরোধসহ বিস্তৃত উপকূলীয় এলাকায় চাষযোগ্য নতুন জাত উদ্ভাবনই সর্বোত্তম ও বিকল্প উপায় বলে মনে করা হচ্ছে।

দেশের সব জেলাতে শীত মৌসুমে এই জাতের বীজ রোপণ করা যেতে পারে। গোবর-মাটির মিশ্রণে ভরা (অর্ধেক-অর্ধেক) ছোট পলিথিন ব্যাগে চারা গজিয়ে পরবর্তীতে মাঠে গর্তে লাগানোই ভালো। প্রতি গর্তে ১০ কেজি পচা গোবর, ১০ গ্রাম ইউরিয়া (দুইবারে), ৩০ গ্রাম টিএসপি ও ২০ গ্রাম পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা শতকরা ৯০ ভাগ বিবেচনায় নিয়ে প্রতি হেক্টরে ৪.০ থেকে ৫.০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ লাগানোর ১৩০ দিনের মধ্যে সবজি ফসল হিসাবে শিম সংগ্রহ করা যায়। তবে বীজ সংগ্রহের জন্য আরও ২০ দিন সময় বেশি লাগবে। এক কঞ্চি বিশিষ্ট বাউনি বা মাচা চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে এই শিম উৎপাদন করা যায়।