রুশ হামলার ক্ষতি কাটিয়ে ফের বিদ্যুৎ রপ্তানির পথে ইউক্রেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  রুশ হামলার ক্ষতি কাটিয়ে ফের বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে যাচ্ছে ইউক্রেন। টানা কয়েক মাস ধরে বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে রাশিয়ার একের পর এক হামলার পরও সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে দেশটি গত ছয় মাসের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ রপ্তানি করার সক্ষমতা অর্জন করেছে।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোগুলোতে দীর্ঘ এবং ইচ্ছাকৃত আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। শনিবার (৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

গত বছরের অক্টোবর থেকে রাশিয়া টানা কয়েক মাস ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। মূলত, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গত ৮ অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া।

এর মধ্যে অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের বৃহত্তম বন্দরনগরী সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর আরও বেশ কয়েক দফায় ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে রাশিয়া কার্যত ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি চালায়।

রাশিয়ার এই টার্গেটেড হামলায় ইউক্রেনজুড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা এবং নির্ধারিত ব্ল্যাকআউটের সৃষ্টি হয়। এতে করে শীতকালে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। ফলে ইউক্রেন বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু রুশ হামলার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা ইউক্রেন এখন আবারও তার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে।

বিবিসি বলছে, ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রী হারমান হালুশচেঙ্কো বিদ্যুৎ রপ্তানি অনুমোদনের একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। যদিও ওই আদেশে স্থানীয় গ্রাহকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

তিনি বলেন, ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রায় দুই মাস ধরে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে এবং ইউক্রেনীয়রাও এখন আর বিদ্যুৎ ব্যবহারে কোনও বিধিনিষেধের মুখোমুখি হচ্ছে না। গত শুক্রবার হালুশচেঙ্কো বলেন, ‘সবচেয়ে কঠিন শীত কেটে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তী ধাপ হলো- বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করা। আর এটি আমাদের বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত জ্বালানি অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় পুনর্গঠনের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক সংস্থান করতে সহায়তা করবে।’

ইউক্রেনের এই জ্বালানিমন্ত্রী সিস্টেম পুনরুদ্ধার করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাজের প্রশংসা করেন।

এর আগে গত মাসে ইউক্রেনের বাসিন্দারা বিবিসিকে বলেছিলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ এখন আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠছে। সেসময় ইননা শতানকো নামে ডিনিপ্রোর একজন তরুণী মা বলেন, ‘শহরের চেহারা পরিবর্তিত হয়েছে। অবশেষে, রাস্তার লাইটগুলো জ্বলতে শুরু করেছে এবং শহরের রাস্তায় হাঁটা এখন আর ভীতিকর কোনও কাজ নয়।’

তবে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের অপারেটর ইউক্রেনারগো সতর্ক করে দিয়েছে, ইউক্রেন রাশিয়ার আক্রমণ বন্ধ করার ওপর নির্ভর করতে পারে না। সংস্থাটি শনিবার জানায়, যুদ্ধের সময় রাশিয়া এখন পর্যন্ত তার বিদ্যুৎ অবকাঠামোগুলোতে ১২০০ টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।

এই ধরনের হামলাকে একটি ইউরোপীয় দেশের জ্বালানি ব্যবস্থা ধ্বংস করার সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা হিসাবেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

অবশ্য ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বলে পরিচিত জাপোরিঝিয়ার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে কিয়েভ। গত বছর সামরিক অভিযান শুরুর কয়েক মাস পরই রাশিয়া এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দখলে নেয় এবং সেটি এখনও রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।