রাজাকার কাসেমের সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল রাখার আর্জি রাষ্ট্রপক্ষের, রায় ৮ মার্চ

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাজাকার মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে যে রায় দিয়েছে তা বহাল রাখার আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য পেশ করেছেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আজ বুধবার মীর কাসেমের বিরুদ্ধে চ‚ড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপনকালে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে এ আর্জি পেশ করেন। মামলার কার্যক্রম শেষ হলে এটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। জসিম, টুন্টু সেন ও রঞ্জিত দাসকে হত্যা করে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়ার অপরাধে ট্রাইব্যুনাল মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে যে রায় দিয়েছে তা বহাল রাখার পক্ষে আর্জি জানিয়েছি।

তিনি বলেন, দুটি অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির রায় দিয়েছিলো। এটা সঠিক ছিলো। ১৯৭১’ সালে জসিম,টুন্টু সেন ও রঞ্জিত দাসকে হত্যা করে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিলো। ডালিম হোটেলে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেনি আসামিপক্ষ। এ অভিযোগে দন্ড বহাল রাখার আর্জি পেশ করা হয়েছে। মাহবুবে আলম বলেন, মীর কাসেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় এড়াতে পারে না।

রাজাকার কাসেম আলীর আপিলের রায় ৮ মার্চ-

মওদুদীবাদী জামাতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর আপিলের উপর আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে আগামী ৮ মার্চ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে। প্রধান বিচারক সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেয়। বেঞ্চের অন্য বিচারকরা হলেন- বিচারক সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারক হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারক মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারক মোহাম্মদ বজলুর রহমান। এর আগে প্রধান বিচারক আপিলের রায় ঘোষণা জন্য ২ মার্চ দিন ধার্য করেছিল। পরে বেলা সোয়া একটায় এ তারিখ পরিবর্তন করে ৮ মার্চ দিন ধার্য করে দেয়া হয়। তারিখ পরিবর্তনের কারণ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় সূত্র জানায়, ওই দিন (২ মার্চ) সিলেটে প্রধান বিচারকর একটি অনুষ্ঠান থাকায় রায়ের তারিখ পরিবর্তন করে পরবর্তী তারিখ ৮ মার্চ ধার্য করা হয়েছে। ডেপুটি এটর্নি জেনারেল খন্দকার দিলিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, আদালত প্রথমে রায়ের জন্য ২ মার্চ দিন রাখলেও পরে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে তা পরিবর্তন করে ৮ মার্চ ঠিক করে দেয়।

এর আগে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে যে রায় দিয়েছে তা বহাল রাখার আর্জি জানিয়ে বক্তব্য পেশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। খালাসের আর্জি জানিয়ে আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়েছে সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এসএম শাহজাহান। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মীর কাসেমের আপিল মামলাটির শুনানি শুরু হয়। আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচার কক্ষে ৭ কার্যদিবসে এ মামলার শুনানি আজ শেষ হলো। এটি আপিলে সপ্তম মামলা যার চুড়ান্ত শুনানি শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাজাকার মীর কাসেম আলীর পক্ষে এডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর এ আপিল দায়ের করেন। আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির জানান, মীর কাশেম আলীর পক্ষে ১৮১টি গ্রাউন্ডে মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস চেয়ে এ আপিল করা হয়। দেড়শ’ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ৫ ভলিয়মে ১ হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন ডকুমেন্টও পেশ করা হয়।

আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাশেম আলীকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। মামলায় রাজাকার মীর কাসেমের বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ আনা হয়। রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশন আনীত ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলী দোষী প্রমাণিত হয়েছে। তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস (অব্যাহতি) দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র আল-বাদর বাহিনীর চট্রগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায়, তা রায়ে প্রমাণিত হয়।