মেট্রোরেল নির্মাণে সমযের সাথে ব্যয়ও বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বপ্নের মেট্রোরেল নির্মাণে সময় বাড়ার পাশাপাশি ব্যয়ও বাড়ানো হচ্ছে। এর পেছনে বেশকিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রোরেল সম্প্রসারণ এবং স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের উঠানামা; নিরাপত্তা বৃদ্ধি; বয়স্ক, নারী ও প্রতিবন্ধীসহ সব ধরনের যাত্রী পরিষেবার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য নতুন করে ৮ হাজার কোটি টাকা লাগবে।

প্রস্তাবটি অনুমোদতি হলে মেট্রোরেলের মোট নির্মাণ ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা থেকে দাঁড়াবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকায়। পাশাপাশি মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত আরও ১.১৬ কিলোমিটার বেড়ে মেট্রোরেলের আয়তন হবে ২১ কিলোমিটারের বেশি।

যানজট থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রকল্পের উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার অংশের কাজ প্রায় শেষের পথে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে এই অংশে চলবে মেট্রোরেল। কাজ চলছে প্রকল্পের বাকি অংশেও। প্রকল্পটি নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে নগরবাসীর।
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলমান প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রয়েছে। তবে তার আগেই চলতি বছর এর কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশ বৃদ্ধি ও প্রকল্পের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণ এবং গ্রাহক সেবা আরও আধুনিক করতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

সে ক্ষেত্রে প্রকল্পের পুরা কাজ শেষ করতে সময় লাগবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেট্রোরেলকে লাভজনক প্রকল্পে রূপান্তরিত করতে এর ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়া প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার বাড়তি অংশে ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ এবং ই অ্যান্ড এম সিস্টেম সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি ট্রানজিট অরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্টের (টিওডি) জন্য ভূমি বরাদ্দ ও নকশা তৈরি, ট্রেন পরিচালনায় বিদ্যুৎ খরচ এবং এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার জন্য লিফট, এস্কেলেটর, সিঁড়ি, র‌্যাম্প, হাই রেজুলেশন সম্পন্ন ফেস ডিটেকটেড সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ফুটপাত নির্মাণ এবং বয়স্ক, রোগী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থার পাশাপাশি পরামর্শক ব্যয় এবং আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের জন্যও ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়া উত্তরা সেন্টার স্টেশনকে কেন্দ্র করে একটি ট্রান্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড হাব (টিওডি) নির্মাণ, স্টেশন প্লাজাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন খাতে এ টাকা খরচ করা হবে। এসব পরিকল্পনাও ছিল না প্রকল্পটির মূল ডিপিপিতে। মেট্রোরেল নির্মাণের ব্যয় বেশির পেছনে শুল্ক ও ভ্যাট খাতকে অন্যতম কারণ হিসেবেও উল্লেখ করেছে ডিএমটিসিএল।

জানতে চাইলে ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘প্রকল্পে আমরা নতুন কিছু যুক্ত করতে যাচ্ছি। যা পূর্বের ডিপিপিতে ধরা ছিল না। আগে যেসব কম্পোনেন্ট রয়েছে তার ডিপিপিতে একই থাকছে। শুধু নতুন করে যেসব বিষয় যুক্ত করা হচ্ছে তার ব্যয় বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্পের যখন ডিপিপি ধরা হয় তখন অনেক বিষয় এতে যুক্ত করা হয়নি। তখন ধরে নেওয়া হয়েছে ভবিষ্যতে নতুন করে কিছু যুক্ত করার প্রয়োজন হলে তখন তা যুক্ত করা হবে। কারণ আমরা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্পের পরিধি নির্ধারণ করি। পৃথিবীর উন্নত দেশেও বিভিন্ন প্রকল্পে এমন ব্যয় যুক্ত করা হয়।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণসহ পুরো প্রকল্পে যাত্রীদের প্রবেশ, বের হওয়া এবং বিশ্বমানের যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার জন্য আমরা প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি।’

প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান গণপরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবহারবান্ধব মেট্রোরেল চালুর বিষয়টি মাথায় রেখে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পয়েন্টগুলো জনসাধারণের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় করা হবে। এ জন্য নতুন কাজের প্রস্তাব করা হয়েছে।’

এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘যেখানে মেট্রোরেলের স্টেশন থাকবে, সেখানে প্রচুর মানুষের চলাফেরা হবে। কিন্তু ঢাকা শহরে বর্তমানে সড়ক পরিবহন ও সড়কের যে অবস্থা তাতে এই চাপ সামলানো সম্ভব হবে না। নগরীর সব রাস্তা চাহিদা মতো প্রশস্ত না হওয়ায় প্রয়োজনে ভূমি অধিগ্রহণ করে ফুটপাতসহ সড়ক প্রশস্ত করা হবে। যাতে সড়কে যানজট সৃষ্টি না হয় এবং যাত্রীরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন। তাই উন্নত বিশ্বের মতো যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সবগুলোই নতুন প্রস্তাবে সংযোজন করা হয়েছে।’

এম এ এন ছিদ্দিক আরও বলেন, ‘নতুন প্রস্তাবে মেট্রোরেলের স্টেশন প্লাজা এবং ট্রান্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্টকে (টিওডি) প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। এখন মূল প্রকল্পের সঙ্গে এগুলোর সম্পর্ক নেই। মূলত প্রস্তাবিত অতিরিক্ত কাজের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে বেশি ব্যয় হবে। ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় আগে দেড়গুণ ছিল। এখন এটা তিনগুণে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকা বিনিময় হারে পরিবর্তন এসেছে। সেখানে অতিরিক্ত অর্থ যাচ্ছে। সিডি ভ্যাট বা উন্নয়ন প্রকল্পের মূসক ও শুল্ক হার পরিবর্তন হওয়ায় এ খাতেও ব্যয় বেড়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এক পয়সাও বেশি দেওয়া হবে না।’