মুরগির খামার থেকে শিমুলের মাসিক আয় ৬৫ হাজার টাকা

নিউজ ডেস্ক: চাকরির পেছনে ছুটেছেন অনেক। কোনোভাবেই পেলেন না কাঙ্খিত সেই সোনার হরিণ। তবে উদ্যোগ আর প্রচেষ্টায় ঠিকই দেখা পেলেন আত্মকর্মসংস্থানের। মুরগি পালন করেও যে বেকারত্ব দূর করা যায় এবং ভালোভাবে স্বাবলম্বী হয়ে সংসার চালানো যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন ভোলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের শিমুল। দরিদ্র বাবার পরিত্যক্ত খামার পুনরায় শুরু করে পাঁচ বছরেই তিনি আজ তিনটি খামারের মালিক। প্রতি মাসে আয় করেন প্রায় ৬৫ হাজার টাকা।

ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়ন এর ১ নং ওয়ার্ড লামছি পাতা গ্রামের সিকদার বাড়ির শাখাওয়াত হোসেনের ছেলে শিমুল সিকদার। তার বাবার ঠিকাদারি ব্যবসার পাশাপাশি ৫০০ পোলট্রি (ব্রয়লার) মুরগি ধারণক্ষমতার একটি খামার ছিল। প্রাথমিক অভিজ্ঞতা লাভ সেখানেই হয় শিমুলের।

এলাকার বেশ কয়েকটি খামারির মধ্যে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। খামার থেকে অর্জিত আয় দিয়ে ব্যাংকঋণ পরিশোধ করা, সংসারের খরচ মেটাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। খামারের পাশাপাশি একটি মুদির দোকানও দিয়েছেন তিনি। খামারের পরিচর্যা শেষে নিজের দোকানে বসেই পার করেন অবসর সময়।

একদিন তার বাবার অভাব-অনটনের কারণে বন্ধ হয়ে যায় পোলট্রি ফার্ম ও ঠিকাদারি ব্যবসা। পরিবারে দেখা দেয় দারিদ্র্য। স্কুলের বেতনের টাকা ঠিকমতো দিতে পারতেন না শিমুল। পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বেশ কয়েকবার। অভাব-অনটনের মধ্যে লড়াই করে ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেন। তবে অভাবের কারণে আর পারেননি এগোতে। কিন্তু দমে জাননি।

শিমুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এসএসসি পাস করার পর পরিবারে অভাব-অনটনের কারণে এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় পড়ালেখা। বেশ কয়েক বছর বেকার বসে থাকি। সংসারে অভাব-অনটনের চাপ। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য আবেদন করি। কিন্তু যেখানেই যাই, চাকরির বিনিময়ে চাওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। তাই সেসব চাকরিও আর ধরা দেয় না। একপর্যায়ে ধারদেনা করে বাড়ির সামনে ছোট একটি মুদির দোকান দিই। সেখানেও দেখা দেয় মন্দা। পর্যায়ক্রমে ব্যবসায়ের মূলধনটুকুও শেষ হয়ে যায়।

প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা। ঋণ নিয়ে বাবার পরিত্যক্ত ফার্ম মেরামত করি। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে মুরগি পালনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এক হাজার ব্রয়লার মুরগি পালন করা শুরু করি। এই মুরগি থেকেই তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় শিমুলের সফলতার গল্প। তার পর থেকে আর পেছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি তাকে। তিনি এখন ভোলার বেশ পরিচিত গ্রিন পোলট্রি ফার্ম খামারের মালিক। তার খামারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বেশ কয়েকজন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।

এলাকার বেশ কয়েকটি খামারির মধ্যে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। খামার থেকে অর্জিত আয় দিয়ে ব্যাংকঋণ পরিশোধ করা, সংসারের খরচ মেটাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। খামারের পাশাপাশি একটি মুদির দোকানও দিয়েছেন তিনি। খামারের পরিচর্যা শেষে নিজের দোকানে বসেই পার করেন অবসর সময়।

সরেজমিনে শিমুলের খামার ঘুরে দেখা যায়, ওই এক হাজার মুরগি থেকে এখন তার তিনটি মুরগির খামার হয়েছে। ব্রয়লার, সোনালি ও লেয়ার- এই তিন জাতের আলাদা আলাদা শেডে মুরগি পালন করেন তিনি। খামারে এক হাজার ব্রয়লার, ১৫০০ সোনালি ও ২৫০০ লেয়ার মুরগি পালনের ব্যবস্থা রয়েছে। এতে এলাকার মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণ করে এগুলো যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়।

লাভ সম্পর্কে শিমুলের দেওয়া তথ্যমতে, ১ হাজার ব্রয়লার মুরগি থেকে এখন তার মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা। ১৫০০ সোনালি মুরগি থেকে প্রতি দুই মাস পরে আয় ৪০ হাজার টাকা এবং ২৫০০ লেয়ার মুরগির ডিম বিক্রি করে মাসে আয় হয় ২০ হাজার টাকা। এই মুরগির খামার থেকে প্রতি মাসে ৬৫ হাজার টাকা লাভবান হন তিনি। তার খামারে মুরগির সব ধরনের চিকিৎসাও তিনিই করে থাকেন।

ভোলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে শিমুলের মতো এমন অসংখ্য বেকার যুবক পোলট্রি খামার করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। হয়েছেন সচ্ছল, স্বাবলম্বী। তাদের খামারেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

তেমনই এক খামারি রুবেল বলেন, আমার চাচাতো ভাই শিমুলের খামার দেখে এবং তার সফলতা দেখে আমিও উদ্বুদ্ধ হই। তার পরামর্শ নিয়ে প্রথমে ৫০০ সোনালি মুরগি দিয়ে ফার্ম শুরু করি। শিমুলের সঠিক পরামর্শে এখন আমার ফার্মে ২ হাজার সোনালি মুরগি লালিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে খামার করার চিন্তা আছে।

সফল উদ্যোক্তা শিমুলের চাচা মাকসুদ আলম বলেন, শিমুল অনেক চেষ্টার পর মুরগি পালন করে আজ স্বাবলম্বী হয়েছে। মোটামুটি সে এখন ভালো অবস্থানে আছে। আমি চাইব এলাকার অন্য বেকার যুবকরাও খারাপ পথে না হেঁটে, বেকার বসে না থেকে শিমুলের মতো খামার দিয়ে নিজে স্বাবলম্বী হোক।