মানবতাবিরোধী অপরাধ : সিএভির পর পুনঃশুনানি, ময়মনসিংহের পাঁচজনের রায় যেকোনো দিন

মানবতাবিরোধী অপরাধ

নিউজ ডেস্ক: ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ডা. খন্দকার গোলাম ছাব্বির আহমাদসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার জন্য যে কোনো দিন অপেক্ষমাণ (সিএভি) করে আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে থাকা প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার (২৩ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন ও ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার ও গাজী এম এইচ তামিম।

প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন জানান, রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে গত ১৩ নভেম্বর মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য যে কোনো দিন অপেক্ষমাণ (সিএভি) করে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এর পরে একটি অভিযোগে বেশ কিছু শব্দ সংযুক্ত করা হয়েছে আজ।

তিনি বলেন, মূলত আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ও মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে কয়েকটি শব্দ বাদ পড়ে গিয়েছিল, সেটি যুক্ত করা হয়েছে আজ। এর পরে আবারও সিএভি ঘোষণা করেছেন আদালত।

এ বিষয়ে আসামীপক্ষের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিন জানান, গত ১৩ নভেম্বর মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য সিএভি করেছিলেন আদালত। কিন্তু ওই মামলার শুনানির জন্য আজ (২৩ নভেম্বর) দিন ঠিক করেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আমরা আদালতে জানতে পারলাম, মামলার একটি চার্জের বিষয়ে যুক্ত করা হবে মর্মে আদেশ দেওয়া হবে। তবে, আমরা আদালতের কাছে সময় আবেদন করেছিলাম। আমাদের একজন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তিনি রাজশাহী থেকে আসেন- উনি এসে এই চার্জের বিষয়ে শুনানি করবেন। আমাদের আবেদন নাকচ করে রায় ঘোষণার জন্যে সিএভি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ডা. খন্দকার গোলাম ছাব্বির আহমাদসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য যে কোনো দিন অপেক্ষমাণ (সিএভি) করে আদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন ও ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও গাজী এম এইচ তামিম।

প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন জাগো নিউজকে জানান, এ মামলায় আসামি আটজন। এরমধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনজন মারা গেছেন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আব্দুল হান্নান, তার ছেলে মো. রফিক সাজ্জাদ (৬২) ও মিজানুর রহমান মিন্টু (৬৩)।

তিনি বলেন, গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন- মো. হরমুজ আলী (৭৩), মো. আব্দুস সাত্তার (৬১) ও খন্দকার গোলাম রব্বানী (৬৩)। আর দুইজন আসামি পলাতক। তারা হলেন- ডা. খন্দকার গোলাম ছাব্বির আহমাদ (৬৯) ও মো. ফখরুজ্জামান (৬১)।

প্রসিকিউটর বলেন, আসামি আব্দুস সাত্তার ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ আত্মসমর্পণ করেন। ওই আসামির পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদারকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর মামলায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নান ও তার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এরমধ্যে মামলার আইওসহ ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

২০১৬ সালের ১১ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা আসামিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেয়। আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা ও মরদেহ গুম- এই সাত ধরনের অপরাধের ছয়টি অভিযোগ আনা হয়।

২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করলে ওইদিনই হান্নানকে গুলশানে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। একই দিন তার ছেলে রফিক সাজ্জাদকে ওই এলাকার একটি অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে, ওই বছরের (২০১৫ সালের) ১৯ মে ত্রিশালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন এ মামলা করেন। ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক পরে এজাহারটি গ্রহণ করে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন।

একই অভিযোগে ময়মনসিংহ ৭ (ত্রিশাল) আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আনিছুর রহমান (৭০) এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ হান্নানসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অন্য একটি মামলা করা হয়।

২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ ৩ নম্বর আমলি আদালতে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম (৬৮) বাদী হয়ে এ মামলা করেন। পরে ৩ নম্বর আমলি আদালতে বিচারক মিটফুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন শান্তি কমিটির ময়মনসিংহ শহর শাখার আহ্বায়ক ছিলেন এম এ হান্নান। তার নির্দেশে রাজাকার কমান্ডার আনিসুর রহমান মানিক ও সামসুল হক বাচ্চুসহ পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা ত্রিশালের কালির বাজার ও কানিহারী এলাকায় শতাধিক গণহত্যা, কয়েক কোটি টাকার সম্পদ লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ করেন।