মডেল মসজিদ: নিম্নমানের ফিটিংস—স্থান নির্বাচন ভুলসহ নানান অসঙ্গতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোনোটির কাঠের দরজা ত্রুটিপূর্ণ। প্লাস্টিকের দরজাও নিম্নমানের। কোনোটির টাইলস ভাঙা, যথাযথ হয়নি প্লাস্টার। টয়লেটসহ অধিকাংশ ফিটিংস নিম্নমানের। সামনের সিঁড়ি উঁচু হওয়ায় বয়স্কদের উঠতে সমস্যা। এ চিত্র দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত মডেল মসজিদগুলোর। শুধু নির্মাণ ত্রুটি নয়, জায়গা নির্বাচন নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। এমন জায়গায় মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে যার কাছেই রয়েছে একাধিক মসজিদ। ফলে নামাজ পড়ার জন্য মিলছে না প্রত্যাশিত মুসল্লি। মসজিদে শিক্ষার্থীদের কোরআন হেফজ করানো, হজযাত্রীদের ডিজিটাল নিবন্ধন করানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও সেগুলো অনুপস্থিত।

মডেল মসজিদের এ চিত্র উঠে এসেছে খোদ সরকারি প্রতিবেদনে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করতে আইএমইডি ডেভেলপমেন্ট টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট (প্রা.) লিমিটেডকে (ডিটিসিএল) পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি ৫৬০টি মডেল মসজিদ থেকে ১৭৫টি নমুনা মডেল মসজিদ পরিদর্শন করে। এতে উঠে এসেছে মডেল মসজিদ নির্মাণের বেহাল চিত্র।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মডেল মসজিদটি পরিদর্শনে দেখা যায়, কাঠের দরজা ত্রুটিপূর্ণ। চারটি প্লাস্টিকের দরজা নিম্নমানের। ঝড়—বৃষ্টি হলে জানালার গ্লাস খুলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার কুমিল্লার চান্দিনায় যে মডেল মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে সেটি উপজেলা প্রশাসন থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মাধইয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায়। মসজিদটির কাছাকাছি জায়গায় আরও তিনটি মসজিদ রয়েছে। বাজার সংলগ্ন এলাকায় তেমন জনবসতি না থাকায় মডেল মসজিদে নামাজ পড়ার মুসল্লি সংখ্যা কম। মসজিদটি উদ্বোধন করা হলেও সিঁড়ি ও টাইলসের কাজ বাকি। রঙের কাজও পুরোপুরি শেষ হয়নি। নামাজ ছাড়া প্রকল্পের অন্য কাজ এখনো শুরু হয়নি। চাঁদপুর জেলা সদর উপজেলার মডেল মসজিদ পরিদর্শনে দেখা যায়, মসজিদের কলাম ঢালাই যথাযথভাবে হয়নি। ইটের গুণগত মানও খারাপ।

আইএমইডি প্রতিবেদনে দেখা যায়, দিনাজপুরের বিরলে নির্মিত মডেল মসজিদে ব্যবহৃত টাইলস ভাঙা। খাগড়াছড়ির পানছড়ি মডেল মসজিদের কিছু কিছু জায়গায় রং ঠিকঠাক হয়নি। ভবনের কিছু স্থানে প্লাস্টার যথাযথ হয়নি। দরজা—জানালায় অসঙ্গতি। বাথরুমের অনেক জায়গায় কল নেই, টয়লেটে ফ্ল্যাশ নেই, যথাযথ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। দক্ষিণ দিকে শর্ট সার্কিট হয়ে আছে। সুইচগুলো মানসম্মত নয়। মসজিদের মেহরাব ড্রইং অনুযায়ী হয়নি। ছাদে পানি জমে। পার্কিং টাইলস কোটিং করেনি।

ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলায় টাইপ সি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়। মসজিদটির প্লাস্টার নিম্নমানের। বাথরুমের ফিটিংসের অবস্থা নাজুক। দেওয়ালে ফাটল। টাইলস ঠিকমতো বসানো হয়নি।

দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের অধিকাংশ মসজিদ সরেজমিনে পরিদর্শনে এমন চিত্র পেয়েছে আইএমইডি।

আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রকল্পটি পরিদর্শন করে সরেজমিনে প্রতিবেদন তৈরি করেছি। প্রতিবেদনের কপিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা মিটিং করবো। আলাদাভাবে সুপারিশ করে বিষয়গুলো জানতে চাইবো। পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেওয়া হবে তা জানতে চাওয়া হবে।’

‘বই আকারে প্রতিবেদন দিলে তেমন কোনো কাজ হয় না। অনেকে বই নিয়ে রেখে দেয়। মিটিং করে চিঠি দিলে কিছু কাজ হবে। একই ব্যত্যয় যাতে বারবার না হয় সে বিষয়েও আমরা সুপারিশ করবো। মডেল মসজিদ নির্মাণের মান কেন খারাপ হলো এ বিষয়েও আমরা জানতে চাইবো।’

জানা যায়, এ পর্যন্ত মোট ২০০টি মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রকল্পটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হলেও পূর্তকাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে একটি অর্থবছর বাকি। এত অল্প সময়ের মধ্যে প্রকল্পের বাকি কাজ সম্পন্ন করা কষ্টসাধ্য বলে মনে করছে আইএমইডি।