ভোলায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে

ভোলা: উপকূলীয় জেলা ভোলায়ও প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। গত ক’দিন যাবত এখানকার নদ-নদী ও সাগর মোহনায় প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। জেলা সদরসহ বিভিন্ন মাছের ঘাট, আড়ৎ, পাইকারী ও খুচরা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক-ডাক ও দর কষাকষিতে মুখরিত হচ্ছে প্রতিদিন। আর দীর্ঘদিন পর জালে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ ধরা পড়ায় হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখে। জেলে পল্লীগুলোতে বইছে আনন্দের বন্যা।

সদর উপজেলার ভোলার খাল মাছের ঘাট, নাছির মাঝি মাছঘাট, কোরার হাট মাছের মোকাম, তুলাতুলি মাছ ঘাট, বিশ্বরোড মাছের ঘাট, জংশন এলাকার মাছঘাট, ইলিশার মাছ ঘাট, দৌলতখান উপজেলার পাতার খাল, চরফ্যাশনের চেয়ারম্যানের খাল মাছ ঘাটসহ বিভিন্ন ইলিশের মোকামে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মোকামগুলোতে জেলেদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। সারারাত নদীতে মাছ ধরে সকাল বেলা ঘাটগুলোতে চকচকে ইলিশ নিয়ে আসে জেলেরা।

ঘাটে নৌকা অথবা ট্রলার ভিড়ানোর সাথে সাথেই হাকা-ডাক দিতে থাকে ব্যাপারীরা। জেলেরা ঝুড়িতে করে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ নির্দিষ্ট গোলায় রাখে। মুহূর্তের মধ্যেই সেই ইলিশ কিনতে নিলামে ডাক উঠে যায়। স্থানীয় ব্যাপরীদের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যদাতাই সেই মাছ কিনে নিচ্ছেন। মূলত এমনি করেই এখান থেকে ইলিশ যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তসহ জেলার বিভিন্ন বাজারে। আবার অনেক ব্যবসায়ী সরাসরি লঞ্চে বা ট্রাকে করে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চাদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় মাছ বিক্রি করে থাকেন। ব্যবসায়ীরা পাইকারিভাবে এখান থেকে মাছ কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করে থাকেন।

সদর উপজেলার ভোলার খাল মাছ ঘাটের আড়ৎদার আলআমিন জানান, এবার মৌসুমের প্রথম দিকে তেমন একটা ইলিশ মাছ না পাওয়া গেলেও বর্তমানে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবরই সর্বোচ্চ ইলিশের আমদানী ঘটছে ঘাটে। তাই পাইকারী বাজরে দামও অনেকটা কমে গেছে। প্রতিদিন শুধু এই ঘাট থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এজন্য তিনি সরকারের জাটকা সংরক্ষন কার্যক্রমকে স্বাগত জানান।

বিক্রেতারা জানান, পাইকারী বাজারে বড় সাইজ (এক কেজি) ইলিশের হালি ক’দিন আগেও সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। সেই মাছ এখন ৩ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় হালি (৪টি) বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সাড়ে ৩’শ থেকে সাড়ে ৫’শ গ্রামের হালি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১৪’শ টাকায়। ৬’শ থেকে সাড়ে ৮’শ গ্রামের ৪টি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪’শ থেকে ১৯’শ টাকায়। তবে খুচরা বাজারে দাম একটু বেশি বলে জানা বিক্রেতারা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম আজ সোমবার বলেন, এবছর মৌসুমের প্রথম দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে কাংঙ্খিত ইলিশ পাওয়া যায়নি। তাই বর্তমানে বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। মূলত পানির গভীরতার সাথে ইলিশের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আরো ইলিশ পাওয়া যাবে বলে জানান জেলার প্রধান মৎস্য কর্মকর্তা।

এদিকে জেলার বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেখা গেছে অন্যান্য মাছের তুলনায় ইলিশ মাছই বেশি। বিক্রেতারা সারি সারি ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেছে বাজারগুলোতে। নতুন বাজারে সরেজমিনে দেখা যায় প্রচুর ইলিশ মাছের সরবরাহ। ক্রেতারা পছন্দের ইলিশ কিনতে এক দোকান থেকে ছুটছেন অন্য দোকানে। দাম কম হওয়াতে আনন্দ প্রকাশ করেছেন তারা। গাজীপুর সড়কের কবির হোসেন জানান, দাম কমে যাওয়াতে তিনি মাছ কিনতে এসেছেন। বাজার ছাড়াও বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ভ্যান গাড়ী ও মাথায় করে অনেককেই ইলিশ বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া ফুটপাতে সাজিতে করে ইলিশ বিক্রি করছেন ভ্রাম্যমান বিক্রেতারা।

অন্যদিকে নদীতে ব্যাপক ইলিশ ধরা পড়াতে বরফের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইলিশ সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের জন্য বরফের কোন বিকল্প নেই। তাই স্থানীয় বরফকলগুলোতেও ব্যস্ততা বেড়ে গেছে কয়েকগুন। বরফকলগুলোর সামনে ইলিশ বোঝাই যানবাহনের লাইন দেখা গেছে।