ভারত-পাকিস্তান, সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে ব্যবহার করবে যেসব বিমান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে দুই বিবদমান এবং পরমাণু শক্তিধর দেশ কী ধরণের বিমান ব্যবহার করবে তার একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশংকা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে প্রবল হয়ে উঠেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ তালিকা প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার এক সামরিক বিশ্লেষক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

ভারত সম্প্রতি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বল্পকালীন আকাশ যুদ্ধে অন্তত একটি মিগ বিমান হারিয়েছে ভারত। পাকিস্তানের হাতে বন্দি হয়েছেন মিগ-২১-এর বৈমানিক এবং সূর্য কিরণ অ্যাক্রোবেটিক টিম (এসকেএটি)’র সদস্য উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান।

এ অবস্থায়, পাক-ভারত সংঘর্ষ সর্বাত্মক লড়াইয়ের রূপ নিলে উভয় দেশ কী ধরণের বিমান নিয়ে আকাশ যুদ্ধে নামতে পারে তার একটি খতিয়ান দিয়েছেন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল এবং সামরিক বিশ্লেষক মিখাইল খোদারেনোক।

সম্ভাব্য যুদ্ধে ভারতকে প্রধানত নির্ভর করতে হবে সোভিয়েত জামানার মিগ-২৯ বিমানের ওপর। ১৯৭০’র দশকে তৈরি এ বিমানকে প্রধানত এফ-১৫ এবং এফ-১৬’র মতো মার্কিন জঙ্গিবিমান মোকাবেলার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল। প্রথমে আকাশ যুদ্ধে আধিপত্য বিস্তারের জন্য তৈরি করা হলেও পরে মিগ-২৯কে বহুমুখী যুদ্ধবিমান হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এতে বসানো যাবে আকাশ থেকে আকাশে এবং আকাশ থেকে ভূমিতে ছোঁড়ার উপযোগী নানা ক্ষেপণাস্ত্র। এছাড়া, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানার উপযোগী বোমা বসানোর অবকাশও এতে রয়েছে।

ভারতের আকাশ যুদ্ধভাণ্ডারের অন্যতম বিমান এসইউ-৩০এমকেআই। দুই ইঞ্জিনের উন্নতমানের এ যুদ্ধবিমান ১৯৯০-এর দশকে তৈরি করেছে রাশিয়ার সুখোই কোম্পানি। ২০০২ সাল থেকে এ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করতে শুরু করে ভারত। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড বা এইচএএল বর্তমানে ভারতের জন্য তৈরি করছে এ বিমান। একে ভারতের অন্যতম অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান হিসেবে গণ্য করা হয়। রাশিয়ার তৈরি এসইউ-৩৫ বিমানের অনেক বিশেষত্বই এতে রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।ফ্রান্সের তৈরি মিরেজ-২০০০ বিমানের ওপরও ভারতকে নির্ভর করতে হবে। চতুর্থ প্রজন্মের এ মিরেজ বিমানকে মিগ-২৯-এর সমতুল্য বলে ধরে হয়।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের কাছে রয়েছে মিরেজ ৪ এবং মিরেজ ৫ যুদ্ধবিমান। ১৯৬০-এর দশকে তৈরি এ বিমান প্রতিপক্ষ দেশের যুদ্ধবিমানের তুলনায় অনেক পুরনো। এসব বিমানকে ঐতিহ্য অনুযায়ী আকাশ থেকে আকাশে ছোঁড়ার উপযোগী নানা ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত করা হয়।

এছাড়া, পাকিস্তানের রয়েছে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বহর। একে পাকিস্তানের কাছে থাকা পশ্চিমাদের তৈরি অত্যাধুনিক বিমান হিসেবে গণ্য করা হয়। চীনে তৈরিও কিছু বিমান পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কাছে আছে। তবে এগুলো সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

অন্যদিকে, বিমান প্রতিরক্ষার দিক থেকে দেশ দুইটির গর্ব করার মতো প্রায় কিছুই নেই বলেই এ সামরিক বিশ্লেষক মনে করেন। দুই দেশেরই বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংখ্যায় অপ্রতুল। আজকের যুগে যে সব অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয় সে তুলনায় এগুলোকে মান্ধাতার আমলের বললেও কম বলা হবে।

ইসলামাবাদের হাতে রয়েছে সোভিয়েত এস-৭৫ উঁচু আকাশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সোভিয়েত বাহিনী এ ব্যবস্থা ১৯৫৭ সালে প্রথম তৈরি করেছিল। ন্যাটো বাহিনীর কাছে এটি এসএ-২ গাইডলাইন নামে পরিচিত। অবশ্য চীনে তৈরি এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য নেই। এ ছাড়া, পাকিস্তানের কাছে রয়েছে ১৯৭০’র দশকের শেষ দিকে তৈরি ফ্রান্সের ক্রোতেল বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। সব ঋতুতে ব্যবহার উপযোগী এ ক্ষেপণাস্ত্র এখনো ব্যবহার করছে ফ্রান্স।
অন্যদিকে, ভারতের রয়েছে দেশে তৈরি মধ্যমপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ভ্রাম্যমাণ ক্ষেপণাস্ত্র ‘আকাশ’। পাকিস্তানের এস-৭৫’র থেকে এটিকে তুলমানূলক কম মানের বলেই ধারণা করা হয়। অবশ্য ভারতের কাছে সোভিয়েত আমলে তৈরি এস-১২৫ নেভা/পেচোরা বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। একে ফ্রান্সের ক্রোতেল বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে বেশি পাল্লার বলে ধরে নেয়া হয়।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব বিমান বা অস্ত্র কোনোটাই হয়ত ব্যবহার করা হবে না বলে মনে করেন রুশ সামরিক বিশ্লেষক। তিনি বলেন, উভয় পক্ষই মুখে মুখে গরম গরম কথা বললেও কেউই সর্বাত্মক যুদ্ধ ডেকে আনতে চায় না। তারা বরং উত্তেজনা কমানোর দিকে নজর দেবে বলে তিনি আশাবাদী।