খরায় পুড়ছে ভারত পুড়ছে অর্থনীতি

 

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ডেস্ক: খরায় পুড়ছে ভারতের বিশাল অঞ্চল। দেশটির উত্তরাঞ্চলের প্রদেশগুলো তীব্র পানি সংকটে ভুগছে। পানির অভাবে মাঠঘাট চৌচির। ফসল ফলানো যাচ্ছে না। ভয়াবহ দারিদ্র্য জেঁকে বসেছে। জীবন বাঁচাতে জন্মস্থান, পৈত্রিক ভিটেমাটি ছেড়ে লোকজন শহরে ছুটছে।

সাধারণ কৃষকরা শহরে কোনোমতে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে নিচ্ছে। তাদের ঠিকানা হচ্ছে শহরের বস্তিতে। সেখানেও তাদের পদে পদে সংকট। হঠাৎ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা লোকজন খাপ খাইয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেকে কাজ পাচ্ছে, অনেকে পাচ্ছে না। কৃষকদের এখন কঠিন দুর্দিন।

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানীতে অসহায় কৃষকদের ভিড় বাড়ছে। প্রতিদিন বাসভর্তি লোকজন বেঙ্গালুরু আসছে। রোববার ভারতের প্রধামনন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পানি সংকট নিয়ে জাতির উদ্দেশে রেডিও ভাষণ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে বেঙ্গালুরুতে পৌঁছায় ২০০ মিনিবাস। এসব মিনিবাসে রাইচুর এবং যাদগির জেলার খরাকবলিত কয়েকটি গ্রামের ২ হাজার ৫০০ লোক এসেছে।

কর্ণাটকের রাইচুর ও যাদগির জেলার খরায় পোড়া গ্রামগুলো থেকে গত বুধবার ও শনিবার প্রায় ৫ হাজার লোক বেঙ্গালুরুতে এসেছে। খরাকবলিত এলাকার এসব লোক নামমাত্র মজুরির বিনিময়ে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে বেঙ্গালুরুতে কাজ করছে। অনেকে অন্য কোনো কাজ খুঁজে নিচ্ছে।

রোববার অন্যান্য লোকের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে আসা যাদগির জেলার গঞ্জানুর গ্রামের গুদ্দাম্মা মাতলু বলেছে, ‘গ্রামে পানি নেই। তিন বছর আমরা কোনো ফসল পাইনি। যা-ই আয় করি না কেন, ভিটেমাটি ও আবাদভূমি ছেড়ে বেঙ্গালুরু আসা ছাড়া আমাদের কোনো গতি নেই।’

গ্রাম ছেড়ে আসা রাইচুর জেলার দেবাদুর্গা গ্রামের বাসিন্দা ভগবন্ত কোদানিগাহালি ভূস্বামী ছিলো। ছয় একর জমি ছিল তার। এখন সে বেঙ্গালুরুতে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করে। দুঃখ করে সে বলে, ‘সবই গেছে। ছিলামা ভূস্বামী আর এখন আমি নির্মাণশ্রমিক।’

গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা অনেকে তাদের স্কুলপড়–য়া ছেলেমেয়েদের গ্রামে রেখে এসেছে। স্কুল থেকে দেওয়া দুপুরের খাবার খেয়ে তারা বেঁচে আছে। যাদের স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি, তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে শহরে এসেছে।

কর্ণাটক রাজ্যের উত্তর-পূর্বে ছয় জেলা বালারি, রাইচুর, কোপাল, যাদগির, কালাবুরাগি এবং বিদার জেলা ভয়াবহ খরায় বছরের পর বছর ধুকছে। বহু আগে থেকে পিছিয়ে পড়া এ জেলার বাসিন্দারা খরায় নিঃশেষ হতে চলেছে। বর্তমানে এ জেলাগুলো বসবাসের প্রায় অনুপযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে এসব জেলায় খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ট্রেনে করে পানি পৌঁছানো হচ্ছে। কিন্তু কৃষি কাজের পানি নেই। তা ছাড়া স্থানীয়রা যেখানে পানির সন্ধান পাচ্ছে, সেখানে ছুটে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ৬-৭ কিলোমিটার হেঁটে পানি আনছে তারা। গবাদি পশু পালনও অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এ সুযোগে অনেকে পানির ব্যবসা শুরু করেছে।