ভারতীয় জাতের ধান চাষ করে বিপাকে কৃষক

ভারতীয় জাতের ধান চাষ করে বিপাকে কৃষক

দিনাজপুর সংবাদদাতা: দিনাজপুরের হিলিতে চলতি বোরো মৌসুমে ভারতীয় চিকন জাতের ধান আবাদ করে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ধানের গাছের পাতা লাল বর্ণের হয়ে ও গোড়া পচে মরে যাচ্ছে। কোনও প্রকার ওষুধে কাজ হচ্ছে না। এতে করে ধানের ফলন ও উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

এদিকে স্থানীয় কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে এ সংকট উত্তোরণে কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এই জাতের ধানের আবাদ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

হিলির চেংগ্রাম গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, গত আমন মৌসুমে জিরা ধানের দাম বেশ ভালো ছিল। সেই কথা মাথায় নিয়ে বাড়তি লাভের আশায় ও বাড়িতে খাওয়ার জন্য এবারে তিন বিঘা জমিতে চিকনজাতের জিরা ধান লাগিয়েছি। কিন্তু সেই ধান লাগিয়ে তো দুশ্চিন্তা আরও বাড়ছে। ধানের গাছে কী রোগ দেখা দিয়েছে! ধানগাছের পাতাগুলো লাল বর্ণের হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। আবার যে গাছ লাগিয়েছি সেটি যে বাড়বে সেটিও হচ্ছে না। কোনও শিকড় ছাড়ছে না। ঠিক যেমন লাগিয়েছি তেমনই থাকছে। শিকড় না ছাড়লে গাছ বাড়বে কীভাবে। একটি আক্রান্ত হওয়ার পর আরেকটি আক্রান্ত হচ্ছে। এভাবে পুরো মাঠের ধান মরে যাচ্ছে। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।

একই গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবারে দুই বিঘা জমিতে ভারতীয় জাতের জিরা ধান লাগিয়েছি। কিন্তু কয়েকদিন হয়ে গেলো ধান যেমন একটা করে লাগিয়েছি এখনও ঠিক ওই একটা করেই গাছ আছে। একটুও বাড়েনি। গাছের পাতা লাল হয়ে যাচ্ছে। গাছের গোছ যে কোন প্রকার বাড়বে সেটি হচ্ছে না। স্থানীয় দোকানদারদের পরামর্শ মোতাবেক জমিতে ভিটামিন-ওষুধ সব দিচ্ছি। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হচ্ছে না।

কৃষক সাইদুল হোসেন বলেন, স্থানীয় বাজার থেকে জিরা ধানের বীজ কিনে নিয়ে এসে বিছন ফেলে সেই বিছন জমিতে লাগিয়েছিলাম। জমিতে যে একটা করে গাছ লাগিয়েছি তা থেকে কোনও উন্নতি নেই। আর এখন গাছের পাতা লাল হয়ে উঠছে। আর যতদিন যাচ্ছে ততো গাছগুলি মাটির মধ্যে বসে যাচ্ছে। দোকানদারকে বললে যে যা বলছে সেই মোতাবেক জমিতে সার বা ভিটামিন সবকিছু দিচ্ছি। আরও যদি দিতে হয় তাও দেবো। কিন্তু কোনও কিছু দিয়েই কোনও প্রকার কাজ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এখন বাধ্য হয়ে জমির যেসব ধান গাছ লাল হয়ে যাচ্ছে, শ্রমিক লাগিয়ে সেগুলো উঠিয়ে ফেলছি। এখন তো আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি ধানের যদি গাছই না হয়, তাহলে ফলন হবে কোথা থেকে। আর আমরা যে খরচ করেছি সেই খরচই বা উঠবে কীভাবে। লাভ তো দূরের কথা। তবে শুধু এই জিরাধানেই এই সমস্যা হচ্ছে। অন্য ধানে কোনও প্রকার সমস্যা হয়নি। সেগুলো বেশ ভালো আছে।

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, এই জাতটি সরকারিভাবে আমাদের দেশে অনুমোদিত নয়, এ কারণে এই জাতটি ব্যবহার না করতে কৃষকদের বলছি।