বাহে আর কতো বাড়ি-ঘর টানমো’

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা: ‘বাহে আর কতো বাড়ি-ঘর টানমো, নদী তো আর সময় দেয় না। ধরলা নদীর তা-বে চোখের পলকে জমি-জিরাত, ঘরবাড়ি, বাপ-দাদার ভিটা সউগ ভাংগি নিয়্যা যাবার নাইগছে। সাজানো গোছানো হামার এই গ্রামটাকে শ্যাষ করি ফ্যালাইল বাহে। আর কতো এবার ভাঙন থাকি হামার এলাকাটাক বাঁচান’।

এভাবেই করুণ সুরে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ভাঙন কবলিত জয়কুমর এলাকার বাসিন্দাদের।

নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে কুড়িগ্রামে তীব্র আকার ধারণ করেছে করালগ্রাসী ভাঙন। প্রবল ভাঙনের মুখে ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্রসহ শেষ সম্বলটুকুও সরিয়ে নেওয়ার সময় পাচ্ছে না অনেক পরিবার।

জয়কুমর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ধরলা প্রবল স্রোত আর ভাঙন আঘাত হানছে দিনে-রাতে। ঘর-বাড়ি, গাছপালা, বাঁশঝাড় কেটে সরানোর সময়ও দিচ্ছে না ধরলার ভাঙন। ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনেকেই রক্ষা করতে পারছে না শেষ সম্বলটুকুও। অনেকেই আধাপাকা বা পাকা বাড়ি ভেঙে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন, অন্তত অবশিষ্ট অংশটুকু ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচাতে। তিনদিনের ব্যবধানে ২০টি পরিবার ভিটেমাটিসহ সর্বস্ব হারিয়েছে। মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে আরও অন্তত অর্ধশত পরিবারসহ একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষার আগে থেকেই ভাঙন শুরু হলেও ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ভাঙনের তীব্রতা এতটাই বেড়ে গেছে যে, এখন আর বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ডিসিসহ অনেকের কাছে আবেদন করেও কোনো ফল পায়নি বলে জানায় তারা।

ধরলার ভাঙন কবলিত স্থানীয় বাসিন্দা জানান, জয়কুমরের ঘরে ঘরে ধরলা ভাঙনের আতঙ্ক। আর কতো ঘরবাড়ি সড়ামো, আর সড়েয়ায় বা জামো কটাই। বাপ-দাদার ভিটা তো নদীত গেইচে। গৃহস্থ থাকি এলা হামরা পথের ফকির হয়া যাবার নাগছি। রাইতোন চোখে ঘুম নাই, ঘুম পাড়মো না বাড়িঘর সরামো।’

‘বাহে আর কতো বাড়ি-ঘর টানমো, নদী তো আর সময় দেয় না’

ধরলার পাড়ে বসবাসকারী বৃদ্ধা জোসনা বালা ভয়ার্ত চোখে বলেন, ‘ধরলা ভাঙে আর নদীর উপরা কোনো মতে মাথা গুজি থাকি। এমন করি তিন তিনবার সউগ ভাংগি নিয়্যা গেইচে, এবারও নদীর পাড় ভাইংবার নাইগছে। এলা যামো কটাই, মাথা গুজমো কটাই।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, নদ-নদী বিধৌত কুড়িগ্রাম জেলার ১৭টি পয়েন্টে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি পয়েন্টে তীর প্রতিরক্ষার কাজ চলছে। বাকিগুলোর কোথাও কোথাও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। তবে জয়কুমরসহ কয়েকটি এলাকায় অস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো অনুমোদন না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছেনা।