বাদশাহ আকবর প্রবর্তিত ‘দ্বীনে এলাহী’ ও তার পটভূমি

বাদশা আকবর প্রবর্তিত কুফরী “দ্বীনে এলাহী” উৎপত্তির প্রসংঙ্গিক কথা এবং একজন মুজাদ্দিদের আগমনের প্রেক্ষাপটে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার আগমন এবং সুমহান তাজদীদ-

মুঘল সম্রাট বাদশা আকবরের কথা আমরা সকলেই জানি। মুঘলদের মধ্যে সুদীর্ঘ সময় রাজত্ব করেছে এই আকবর। ধর্মীয় আবহে বেড়ে ওঠার পরও কিছু ক্ষমতালোভী, ধর্মব্যবসায়ী, সার্থপর আলেমদের সংসর্গে আকবর চুড়ান্ত ভাবে অধপতেন চরমসীমায় নিমজ্জিত হয়। আলোচ্য বিষয়ে আলোচনা করতে আমাদের সর্বপ্রথম আকবরের প্রাথমিক জীবনের অবস্থা এবং পরবর্তীতে তার অধপতনে নামার ইতিহাসের পর্যালোচনা করতে হবে।

আকবরের পিতা মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর সময় আকবরের বয়স ছিলো মাত্র তের বছর। হুমায়ুনের মৃত্যুর পর তার বিশ্বস্ত সহযোগী বৈরাম খান ১৫৫৬ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি তের বছরের আকবরকে মুঘল সম্রাট বলে ঘোষণা করে। নামে সম্রাট থাকলেও দেশ পরিচালনা ও অন্যান্য কাজ বৈরাম খানই করতো। ১৫৬০ সালে আকবরের বয়স আঠারো হলে, সে বৈরাম খানকে হজ্জ করতে পাঠিয়ে দিয়ে ক্ষমতা নিজ হাতে তুলে নেয়।

প্রথমিক জীবনে আকবরের ধর্মীয় বিশ্বাস :

(১) উলামা ও শাইখদের মহত সংস্পর্শে উদ্ভুদ্ধ হয়ে আকবর দৈনিক পাঁচবার যথারীতি সালাত আদায় করতো এবং শরীয়তের অন্যান্য হুকুম আহকাম মেনে চলতো। আকবর নিজেই আজান দিতো এবং মাঝে মাঝে নামাজের ইমামতি করতো। এছাড়াও ছাওয়াবের আশায় কখনো কখনো সে মসজিদ ঝাড়ু দিতো। (ماثر الامراء جلد ٣،ص ٢٥٢)

(২) প্রথম জীবনে আকবর রীতিমত পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতে নামাজ পড়তো এবং এজন্য সে সপ্তাহের সাত দিন সাতজন ইমাম নিয়োগ করতো।” ( মুন্তাখাবুত তাওয়ারিখ দ্বিতীয় খন্ড ১৮১ পৃষ্ঠা)

(৩) প্রতি বছর হজ্জের মৌসুমে আকবর একজনকে আমীরে হজ্জ নিযুক্ত করতো এবং বলতো যে কেউই তার সাথে গমন করবে সমুদয় খরচ আকবরই বহন করবে। এছাড়াও প্রতিবছর সে ক্বাবা শরীফ এবং এর প্রতিবেশীদের জন্য মূল্যবান উপহার প্রেরন করতো। হাজীদের বিদায় মুহূর্তে সে এহরামের কাপড় পরে মাথা মুন্ডন করে তাকবীর পাঠ করতে করতে হাজীদের সাথে খালি মাথায় নগ্নপদে বহুদূর পর্যন্ত গমন করতো। (ঐ)

(৪) প্রথম জীবনে আকবর হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি যে গভীর শ্রদ্ধাবোধ জ্ঞাপন করতো তা একটা ঘটনা শুনলে জানা যায়, শাহ আবু তুরাব নামক একজন হজ্জ সম্পন্ন করে ফিরলে সে একটি পাথর খন্ড নিয়ে আসে। সেই পাথর খন্ডে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কদম মুবারকের চিহৃ ছিলো। এই সংবাদ শুনে আকবর তার সংবর্ধনা প্রদান করতে দীর্ঘ আট মাইল পথ অতিক্রম করে এবং আমীর উমারা ও আলেমদের সাথে করে নিয়ে যায়।” ( মুন্তাখাবুত তাওয়ারিখ ২য় খন্ড ২৩৯ পৃষ্ঠা)

(৫) ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য আকবর খুবই আগ্রহী ছিলো। প্রতি রাতে শয়নের প্রককালে ধর্মীয় গ্রন্থাদীর কিছু অংশ শ্রবন করতো।” ( ঐ)

আকবরকে একবার পবিত্র আয়তাল কুরসীর তাফসীর উপহার দিলে সে খুবই সম্মানের সাথে তা গ্রহন করে এবং সসম্মানে রাজ গ্রন্থাগারে রেখে দেয়।

এই হলো আকবরের প্রথমিক জীবনে ধর্মভীরুতার কিছু নমুনা। প্রথমিক জীবনে যথেষ্ট ধার্মীক থাকলেও পরবর্তীতে সে বিভিন্ন মহলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সে ইসলাম বিদ্বেষী এমন সব কাজ এবং আইন করে যে গুলা ভাবলেও একজন মুসলমানের শরীর শিউরিয়ে ওঠে। তাকে পথভ্রষ্ট হতে সাহায্য করে সে যামানার কিছু দরবারী আলেম, এবং বাতিল বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা।

তার শাষনামলে তারই দরবারী আলেম আবদ উন নবী মুসলমানদের জন্য ফরজ ইবাদত জাকাত না দেয়ার একটি বুদ্ধি আবিষ্কার করে। নাউযুবিল্লাহ । যেহেতু জাকাতের জন্য মালের একবছর পূর্ন হওয়া শর্ত তাই সে এক বছর হওয়ার পুর্বেই সকল সম্পদ স্ত্রীর নিকট অর্পন করতো এবং বছর শেষ হলে আবার গ্রহণ করতো। এর মাধ্যমে সে জাকাত না দেয়ার রাস্তা আবিস্কার করে।
আকবরকে তুষ্ট করার জন্য সে সময়কার বড় ধর্মব্যবসায়ী তাজউদ্দীন আকবরের ইবাদতখানায় প্রবেশ করে এবং “যমীন বুস” নামে আকবরকে সেজদা প্রথার প্রচলন করে।
হাজী ইব্রাহিম নামক একজন আকবরের সামনে দাড়ি মুন্ডন সংক্রান্ত এক মিথ্যে বর্ননা উপস্থাপন করে এবং এতে প্রভাবিত হয়ে আকবর দাড়ি মুন্ডন করতে শুরু করে এবং এটা বৈধ বলে ঘোষণা করে। ( মুন্তাখাবুত তাওয়ারিখ দ্বিতীয় খন্ড ২৮৭ পৃষ্ঠা)

তার ইবাদতখানায় আলোচনা চলাকালে কোন আলেম কোন বিষয়কে হালাল ফতোয়া দিলে অপরজন সেটা হারাম ফতোয়া দিতো। এসব দেখে আকবর ধর্মের উপর ভক্তি হারাতে লাগলো।
ঐ সময়কার অত্যন্ত ধুরন্দর আবুল ফজল আকবরের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে, সে আকবরকে ইমামদের অনুসরন না করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে এবং তার ইবাদতখানার দরজা সকল জাতি ধর্মের জন্য উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।”
আবুল ফজল এ সময় ফতোয়া জারি করে, ডাক্তারের পরামর্শে স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য মদ পান করা জায়িয। তার পরামর্শ অনুযায়ী সকলের মদ প্রাপ্তির সুবিধার্থে বাদশা আকবর তার প্রাসাদের নিকটে মদের দোকান প্রতিষ্ঠা করে। নববর্ষের ভোজের সময় আকবর তার উলমা, কাজী, মুফতীদের মদ পানের জন্য উৎসাহিত করতো। ঐ সময় মাত্রাতিরিক্ত মদ পানের ফলে ইসমাঈল নামক জৈনক ভন্ড আলেম মৃত্যুবরণ করে।
আকবরের কাজী অাবদ উস সামি দরবারের প্রধান বিচারপতি ছিলো। সে একটা মদ, জুয়া ব্যাভিচার ইত্যাদি বৈধ মনে করতো।”
( মুন্তাখাবুত তাওয়ারিখ দ্বিতীয় খন্ড)

মোল্লা শীরি নামক জনৈক দরবারী আলেম আকবরকে সূর্য পুজায় উৎসাহিত করে সূর্যের প্রশস্তি সূচক এক হাজার লাইনের একটি কবিতা লিখে উপহার দেয়।

আকবর উলামায়ে সূ তথা অসৎ দরবারী আলেমদের এমন ব্যপক প্রভাবে প্রভাবিত হওয়ার কারনে হক্কানী আলেমগন ইবাদতখানা পরিত্যাগ করেন। এবং অনেকে পবিত্র মক্কা শরীফে হিজরত করেন।

আর এদিকে বাদশা আকবরও এসময় সৎ আলেমদের সংসর্গ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়, এবং তাদের দিল্লী থেকে বহিস্কার করে শুধু তাই নয়, আইন করে সকল হক্কানী আলেমদের বাক স্বাধীনতা হরন করে নেয়।”
( মুন্তাখাবুত তাওয়ারিখ দ্বিতীয় খন্ড ২১২ পৃষ্ঠা)

আকবরের উপর ভন্ড ফকিরদের প্রভাব বিস্তার:

আমানউল্লাহ নামক এমন এক ভন্ড বললো, যুগের সুলতানই পরিপূর্ণ মানুষ, তাই যুগের সুলতানের সম্মুখে সিজদা করা বৈধ। এজন্য সে যখনই আকবরকে দেখতো তখনই সিজদা দিতো। (ঐ)

তারা বলতো সকল সৃষ্টিতে আল্লাহ বিরাজমান সূতরাং তারকার পূজা করাও আল্লাহর ইবাদত।” নাউযুবিল্লাহ । (the influence of Islam on Indian culture. p.57)

আকবরের উপর হিন্দুদের প্রভাব :

আকবরের উপর সবচাইতে ভয়ানক প্রভাব বিস্তার করে হিন্দুরা। যৌবনে রানী যোধবাই ও অন্যান্য হিন্দু রাজপুত মহিলাদের পনি গ্রহণ করে যার ফলে হিন্দুদের সাথে অবাধ মেলামেশা করে হিন্দু ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরে। এবং হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ ফারসীতে অনুবাদ করার নির্দেশ দেয়।” এরফলে মুসলমানদের মধ্যেও হিন্দু মনোভাবাপন্ন একটি দল সৃষ্টি হয়।
এসময় পুরুষোত্তম ব্রক্ষনের প্রভাবে আকবর জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী হয়। এবং পূনর্জনম ছাড়া শান্তি সম্ভব নয় বলে মনে করে। আর আকবর তার দ্বীনে এলাহীর জন্য পুনর্জনম বিশ্বাসী হওয়া জরুরী মনে করতো।’” ( মুন্তাখাবুত তাওয়ারিখ দ্বিতীয় খন্ড )

আকবর এ সময় গরু কে শক্তির উৎস মনে করতো। সে গরু কুরবানী নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং গরুর গোশত খাওয়ার উপরও বিধি নিষেধ আরোপ করে। কেননা হিন্দুরা গরু পুজা করতো এবং গোমুত্র পবিত্র মনে করতো।” (মুন্তাখাবুত তাওয়ারিখ দ্বিতীয় খন্ড ৩২৬ পৃষ্ঠা)

হেরেমের রাজপুত ও হিন্দু রমনীদের প্রভাবে আকবর গোশত ভক্ষন পরিহার করে এবং সুদীর্ঘ সাত মাস তার রান্ধনশালায় কোন গোশত রান্না হয় নাই।”
রাজা দেবচাঁদ আকবরকে বলতো, আল্লাহ দরবারে গরু খুবই সম্মানিত। অন্যথায় গরুর কথা কুরআন শরীফে প্রথম দিকে কিছুতেই উল্লেখ থাকতো না”
এদিকে রাজা ভবনদাসের মেয়ের সাথে আকবর তার ছেলে সেলিমের বিয়ে সম্পূর্ণ হিন্দু রীতিতে সম্পন্ন করে।
হিন্দু সমাজে সুদ দেয়া নেয়া কোন ব্যাপার নয়, তাদের প্রভাবে আকবর সুদ, পাশা, জুয়া ইত্যাদি বৈধ ঘোষণা করে। রাজ দরবারে জুয়ার জন্য আলাদা গৃহ নির্মান করা হয় এবং জুয়াড়ীদের সরকারী কোষাগার থেকে সুদে টাকা ধার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
হিন্দু সমাজের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আকবর, মুসলিম দের চাচাতো, মামাতো, ফুপাতো, খালাতো বোন বিবাহ নিষেধ করে আইন করে।”
হিন্দুরা যেহেতু পর্দা করে না তাই সে নির্দেশ দেয় ভবিষ্যতে কোন মুসলমান মহিলা পর্দা করে বাইরে যেতে পারবে না। সে আরবি ভাষার তথা কুরআন হাদীস শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এসময় অধিকাংশ হক্কানী আলেম দেশ ত্যাগ করেন এবং আলেমের সংখ্যা কমে যাওয়ায় মসজিদ মাদ্রাসা ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। এসময় হিন্দুরাও মুসলমানদের মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির বানাতে শুধু করে। ( মকতুবাত শরীফ ১ম খন্ড ৯২ নং মকতুব)
এসময় রমজানে রুটি তৈরী ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়। “”

আকবরের প্রতি জৈন দের প্রভাব :

ষোড়শ শতাব্দীতে আগ্রায় জৈনদের একটি বড় কেন্দ্র ছিলো। আকবর সর্বপ্রথম সেখানে তাদের সহচর্যে আসে। হিরনা বিজয়া শুরী ও জয়চন্দ্র শূরী নামক দুইজন জৈনের সহচর্যের প্রভাবে আকবরের নতুন ধর্মচিন্তা বিশেষভাবে প্রভান্বিত হয়। প্রকৃতপক্ষে আকবরের গোশত খাওয়া পরিত্যাগ করা এবং কোন প্রানী হত্যা করার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ মূলত জৈনদের প্রভাবেই হয়েছিলো। ( a short history of Muslim rule in India. p.292)

পারসিকদের প্রভাব :

পারসিক ধর্মগুরুরাও আকবরের ইবাদত খানায় আগমন করতো। তাদের মাধ্যমে আকবর আগুন পুজা, শিখা অনির্বাণ প্রজ্বলিত করার নির্দেশ দেয়। এবং সূর্য পুজা শুরু করে” ( মুন্তাখাবুত তাওয়ারিখ)

বাদায়ুনী বলে, আকবর প্রদীপ জ্বালানোর সময় দন্ডায়মান হয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞপন করে সভাসদদের জন্য বাধ্যতামূলক করে। “”
আকবরের দরবারে পারসিককা খুবই সম্মানিত ছিলো।”

আকবরের উপর খ্রিষ্টানদের প্রভাব :

ধর্মীয় ব্যাপারে আকবরের অনুসন্ধানী মন তাকে খ্রিষ্টানদের সহচর্যে আনে। ফতেহপুর সিক্রিতে ইবাদতখানায় ধর্মালোচনা করার জন্য তাদের আকবর আমন্ত্রণ জানায়। আকবর এসময় তাদের খ্রিষ্টধর্ম মতের উপর যথেষ্ট ভক্তি শ্রদ্ধা করে। বাদশা আকৃষ্ট করতে খ্রিষ্টানরাও বাদশার দরবারে অনেক মিশনারী প্রেরন করে। আকবর তাদের গীর্জা নির্মানের অনুমতি এবং সরকারী সাহায্য প্রদান করে।
খ্রিষ্টানদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আকবর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীমের পরিবর্তে “যীশুর নামে শুরু করছি” ব্যবহার করে। নাউযুবিল্লাহ !!
শুধু তাই নয়, কালেমা শরীফ থেকে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম বাদ দিয়ে নিজের নাম ” আকবর খলীফাতুল্লাহ” যোগ করে।”

নাস্তিকদের দ্বারা প্রভাবিত :

মুক্ত বুদ্ধীজীবী সম্প্রদায় আকবরের মানসিক অবস্থা পরিবর্তন করার বিরাট ভুমিকা পালন করে। আবুল ফজল ছিলো একজন নাস্তিক। এর প্রভাবে আকবর সৃষ্টি জগত সব প্রকৃতির দান মনে করে। আল্লাহ , রসূল , শরীয়ত এসব আলেমদের আবিস্কার বলে ধারনা করা শুরু করে। এভাবে নামাজ, রোজা, হজ্জ নিয়েও তারা বিভিন্ন কটুক্তি করতো এবং উপহাস করতো।

দ্বীনে এলাহী প্রবর্তন :

এসকল বিষয়ের প্রভাবে আকবর এক নতুন ধর্ম প্রবর্তনের দিকে আগ্রহী হয়। ১৫৮২-১৬০৫ সালের মধ্যে আকবর ইসলাম ধর্মকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করে দ্বীনে এলাহী নামক ধর্ম প্রচার শুরু করে। (Akbar the great mughal p.348)

এসময় আকবর কালেমা, নামাজ, রোজা,হজ্জ, জাকাত সব অস্বীকার করে। হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিদ্বেষ করে সে, মুহম্মদ, আহমদ, মোস্তফা, মাহমূদ, ইত্যাদি নামক লোকদের অপছন্দ করতো।
ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ সালাত । আকবর সালাত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেখানে কেউ প্রকাশ্য নামাজ পড়ার সাহস পেতো না। হিন্দুরা এসুযোগে মসজিদ খানকাকে আস্তাবলে রুপান্তর করে।
আকবর তার সভাসদদের নির্দেশ দিতো, তারা যেন রোজার মাসে দরবারে প্রকাশ্যে পানাহার করে। যদি তাদের কারো খাওয়ার ইচ্ছা না থাকে তবে আদেশ ছিলো কমপক্ষে মুখে পান চিবিয়ে যেন দরবারে আসে। এরূপ করা না হলে রোজা রাখার অপরাধে গ্রেফতার করা হতো”।

(মুন্তাখাবুত তাওয়ারিখ দ্বিতীয় খন্ড ৩১৫ পৃষ্ঠা)

সে জাকাত এবং হজ্জের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এসময় হজ্জে গমনের অনুমতি চাওয়া আর মৃত্যু প্রার্থনা করা সমান ছিলো।

আকবর দ্বীনে এলাহী প্রনয়নের মাধ্যমে হালাল হারাম উঠিয়ে দেয়।

– মদ খাওয়া বৈধ করে।
– ব্যভিচার বৈধ করে।
– সে শহরের বাইরে শয়তানপুর নামক পতিতালয় স্থাপন করে।
– সুদ হালাল করে।
– জুয়া হালাল করে।
– রেশমী পোশাক পুরুষদের জন্য হালাল করে।
– দাড়ি কামানো হালাল করে।
– মহিলাদের মুখ খুলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার ফরমান জারি করে ।
– ক্বিবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমানো জারি করে।

এক কথায় সকল ইসলামী শরীয়তের বিরুদ্ধে নিজের মনগড়া নীতি চালু করে। এবং অস্বীকার কারীদের হত্যা করে।

এই হলো আকবরের সময়কার ইতিহাস। কতটা কঠিন অবস্থা ছিলো একটু চিন্তা করুন। সেই ভয়াবহ ঘুনে ধরা পরিবেশকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করতে আগমন করেন এক বিখ্যাত ওলী। যার আগমন সম্পর্কে সরাসরি হাদীস শরীফ বর্নিত আছে।
আরবী মাসের ১৪ই শাওয়াল তারিখ, ইতিহাসের একটি বিশেষ দিন। ৯৭১ হিজরী সালের (ইংরেজি ১৫৬৩ সাল) এদিনে পৃথিবীতে আগমন করেছেন এক মহান ব্যক্তিত্ব, যার উছিলায় মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র দ্বীন ইসলামকে হিফাজত করেছেন। উনার নাম হযরত শায়েখ আহমদ ফারুক্বী সিরহিন্দী মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

এ মহান ব্যক্তি সম্পর্কে যে কথাগুলো সবার জানা একান্ত জরুরী :

১) মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি এমন বিশেষ শ্রেনীর ওলী আল্লাহ, যার সম্পর্কে হাদীস শরীফে পর্যন্ত বর্ণনা পাওয়া যায়। হাদীস শরীফগুলো নিম্নরূপ:

يُبْعَثُ رَجُلٌ عَلـٰى اَحَدَ عَشَرَ مِائَةِ سَنَةٍ وَهُوَ نُوْرٌ عَظِيْمٌ اِسْـمُه اِسْـمِىْ بَيْنَ السُّلْطَانَيْنِ الْـجَابِرَيْنِ يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ بِشَفَاعَتِهٖ رِجَالٌ اُلُوْفًا.

“একাদশ হিজরীতে একজন মহান ব্যক্তিত্ব’র আবির্ভাব ঘটবে, তিনি হচ্ছেন ‘মহান নূর’। উনার নাম মুবারক হবে আমার নাম মুবারক-এ। তিনি দুই যালিম বাদশাহার মাঝে তাশরীফ নিবেন। উনার শাফায়াতে হাজার হাজার লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (জামউল জাওয়াম, জামিউদ দুরার)

يَكُوْنُ فِـىْ اُمَّتِـىْ رَجُلٌ يُقَالُ لَه صِلَةُ يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ بِشَفَاعَتِهٖ كَذَا وَكَذَا مِنَ النَّاسِ.

“আমার উম্মতের মাঝে একজন মহান ব্যক্তিত্ব’র আবির্ভাব ঘটবে। উনাকে ‘ছিলাহ’ বলা হবে। উনার মুবারক শাফায়াতে (সুপারিশে) অসংখ্য মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (জামউল জাওয়াম, জামিউদ দুরার, জামিউল আহাদীছ, যুহুদ, ইবনে সা’দ, বাইহাক্বী)

অর্থাৎ মুযাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি’র নাম ছিলো ‘আহমদ’ এবং উনার আগমণ ঘটেছে বাদশাহ আকবরবাদশাহ জাহাঙ্গীরের মধ্যবর্তী সময়ে।

২) হাদীস শরীফে আছে, নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মহান আল্লাহ প্রতি হিজরী শতকের শুরুতে এমন একজন ব্যক্তিত্ব পাঠান, যিনি উম্মতের স্বার্থে পবিত্র দ্বীন ইসলামের সংস্কার সাধন করেন।” (আবু দাউদ শরীফ)

অর্থাৎ প্রতি হিজরী শতকের শুরুতে একজন করে মুজাদ্দিদ শ্রেণীর ওলী আল্লাহ’র আগমণ ঘটবে, যাদের উছিলায় আল্লাহ তায়ালা পবিত্র দ্বীন ইসলামকে হিফাজত করবেন। আর মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি ছিলেন ঐ শ্রেণীর ওলী আল্লাহগণের মধ্যে অন্যতম।
উল্লেখ্য, মুযাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি’র সময় সবচেয়ে বড় ফিৎনা ছিলো বাদশাহ আকবরের তৈরীকৃত দ্বীন-ই ইলাহী নামক সর্বধর্মের মিশ্রন। এই দ্বীনে এলাহী নিশ্চিহৃ করে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আবার ইসলাম কায়েম করেন। আবার সুন্নত সমূহ জারি করেন। সুবহানাল্লাহ্ !!

এখানে অনেক গুলো বিশয় ভাবার আছে, দেখুন একজন ভালো মানুষও কিভাবে ধ্বংসের চুড়ান্ত পর্যায়ে যায়। ইসলামের সব চাইতে বড় ক্ষতি যারা করেছে তারা হচ্ছে ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ছু। যদি ধর্মব্যবসায়ীরা আকবরকে নষ্ট না করতো তবে কি অন্য কেউ তার উপর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারতো ?

যুগে যুগে এমন উলামায়ে ছু সব জামানায় ছিলো এখনো আছে। আমরা এখন তারই ধারাবাহিকতায় দেওবন্দী, কওমী, তাবলিগী, জামাত-শিবির, সালাফী, লা মাযহাবী ইত্যাদি ভন্ড ধর্মব্যবসায়ী দেখে থাকি। তারাও প্রতিনিয়ত অসংখ্য হারামকে হালাল, হালালকে হারাম করে যাচ্ছে । আর এসকল ধর্মব্যবসায়ী এবং গোমরাহ শাষকদের ষড়যন্ত্র ছিন্ন করতে শত বছর পর পর মুজাদ্দিদ আগমন করছেন। এখনো আগমন করছেন। এবং উনার তাজদীদি প্রভাবে সকল বাতিলের জাল ছিন্নভিন্ন করে ফেলছেন। আল্লাহ পাক আমাদের যামানার মুজাদ্দিদ চিনার তৌফিক দান করুন ।আমীন