বাজেট প্রতিক্রিয়া টিআইবি, সিপিডির

ঢাকা: জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেটে বিশেষ কৌশলে কালো টাকা সাদা করার বিধান রাখা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বহুবার ঘোষিত দুর্নীতি-বিরোধী অবস্থানের পরিপন্থী। এই মন্তব্য করে গভীর হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে সরকারকে বিধানটি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পরে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এ বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাজেটে পরোক্ষভাবে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ রাখা হয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বহুবার ঘোষিত দুর্নীতি-বিরোধী অবস্থানের পরিপন্থী। এই প্রেক্ষিতে জনগণের আস্থা অর্জনে সরকারের উচিত বাজেটে কালো টাকা বৈধতা দেয়ার সুযোগ বাতিল করা।

তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার অনৈতিক বিধানের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে সংসদ ও সংসদের বাইরে অর্থমন্ত্রীকে বিভিন্নভাবে অবস্থান গ্রহণ করতে দেখা গেছে। অথচ অনৈতিকতা-বান্ধব এ সুযোগটি আবারো অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এটি সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক এবং সরকারের ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন মনোভাব’ বা বিদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী। পরস্পরবিরোধী এই অবস্থানের ফলে দেশে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের বিব্রতকর দৃষ্টান্ত স্থাপিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারের নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী, কালো টাকা বৈধ করার এই অব্যাহত সুযোগ রাজস্ব আদায় বা বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে বাস্তবে কখনো অবদান রাখতে পারেনি। অথচ বিশেষ প্রভাবশালী সুবিধাভোগী মহলের অবৈধতাকে প্রশ্রয় দিয়ে সমাজে অনৈতিকভাবে সুরক্ষা দিয়ে সততার চর্চাকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

এদিকে, বাজেট নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে বলেছে, বাজেট বাস্তবায়নের কৌশল সংশয়পূর্ণ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সিপিডির পক্ষে সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দুই শতাংশ বাড়তি আয় ও বাড়তি ব্যয় কোথায় হবে তা স্পষ্ট নয়।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘যে কৌশলে এটি বাস্তবায়িত হবে এবং সেই কৌশলকে কার্যকর করার জন্য, দক্ষতার সাথে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার দরকার পড়ে, সেগুলির ব্যাপারে উনার (অর্থমন্ত্রী) চিন্তাভাবনার যেটুকু দরকার সেখানে আমরা সংশয় প্রকাশ করছি। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে যে দুরাবস্থা চলছে, যারা টাকা নিয়ে আমাদের টাকা শোধ দিল না তাদের সেই লাভের টাকা পূরণ করার জন্য এখন ট্যাক্সের টাকা লোকসানে যেতে হবে। এবং তারপর আমাকে বলা হচ্ছে আরো ট্যাক্স দেওয়ার জন্য। আমরা কেন সেই ট্যাক্স দেব? যারা টাকা দেওয়া হয়েছে এবং টাকা ফেরত দিল না ব্যাংকের। তার টাকা পূরণ করার জন্য কেন আমরা বাড়তি ট্যাক্স দেব? এটাতেই কিন্তু সমস্যা হচ্ছে।’