বস্তি উচ্ছেদের অস্ত্র কি আগুন?

বস্তি উচ্ছেদের অস্ত্র কি আগুন?

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত এক বছরে রাজধানী ঢাকার বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে শতাধিক বার। বস্তিবাসীদের অনেকেই মনে করেন, পরিকল্পিতভাবেই লাগানো হয় এই আগুন।

প্রতিবারের মত এবারও মহাখালীর সাততলা বস্তিতে আগুন লাগার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট। এ বস্তিটির জায়গার মালিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২০১০ সাল থেকে এ জমিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি কমপ্লেক্স গড়ার চেষ্টা করলেও উচ্ছেদের চেষ্টা করেনি।

এ বিষয়ে ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, আগুন পিছু ছাড়ছে না অসহায় বস্তিবাসীর। নিঃস্ব হচ্ছেন মানুষ। সব হারিয়ে বস্তিবাসী যখন কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন, তখনই ফের সব পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় আগুন। ক্ষুধার আগুন নেভাতে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে বস্তিতে বারবার সর্বগ্রাসী আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হতে হচ্ছে তাদের। যার দায় কেউ নেয় না।

তিনি বলেন, কয়েকদিন পরপর বস্তিতে এ অগ্নিকা- নিছক দুর্ঘটনা, নাকি উদ্দেশ্যমূলক; তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। দেশের বেশিরভাগ বস্তি সাধারণত সরকার বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পরিত্যক্ত জমিতে গড়ে ওঠে। অনেক সময় মালিক জমি খালি করার জন্য নিজেই বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দেন। এমন ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। তাই সরকারের উচিত তদন্ত করে অগ্নিকা-ের আসল রহস্য বের করা। পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের সহায়তায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ষড়যন্ত্র কি-না জানি না। তবে আগুন দিয়ে বস্তি উচ্ছেদ বোকামি। রাষ্ট্র বা অন্যকোনো পক্ষ এমন কাজে ইন্ধন দিলে, এতে গণমানুষের আস্থা কমে যাবে। সাধারণ মানুষের জন্যই রাষ্ট্র। তাদের অধিকার হরণ করে রাষ্ট্র ভালো থাকতে পারে না।

মেনন বলেন, ‘বস্তিবাসী রাষ্ট্রেরই মানুষ। অথচ আগুনে বারবার তারাই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। আর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে আগুন দিয়ে সমাধান করতে চাইলে ফলাফল ভালো হয় না, বরং ক্ষোভ বাড়ে। কিন্তু এখন তা-ই হচ্ছে। রহস্য থেকে যাচ্ছে প্রতিটি অগ্নিকা-ের তদন্ত নিয়ে। একাধিক তদন্ত কমিটি হয়, কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোনোটি আলোর মুখ দেখে না। মানুষ এসব কারণে রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, বস্তিকেন্দ্রিক পলিটিক্যাল ইকোনমি আছে। আগের বাস্তবতা এখন আর নেই। এখন বস্তিতে ভাড়া দিয়ে থাকতে হয়। বস্তিতে আগুনের ক্ষেত্রে জমির দখল, ওনারশিপ (মালিকানা) নিয়ে দ্বন্দ্ব কাজ করে। সঙ্গে ভাগ-বাটোয়ারার বিষয় তো আছেই। বস্তি থেকে আয় করা টাকার ভাগ অনেকেই পান।

‘দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই’ -মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বস্তিতে আগুন লাগলেও আমরা কখনও নির্মোহ তদন্ত পাই না। আগুনের কারণ কী, আগুন কীভাবে লেগেছে, নাকি কেউ লাগিয়েছে- তা আর জানা যায় না। এক্ষেত্রে সরকারের কঠোর উদ্যোগ জরুরি।’

তিনি বলেন, পুনর্বাসন ছাড়া আগুন দিয়ে কিংবা উচ্ছেদের নামে বস্তিবাসীকে সরিয়ে দখলের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সরকার এখানে সোশ্যাল আবাসন বা জন-আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারে। তাহলে মানহীন বৈদ্যুতিক, গ্যাসের সংযোগ কিংবা চোরাই সংযোগ বন্ধ হবে। পাশাপাশি সরকারেরও রাজস্ব আয় হবে। সাধারণ মানুষগুলোর জীবনও নিরাপদ হবে। এজন্য দরকার নীতিগত পরিকল্পনা।