বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি

বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি

নিউজ ডেস্ক : প্রতিবছর রপ্তানি বাড়ছে। প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ২০ ভাগেরও বেশি এই সেক্টরে। অভ্যন্তরীনভাবে বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। সরকারের কোষাগারে এই খাত বছরে প্রায় ৩৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব দিয়ে থাকে। প্লাস্টিক খাতে বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৫০৩০ এর বেশি ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১২ লাখেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এই খাতে।

সোমবার ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি সামিম আহমেদ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর আঘাতে ২০২০ সালের প্রথমার্ধে ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৩ মাস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। যার প্রভাব পড়ে উৎপাদন ও সরবরাহে। রপ্তানি কমে যায়। এখনও করোনা মহামারির কারণে ব্যবসা আগের মতো চালু হয়নি। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা করোনা ভাইরাস মহামারির (কোভিড-১৯) ফলে দেশের বেশির ভাগ মানুষের আয় কমেছে। নতুন করে বেকার হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। কর্মহীন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। তবে এসময় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ, আর্থিক প্যাকেজ দেশকে সচল রাখতে ভূমিকা রেখেছে।

কোভিড মোকাবেলায় প্লাস্টিক সেক্টর নিরলসভাবে কাজ করেছে এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ফেস মাস্কস, ফেস সাইলডস, গুগলেস, হ্যান্ড গ্লোভস, স্যানিটাইজার, পিপিই, জীবাণুনাশক ওষুধের বোতল ইত্যাদি বিভিন্ন ওষুধের প্যাকেজিং এর জন্য ব্যাপকভাবে দরকার হয়। এই সেক্টরের শিল্পগুলো দিনরাত উৎপাদন করে সরকারের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখছে। বর্তমানে প্লাস্টিক সেক্টর সরকারের থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে কাজ করছে।

জাতীয় বাজেট ২০১৭-১৮ তে নিম্ন ও দরিদ্র জনগণের ব্যবহৃত প্লাস্টিক ক্রোকারিজ আইটেম হতে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। গ্রাম গঞ্জের নিম্ন আয়ের জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ প্লাস্টিক ক্রোকারিজ পণ্যগুলো ব্যবহার করে থাকেন। এসব পণ্য সাধারণত পুরানো ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে রি-সাইক্লিং করে তৈরী করা হয়ে থাকে। ফলে পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াটি পরিবেশ বান্ধব। এসব পণ্য ভাঙ্গারির বিনিময়ে শহরের বস্তিতে, গ্রাম গঞ্জের নিম্ন আয়ের মানুষ দৈনিন্দিন ব্যবহারের জন্য হকার ও ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকেন।

কাজেই প্লাস্টিক খাতের এসব ক্রোকারিজ আইটেমকে মুসক (মূল্য সংযোজন কর) আইন ২০১২ এর ধারা ২৬ অনুযায়ী কমপক্ষে আগামী ৫ বছর মূসক অব্যাহতি দিতে হবে।
প্লাস্টিক খেলনা আইটেমের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিপিজিএমইএ সভাপতি বলেন, প্লাস্টিক খাতের কয়েকটি সাব সেক্টরের মধ্যে খেলনা একটি। এ সাব সেক্টরের বিকাশ দ্রুত হচ্ছে। দেশে খেলনা ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে, আমদানী বিকল্প উন্নত মানের খেলনা প্রস্তুত হচ্ছে। রপ্তানিও হচ্ছে বিদেশে। রপ্তানিতব্য পণ্যের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। দেশীয় উৎপাদিত প্লাস্টিক খেলনা সামগ্রীর ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ রয়েছে। ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত হওয়ার পর থেকে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কেননা দেশীয় খেলনা প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র, এদের ভ্যাট দেওয়ার সমর্থ নেই। ভ্যাটের খাতাপত্র মেইনটেইন করার সমর্থ নেই। ১৫ শতাংশ ভ্যাটের কারণে পণ্য মূল্য বেশি হওয়ায় নিম্ন মানের বিদেশি পণ্য বাজারে আসছে।

বাজেটে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতিফলন রাখার প্রস্তাব রেখে সংগঠনের সভাপতি বলেন, প্লাস্টিক ও পলিউশন এই শব্দ দুটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এটা এদেশে বেশি প্রযোজ্য। ১৯৫০ সালে প্লাস্টিক উৎপাদন ছিলো দেড় লাখ মিলিয়ন টন। বর্তমানে উৎপাদন ৪০০ মিলিয়ন টনের মতো এবং ২০৫০ সালে উৎপাদন হবে ৮০০ মিলিয়ন টন। প্লাস্টিক এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ বাজেটে নেই।

আগামী বাজেট বাস্তবায়নের অত্যধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০ দফা প্রস্তাব বিবেচনা জন্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অনেকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সাবেক সভাপতি এ এস এম কামাল ও ফেরদৌস ওয়াহেদ; সিনিয়র সহ সভাপতি গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, সহ সভাপতি কে এম ইকবাল হোসেন, কাজী আনোয়ারুল হক ও মোসাদ্দেকুর রহমান নান্নু; পরিচালক মো. শাহজাহান, এটিএম সাইদুর রহমান বুলবুল, মো. এনামুল হক ও আমান উল্লাহ।