ফেসবুকে ইসলাম ধর্মের সমালোচনা করতেন নাজিমুদ্দিন

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ডেস্ক: রাজধানী ঢাকার রাস্তায় বুধবার রাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার নাজিমুদ্দিন সামাদের লন্ডন প্রবাসী বড় ভাই শামীম উদ্দিন বিবিসিকে বলেছেন, ‘সে ঠিক কি লিখতো আমি নিজে কখনো পড়িনি, কিন্তু আত্মীয়দের মুখে শুনেছি সে ধর্ম নিয়ে লিখতো। টেলিফোনে কথা হলেই নিষেধ করতাম।’

পরিবারের চাপে ফেসবুক ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে লেখালেখিতে একাউন্ট কিছুদিন বন্ধও রেখেছিলেন নাজিমউদ্দিন।

তবে বড় ভাইদের কাছে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কখনো তেমন কোনো শঙ্কা প্রকাশ করেননি।

কি লিখতেন নাজিমুদ্দিন?

নাজিমুদ্দিন কোনো ব্লগ সাইটে নিয়মিত লেখালেখি করতেন না। তার লেখালেখি ছিল মূলত তার ফেসবুক পাতায়।

ফেসবুকে সাম্প্রতিক তার কিছু স্ট্যাটাসে দেখা গেছে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে  ‘ধর্মান্ধতা’ এবং ইসলামের অনেক বিষয় নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। অনেক লেখায় সরকারকে নিয়েও সমালোচনা বিদ্রুপ করেছেন তিনি।

মার্চের ২৮ তারিখে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করার বিরুদ্ধে পিটিশনটি সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় স্ট্যাটাসে নাজিমুদ্দিন লিখেছিলেন, ‘রাষ্ট্রধর্ম দেখে কেউ করিস না ভয়, আড়ালে তার ইসলামী জঙ্গি হাসে।’

মার্চের ৩০ তারিখে দীর্ঘ একটি স্টেটাসের অংশবিশেষ ছিল এরকম : শুধু একবার পাঁচ বছরের জন্য পরীক্ষামুলকভাবে দেশে শারিয়াহ আইন চালু করা হোক…. গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি পাঁচ বছর পর কোনো মুসলিম ইহজীবনে আর ইসলামের নাম মুখে আনবে না…।

 বিবিসি বাংলার অনলাইনে প্রকাশিত ব্লগার নাজিমুদ্দিনের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস

সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সক্রিয় ছিলেন তিনি।

ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য কাকে দায়ী করেন তিনি? এই প্রশ্নে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শামীম উদ্দিন বলেন, ‘যারা মেরেছে তাদেরই দায়ী করবো…ইসলাম তো নষ্ট হয়না, মানুষ নষ্ট হয়।’

নাজিমুদ্দিনের বড় দুই ভাইয়ের এক ভাই বুধবার রাতেই বাংলাদেশ রওয়ানা হয়ে গেছেন।

মা এবং বোনেরা থাকেন সিলেটের বিয়ানীবাজারের মাটিজুয়া গ্রাম। ময়দা তদন্তের পর পরিবারে সেখানেই তাকে দাফনের পরিকল্পনা করেছে।

উল্লেখ্য নিহত ‘ব্লগার’ নাজিমুদ্দিন সামাদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ছিলেন৷ বুধবার রাতে পুরনো ঢাকায় তাঁকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷

ঢাকার সূত্রাপুর থানার পুলিশ জানায়, ‘‘লক্ষ্মীবাজারের একটি মেসে থাকতেন সামাদ৷ বুধবার রাতে তিন বন্ধুকে নিয়ে পুরনো ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের উদ্দেশ্যে বের হলে, ঋষিকেশ দাশ লেনে অজ্ঞাত যুবকরা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে৷ শুধু তাই নয়, খুব কাছ থেকে দুই রাউন্ড গুলিও করে তারা৷ এরপর হাসপাতালে নেয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়৷ সামাদের সঙ্গে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউথ ইস্টের শিক্ষার্থী নাজিবের ওপরও আক্রমণ করে দুর্বৃত্তরা৷ তবে সৌভাগ্যক্রমে নাজিব বেঁচে যান৷”

ফেসবুকে নাজিমুদ্দিনের সর্বশেষ স্ট্যাটাস:

নাজিমুদ্দিন সামাদ নিহত হওয়ার আগে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন৷ সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘সরকার, এবার একটু নড়েচড়ে বসো বাবা৷ দেশের যা অবস্থা, আইন-শৃঙ্খলার যা অবনতি, তাতে গদিতে বেশি দিন থাকা সম্ভব হবে না৷ জনরোষ বলে একটা কথা আছে৷ এটার চূড়ান্ত পরিণতি দেখতে না চাইলে এক্ষুনি কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে৷ নতুবা দিন ফুরিয়ে আসবে দ্রুত৷’