ফসল নিয়ে ত্রিমুখী সংকটে হাওরের হাজারো কৃষক

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা: সুনামগঞ্জের কৃষকদের ত্রিমুখী সংকট শুরু হয়েছে। একদিকে ফসল রক্ষা বাঁধ, পাহাড়ি ঢল থেকে কাঁচা ধান রক্ষা করা ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটার আহ্বান। আবহাওয়ার আগাম বার্তার পর এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা প্রায় চার লাখ মানুষ।

গত কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যায় সুনামগঞ্জের মানুষের ফসল রক্ষা বাঁধ রক্ষায় আপ্রাণ লড়াই করছেন। ফাটল ও ধসের কবলে পড়া অনেক বাঁধের ভাঙন ঠেকানো গেলেও কিছু বাঁধ ভেঙে কৃষকদের কাঁচা ধান ডুবে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার হাজারো কৃষক।

ফাটল ধরা যে বাঁধগুলো এখনো টিকে রয়েছে, সেগুলোয় কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন। কত দিন পর্যন্ত এ রকম লড়াই করে বাঁধ রক্ষা করবেন তারা, সে প্রশ্ন তাদের কাছে অজানা।

এদিকে গত রোববার আবহাওয়া অফিস থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। সে খবরে কৃষকের জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে না। বলা হয়েছে, ১০ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এতে এখন পর্যন্ত জেলার সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও এ কয়েক দিনে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। এক দিকে জমিতে কাঁচা ও আধাপাকা ধান, অন্যদিকে ধান কেটে ফেলার আহ্বান। এমন খবরে দিশেহারা কৃষক।
তাহিরপুরে বর্ধিত গুরমা হাওরে ২৪ কেয়ার জমি করেছেন সুলেমানপুর গ্রামের বাসিন্দা মুহম্মদ রফিকুদ্দিন। ৪ ছেলে-মেয়ে নিয়ে শ্রম-ঘাম দিয়ে বছরের একমাত্র অবলম্বন হাওরে বোরো ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আমি প্রায় ২ হার (১২ কেয়ারে ১ হাল) জমি করেছি। অনেক টাকাপয়সা খরচ হয়েছে। এখন যদি ধান না কাটতে পারি, বউ-বাচ্চা নিয়ে উপোস থাকতে হবে। হাওরের কিছু হলেই ২ টাকার মাল ১ টাকা হয়ে যাবে। তাই গরু-বাছুরও বিক্রি করতে পারব না।

এ বিষয়ে বালিজুড়ি ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা রিপন হাসান বলেন, ২০ জন শ্রমিক দিয়ে ৫ কেয়ার জমির ধান কাটছি। অনেকে শ্রমিক পাচ্ছে না ধান কাটতে। আমাদের হাওরের অবস্থা খুব খারাপ। আকাশের দিকে তাকালে মন খারাপ হয়ে যায়। এ সময় বাঁধের ওপর ভরসা করা যাচ্ছে না। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বৃষ্টি হলে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। তাই কাঁচা ধান কেটে ফেলছি।