৩মাসে প্রায় ১ হাজার খুন, প্রধানমন্ত্রীর সন্তান না হলে কি কেউ বিচার পাবে না : প্রশ্ন ইমরানের

নিউজ নাইন২৪ডটকম, অনলাইন প্রতিবেদক: এই বছরের প্রথম ৩ মাসেই দেশে প্রায় ১ হাজারের কাছাকাছি মানুষ খুন হয়েছে। কেউ কি বলতে পারবেন যে, এর একটি ঘটনার বিচার হয়েছে? কেন, এ দেশে প্রধানমন্ত্রীর সন্তান না হলে কি কেউ বিচার পাবে না? তনুর বাবা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বলে কি তার বিচার পাওয়ার অধিকার নেই?

সোমবার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এসব কথা তুলে ধরেন গণজাগরন মঞ্চের মুখপাত্র ড. ইমরান এইচ সরকার। সম্প্রতি বিতর্কিত ম্যাগাজিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমানের গ্রেফতারে নিন্দা জানিয়ে বিতর্কে আসেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী তনয়া সজিব ওয়াজেদ জয়কেও এক হাত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারি দাবিদার  এই গণজাগরণ মঞ্চ নেতা।

ইমরান বলেছেন, আমার ফেসবুক সমাজের নির্যাতিত, বঞ্চিত, অসহায় মানুষের পক্ষে কথা বলে। সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত থাকবে।

ইমরান বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধার কথা বলতে গিয়ে সম্ভবত আমার নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতাই আজ হুমকির মুখে। কি ভয়াবহ ব্যাপার! আমি আমার স্ট্যাটাসে পরিষ্কার লিখেছি, আমি শফিক রেহমানের রাজনৈতিক আদর্শের সাথে একমত নই। এমনকি আমি স্ট্যাটাসের কোথাও তার মুক্তির কথাও বলিনি। তাতেই যেভাবে আক্রমণ হচ্ছে, খুব সহজেই অনুমান করা যায় ভিন্নমতের প্রতি সমাজে কতটুকু শ্রদ্ধা বিদ্যমান।

তিনি বলেন, এ দেশে খুব গৎবাঁধা কিছু কথা বলা হয়। একটা খুনের বিচার চাইতে গেলেই কেউ কেউ বলে ‘অমুক এটা করতো’ আপনি খুনের বিচার চেয়ে তার সেই কাজকে সমর্থন করলেন! কারো মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বললেও একই প্রশ্ন। কারো সাথে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করেও যে তার অধিকারের জন্য লড়াই করা যায়, সরল এই বিষয়টি সমাজ থেকে একদম হারিয়ে যাচ্ছে।

কোনো খুনের বিরুদ্ধে কিংবা কারো মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানো মানে যে তার বক্তব্যের সাথে একমত হওয়া নয়, এই বোধটুকুও আমরা হারিয়ে ফেলছি। ডা. ইমরান বলেন, আমি আমার ওই স্ট্যাটাসে দেশে চলমান খুন-ধর্ষণের বিচার নিয়েও বলেছিলাম। এই বছরের প্রথম ৩ মাসেই দেশে প্রায় ১ হাজারের কাছাকাছি মানুষ খুন হয়েছে। কেউ কি বলতে পারবেন যে, এর একটি ঘটনার বিচার হয়েছে? কেন, এ দেশে প্রধানমন্ত্রীর সন্তান না হলে কি কেউ বিচার পাবে না? তনুর বাবা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বলে কি তার বিচার পাওয়ার অধিকার নেই?

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, আমাদের, এ দেশের সাধারণ নাগরিকদের সম্ভবত আরেকটু সজাগ হবার দরকার আছে। আমি দেখতে পাচ্ছি, প্রতিপক্ষের প্রতি যেকোনো অবিচার হলে আমরা প্রত্যেকে হাততালি দেই। আর এটাই কিন্তু আমার, আপনার সবার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেখানো হচ্ছে দেখো, একে গ্রেপ্তার, হত্যা, গুম করলে কিংবা শক্তি প্রয়োগ করে মুখ বন্ধ করিয়ে দিলে কত মানুষ খুশি হয়, তাই আমরা যা করেছি ঠিক করেছি। একবার ভেবে দেখুন, আমার/আপনার হাততালি আমার/আপনার বিরুদ্ধেই ব্যবহার হলো! আমাদের প্রত্যেকের সাথে ঘটা অন্যায়গুলো এভাবেই প্রতিপক্ষের হাততালির আড়ালে স্বীকৃত করে নেওয়া হচ্ছে। ফলস্বরূপ আমরা সকলেই অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, যখন দেখতে পাচ্ছি নানাভাবে একের পর এক মানুষের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে এবং সেগুলো বিভিন্ন উপায়ে জাস্টিফাই করা হচ্ছে, তখন জেনে গেছি এই দানব আসলে আমার দিকেই আসছে; আমাদের সবার দিকেই আসছে! তাই আমরা যদি পক্ষ-বিপক্ষ ভুলে এই দানবীয় শক্তির বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়াই, আমাদের বাকরুদ্ধ রেখে রিজার্ভ লুটের মতো সবকিছু লুট হতে থাকবে, আমাদের কিছুই করার থাকবে না।