পুলিশ ব্যস্ত সন্ত্রাসবাদী দমনে, সক্রিয় ঈ দ কেন্দ্রীক অপরাধীরা

ঢাকা: পুলিশ যখন সন্ত্রাসবাদী দমনে ব্যস্ত তখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে পকেটমার, মলমপার্টি, টানাপার্টি, অজ্ঞানপার্টি চক্র ও জালটাকার চোরাকারবারীরা। তাদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নাগরিক জীবন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গড়ে প্রতিদিনই অন্তত ৫-৬ জন মানুষ অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছে। গত এক মাসে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন অন্ততঃ ৫০ জন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু লোক ধরাও পড়েছে।

এই অপচক্রের তৎপরতা না থেমে বেড়ে যাওয়ার খবর দিচ্ছে দেশের গণমাধ্যম। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ঈদ সামনে রেখে বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে জালনোট। বিভিন্ন বিপণিবিতানে কৌশলে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে জাল টাকা। বাণিজ্যিক লেনদেন এমনকি এটিএম বুথেও পাওয়া যাচ্ছে জাল টাকা। মূলত রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম জাল টাকার কারবারীদের কেন্দ্র হলেও তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে আছে দেশজুড়ে। যথেষ্ট সচেতনতার অভাবে অনেক ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ জালনোট চক্রের ফাঁদে পড়ে আর্থিক দ- ও জেল-জরিমানাসহ নানা ক্ষতির শিকার হয়। এ চিত্রের অবসানে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।

ঈদের সময় জাল টাকার কারবারীরা চরম বেপরোয়া হলেও সারা বছরই চলে জাল টাকার ব্যবসা। একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, গত ৯ মাসে দেড় কোটি টাকার বেশি জাল নোট শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শনাক্তের প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরো প্রায় ৪০ লাখ টাকা। তবে, ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে জাল নোটের একটি বিরাট অংশ। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জাল টাকার কারবারি পুলিশের হাতে ধরাও পড়ে। মামলাও হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে জাল নোট-সংক্রান্ত মামলা রয়েছে ৬ হাজার ২৫৭টি। চলতি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে জাল নোট বিষয়ে মামলা হয়েছে ১০৪টি। কিন্তু তারপরও থেমে নেই জাল টাকার ব্যবসা।

নানা কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছে এই অপব্যবসা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঈদ এলেই বেসামাল হয়ে উঠে টাকা জালিয়াত চক্র। নানা উপায়ে বাজারে ছড়িয়ে দেয় জাল নোট। এবারও ঈদ সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চক্রটি। ঈদকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের অতিরিক্ত লেনদেনকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে জালনোট চক্রগুলো। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশি বিপাকে পড়ছে। জাল টাকা সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকায় প্রতারিত হচ্ছে সহজ-সরল মানুষ।

জাল নোট বিষয়ক বিভিন্ন অনুসন্ধানী রিপোর্টে দেখা যায়, জালিয়াত চক্রের বিশাল সিন্ডিকেটের সঙ্গে কয়েকজন বিদেশী নাগরিকও জড়িত। বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকজন বিদেশী জালিয়াতকারী ধরা পড়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। তারা শুধু টাকা নয়, রুপি এবং ডলারও জাল করে বাজারে ছাড়ে একই ধরনের কৌশলে। তারা মাঠ পর্যায়ে জালনোট চালাতে এজেন্ট নিয়োগ করেছে নির্দিষ্ট কমিশনের ভিত্তিতে। জাল টাকা চালানোর জন্যে তারা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। জালনোটে আসল টাকার কাগজ ব্যবহার হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ সহজে তা সনাক্ত করতে পারে না। খালি চোখে বুঝার উপায় নেই যে, নোটটি আসল কিনা।

জাল নোট সনাক্তকরণ মেশিনেও অনেক সময় জাল নোট ধরা পড়ে না। কারণ জাল নোট ছাপার ক্ষেত্রে জালিয়াত চক্র উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। দেশে জাল নোট সনাক্তকারী সাধারণ মেশিনগুলো নোটে ব্যবহৃত কাগজটি জাল কিনা তা সনাক্ত করতে পারলেও নোটের পানিছাপ বা নিরাপত্তা সুতা জাল কিনা তা সনাক্ত করতে পারে না অনেক সময়। ফলে সনাক্তকারী মেশিনকেও ফাঁকি দিয়ে জালনোটগুলো মিশে যাচ্ছে আসল নোটের কাতারে। আর এসব জালনোট সনাক্ত না হওয়ায় দেশব্যাপী এই নোট দিয়ে লেনদেন চলছে অনেকটা অজান্তেই।

এতে একদিকে সাধারণ মানুষ যেমন প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির উপর পড়ছে প্রচ- চাপ। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ জাতীয় অর্থনীতিতে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুুলার জারি করে সব ব্যাংককে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীকে চিঠি দিয়ে সহায়তা চেয়েছে। এছাড়া আসল নোট চেনার উপায় প্রদর্শন, সতর্কতার সঙ্গে লেনদেন ও এটিএম মেশিনে টাকা ঢুকানোর আগে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিনে পরীক্ষা, জনসচেতনতা বাড়াতে সারা দেশে আসল নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসংবলিত হ্যান্ডবিল বিতরণ, নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যবিষয়ক পোস্টার প্রকাশ, পত্রিকায় আসল নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসংবলিত বিজ্ঞাপন প্রকাশ, বিটিভিসহ সব টেলিভিশন চ্যানেলে আসল নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য বিষয়ে ভিডিওচিত্র প্রচার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসবের যথাযথ বাস্তবায়ন হলে আশা করা যায় জালনোট চক্রের অপতৎপরতা বহুলাংশেই কমবে।