পানিবদ্ধ জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ

নিউজ ডেস্ক: বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে পানিবদ্ধতাকে জয় করেছেন যশোরের মণিরামপুরের ভবদহ এলাকার কৃষক আলী আকবর। এলাকার আবু সাঈকে সঙ্গে নিয়ে ৩৫ শতক পতিত জমিতে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে তিনি এলাকায় নজির স্থাপন করেছেন। পানিবদ্ধ এলাকার মানুষের কাছে তারা এখন প্রেরণার উৎস।

বস্তা পদ্ধতির চাষের শুরুতে ৩০ কেজি মাটির সঙ্গে পরিমাণ মতো জৈবসার, খৈল ও রাসায়নিক সারের মিশ্রণ বস্তায় ভরে প্রায় তিন ফুট উঁচু করা হয়। কয়েক দিন পর তাতে লাউ, উচ্ছে, করলা, ঝিঙে, পুঁইশাক, মরিচ, আদা, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, রসুন, পিঁয়াজ ও পেঁপেসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির বীজ বপন অথবা চারা রোপণ করা হয়। আর এই পদ্ধতিকে বলা হয় বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ।

চাষের পদ্ধতি: প্রথমেই একটি বড় আকৃতির সিনথেটিক বস্তা নিতে হবে। তারপর বেশি পরিমাণ জৈব সার মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে। মাটিতে অধিক সময় ধরে পানি ধরে রাখার জন্য বস্তার নিচে তিন-চার কেজি শুকনো পাতা বা খড় বিছিয়ে দিতে হবে। এরপর প্রস্তুত করা মাটি দিতে হবে বস্তায়। মাটি যেন জমাট বাঁধতে না পারে সে জন্য বস্তার ঠিক মাঝখানে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ২০ থেকে ৪০ মিমি মাপের ইটের টুকরো বা খোয়া দিতে হবে। খোয়াগুলো ভালোভাবে বসানোর জন্য একটি পিভিসি পাইপ ব্যবহার করা যেতে পারে। কাজ শেষে পাইপটি অবশ্যই খুলে ফেলতে হবে। বীজ বপন করে চাষ করতে পারেন। তবে চারা তৈরি করে লাগিয়ে দেওয়াই ভালো।

বহু স্তরবিশিষ্ট শাকসবজি চাষ বাংলাদেশে একটি নতুন ধারণা। প্রথম দিকে দৈনিক ১৮ লিটার পানি সেচ করতে হয়। কিছু দিন পর অবশ্য সকাল-বিকেল তিন লিটার করে সেচ দিলেই হয়। আর বৃষ্টি হলে দু-তিন দিন না দিলেও সমস্যা হয় না।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মণিরামপুরে ভবদহপাড়ের চাষিদের বস্তা পদ্ধতিতে চাষাবাদের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

এদের মধ্যে আলী আকবর ও আবু সাঈদ দুইজনে ৩৫ শতক পতিত জমি লিজ নিয়ে প্রায় ছয় মাস আগে শুরু করেন এই পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ। সরেজমিনে মনোহরপুরের খাকুন্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক আলী আকবর ও আবু সাঈদ প্রায় ৩৫ শতক পতিত জমি লিজ নিয়ে এই পদ্ধতিতে দেড়শ’ বস্তা বসিয়ে বিভিন্ন প্রকার সবজি লাগিয়েছেন।

বস্তায় লাগানো কদু গাছে বড় বড় কদু ঝুলছে। শুধু কদু নয় পাশাপাশি তারা উচ্ছে, করোলা ও ঝিঙের চাষ করেছেন। চাষি আলী আকবর জানান, শুধু কদু, উচ্ছে, করালা ও ঝিঙে নয়, মাটি ও গবর সার মিশিয়ে তৈরি করা বস্তায় পুঁইশাক, মরিচ, আদা, বরবটি, মিষ্টিকুমড়া, রসুন, পিঁয়াজ ও পেঁপের চাষও করা যাবে।