পশ্চিমবঙ্গে আটক শিশুদের আকুতি: ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিন’
কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের একটি সরকারি হোমে আটক ৩৮টি বাংলাদেশি শিশু-কিশোর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা এক চিঠিতে অনুরোধ করেছে তিনি যেনো তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
এই শিশু-কিশোরেরা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের একটি হোমে আটকে রয়েছে সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও।
শুভায়ন নামের ওই হোমটিতে এই মুহূর্তে আটক রয়েছে মোট ৪৭টি বাংলাদেশি শিশু-কিশোর।
ওই কিশোরেরা শেখ হাসিনাকে লিখেছে, “আমাদের মধ্যে অধিকাংশই কাজের প্রলোভনে পা দিয়ে দালাল মারফত ভারতে অনুপ্রবেশ করি। কেউ আবার বেড়াতে এসে ধরা পড়ি। বিনা পাসপোর্টে ভারতে ঢুকে পড়ে বিএসএফ অথবা পুলিশের কাছে ধরা পড়ি। এখন আমরা শুভায়ন হোমে আটক আছি।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শিশু কিশোরেরা আর্জি জানিয়েছে, “অনুগ্রহ করে আপনার একটু সহযোগিতা পেলে দেশে আমাদের বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে পারি। আমাদের এই অসহায় দুর্দশার হাত থেকে আপনিই আমাদের উদ্ধার করতে পারবেন।”
তারা আরো লিখেছে যে, বাবা-মা আর পরিজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের। একেকটা দিন এক বছরের মতো মনে হচ্ছে তাদের।
শুভায়ন নামের ওই সরকারি শিশু-কিশোর হোমের সুপারিন্টেডেন্ট দাওয়া দোর্জি শেরপা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “৩৮ জন শিশু কিশোর ওই চিঠিতে সই করার পরে আরো নয়জন বাংলাদেশি ছেলে আমাদের হোমে এসেছে। এর মধ্যে মাত্র চারজনের শিশু-কিশোর আদালতে বিচার চলছে, বাকিরা সবাই মুক্ত। কিন্তু বাংলাদেশ হাইকমিশন বা সেই দেশের বিদেশ মন্ত্রণালয় থেকে নাগরিকতা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। সেজন্যই আমরা এই গণ আবেদন করিয়েছি ওদের দিয়ে।”
অনুপ্রবেশের দায়ে ধরা পড়া বাংলাদেশিদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও দীর্ঘদিন ভারতের জেল অথবা শিশু-কিশোর হোমে আটক থাকতে হয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ধৃতদের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করার পরেই দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাদের।
জেল বা হোম কর্তৃপক্ষ সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাধ্যমে কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসে পাঠায়। সেখান থেকে তা যায় ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠায় সেই ফাইল। তারপর পুলিশ বাংলাদেশের খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত করে যে ভারতে আটক ওই ব্যক্তি সত্যিই বাংলাদেশের নাগরিক কী না।
সেই তথ্য আবারো একই পথে ফেরত আসে কলকাতায়। চূড়ান্ত সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট কারাগার বা হোমে আটক থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের পুলিশ আর বিএসএফের মাধ্যমে বিজিবির হাতে তুলে দেয়া হয়।
এই প্রক্রিয়াতে এক থেকে দেড়-দু বছরও সময় লেগে যায় অনেক সময়ে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মানবপাচার ও শিশু অধিকার রক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সোসাইটি ফর পার্টিসিপেটরি অ্যাকশন অ্যান্ড রিফ্লেকশন বা এসপিএআর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই গণ আবেদন তৈরি করতে সাহায্য করেছে আটক শিশু-কিশোরদের।
ওই সংগঠনটির জেলা কোঅর্ডিনেটর সুরজ দাশ জানাচ্ছিলেন, “আমাদের এখান থেকে ফাইলগুলো দ্রুতই চলে যায়। সমস্যাটা হয় ওপারে অর্থাৎ বাংলাদেশে। দীর্ঘদিন ধরে সেখানকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে রিপোর্ট পড়ে থাকে। আমাদের বেশ কিছু সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমেও তাগাদা দেয়া হয়। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যতটা দায়িত্ব উদ্যোগ নেয়া উচিত, ততটা হচ্ছে না বলেই এই শিশু কিশোরেরা এভাবে আটকে পড়ছে।”
কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন শুভায়ন হোমে আটক থাকা ৩২টি শিশু কিশোরের তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। এদের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করার জন্য ফাইল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলছেন, “২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শুভায়ন হোমে আটক থাকা ৯ জনের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য ফাইল পাঠানো হয়েছে। আবার এপ্রিলে সর্বাধিক ১৮ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। আগস্টেও একজনের তথ্য সুনিশ্চিত করতে চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এখনও ওই হোমের শিশু-কিশোরদের ব্যাপারে কোনো তথ্যই যাচাই হয়ে আমাদের হাতে আসেনি। তাগাদাও দিয়েছি কয়েকবার।” -বিবিসি