পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনায় খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালি

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ডেস্ক:

কাসালং পাহাড়ের ওপর খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালি। অনবদ্য সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ জায়গা বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এক প্রাকৃতিক নিসর্গ। উঁচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তা, ছোট-বড় সবুজ পাহাড়, সেসঙ্গে ছোট্ট পাহাড়ি মায়ামি ও কাসালং নদী— একেবারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আপনাকে মুহূর্তের জন্য হলেও অপূর্ব এক অনুভূতির কাছে নিয়ে যাবে। ভারতের মিজোরামের খুবই কাছে রাঙ্গামাটি জেলার সাজেক ইউনিয়ন বাঘাইছড়ি উপজেলায়, খাগড়াছড়ি থেকে ৬৭ কিলোমিটার দূরে। দুদিকের পাহাড়ে জমে থাকা মেঘের সারি দেখতে দেখতে সাজেকে ভ্রমণ আপনার জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক হতে পারে। বেশকিছু রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে একটু ভালো কিছু খুঁজতে গেলে আপনাকে আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিরাপত্তাও বেশ ভালো।

এই সাজেকে একসময় যেখানে বিশ্রামের ব্যবস্থা ছিল না, ছিল পানির কষ্ট। এখন সবকিছুই হাতের নাগালে। আর পর্যটকদের ভিড়ও রয়েছে চোখে পরার মতো। সাজেকের মূল কেন্দ্র রুইলুইতে পানির সংকট দূর করতে নির্মিত হয়েছে জলাধার। পাশেই গণশৌচাগার। চালু করা হয়েছে ‘পাহাড়ি রেস্তোরাঁ’।

মনোমুঙ্কর অত্যাধুনিক দুটি রিসোর্ট নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এই দুটিতেই রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ সুবিধা। এছাড়াও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) আলোর উদ্যোগে ‘আলো রিসোর্ট’ ইতোমধ্যে চালু।

ইতিমধ্যে আবার অনেক ভ্রমণ পিপাসু মানুষ বলছেন “বাংলাদেশের সাজেক নাকি ভারতের দার্জিলিং”।

খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে দীঘিনালা হয়ে যেতে হয় সাজেকে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার হচ্ছে এই সাজেক ইউনিয়ন যাকে দেশের বৃহত্তম ইউনিয়নও বলা হয়ে থাকে। এটি দীর্ঘ ৬৭ কিলোমিটার পাহাড়ি সড়কে যেতে যেতে লাগবে এক অন্যরকম আনন্দ। মুক্ত বাতাস আর প্রকৃতির নিদর্শন আর আঁকাবাঁকা মসৃণ সড়কের দুই ধারে তাকাতেই যেন এমন ভরে যায় সব মানুষের। আর ঐতিহ্যবাহী চাঁদের গাড়িতে ঝুলে সাজেক যেতেতো মজায় আলাদা। কাচালং নদী অতিক্রম করে দীর্ঘ ভ্রমণে মুহূর্তের জন্যও খারাপ লাগে না। ২/৩ ঘণ্টার এই ভ্রমণে সাজেক উপত্যকা উঠার আগে ঝরনায় গা ভিজিয়ে নেওয়া যায়। এক সময়ের কমলার জন্য বিখ্যাত সাজেকে এখনো মিষ্টি কমলা পাওয়া।

সুন্দর রিসালাং ঝরনা, লোকাল ভাষায় বলে টেরাং টেলা কই। গভীর খাদের মধ্যে অনেক নিচে ঝরনা। কোথা থেকে এর সূত্রপাত তা কারো জানা নেই। জমে থাকা পানি বেশ নোংরা। জায়গাটুকু পাকা করা আবশ্যক। তবে পচা পাতা ও বদ্ধ পানি এক হয়ে সবুজ হয়ে আছে। মনে হলো, পৃথিবীর অন্য কোনো জায়গা হলে এগুলো সাজিয়ে রেখে বিশাল কোনো ট্যুরিজম গড়ে তুলত। কিন্তু আমরা এখনো কিছু করতে পারিনি। আলুটিলা, হ্যালিপ্যাড ও গুহা দেখার মতো। গুহাটি দেখে আমার আমেরিকার ন্যাশনাল ব্রিজ কেভার্নের কথা মনে পড়ল। যা-ই হোক, অল্প পয়সায় ট্যুরিজমের এত সুন্দর সুযোগ তৈরি করা হয়েছে, এখানে তা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে অনেক পর্যটক বিশেষ করে দেশী পর্যটক তো সহজেই আকর্ষণ করা যায়।

খাগড়াছড়িতে এখনো কোনো শিল্প স্থাপন হয়নি, যার মূল কারণ পানি ও বিদ্যুতের অভাব। কথা হচ্ছিল এখানকার এক ব্যাংকারের সঙ্গে, এখানকার লোকজন খুব কষ্টসাধ্য জীবনযাপন করে। তবে উপজাতি মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে যেমন ঘরে তেমনি বাইরে। ছোট দোকান, বেশির ভাগই নারীরা চালায়। এখানেও সবার বাড়ির সঙ্গে তার দোকান বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, যাতে তাদের সন্তানদের দেখাশোনা ও ব্যবসা দুটোই একসঙ্গে হয়।

এখানকার ঝুলন্ত সিঁড়ি, নৌকাবাইচ সবার মন কেড়ে নেয়। বিসিক শিল্পনগরী এখনো তেমন নয়। সব জায়গার মতো এখানেও দেখা যায় সেনাবাহিনীকেন্দ্রিক জায়গাটা বেশ গোছানো, সুন্দর কিন্তু বাকি জায়গাগুলো অপরিষ্কার। তবে টুরিস্টদের জন্য লোভনীয়। একটা কথা অবশ্য না বললেই নয়, এখানকার গাড়িচালকদের দক্ষতা সত্যি খুব ভালো। অতিমাত্রায় খাড়া ও তির্যক রাস্তার বাঁক তারা অবলীলায় পার হয়ে যেতে পারেন। এবং এত কঠিন যাত্রার পরও তারা সুন্দরভাবে হেসে কথা বলেন। যে জিপগুলোয় আমরা এত সব দেখলাম, তাতে লেখা একটি কথা মনের মধ্যে ভীষণভাবে গেঁথে রইল, ‘পৃথিবী একটি যুদ্ধের ময়দান। এখানে কেউ কারো শত্রু নয়, যার যার অযোগ্যতাই তার তার শত্রু।’

আমরা চেষ্টা করতে পারি আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে এ অযোগ্যতাকে পরিহার করে তা যোগ্যতায় রূপান্তর করতে। এখানকার যে সম্পদ, তা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, বেশকিছু শিল্প আমরা গড়ে তুলতে পারি, তার জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা ও সময়মতো বাস্তবায়ন।