নিয়মনীতি ছাড়াই পানির দরে ৬০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৬০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের মেশিন ও লৌহজাত মালামাল পানি দরে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

নিলামে পছন্দের ঠিকাদারকে মাত্র ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকায় দেওয়া হয়েছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ঊর্ধ্বতনরা ঘুষের বিনিময়ে নিলাম প্রক্রিয়ায় অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ। খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষে বক্তব্যেও পাওয়া গেছে অনিয়মের প্রমাণ।

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানেও মিলেছে সত্যতা। দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক আল আমিন ও কোর্ট পরিদর্শক বিজন কুমার রায়ের সমন্বয়ে গঠিত টিম ওই অভিযান পরিচালনা করেছে।

অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) শফি উল্লাহ বলেন, খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মালামাল ক্রয় সংক্রান্ত টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি বিধি বহির্ভূতভাবে পত্রিকায় প্রকাশ না করে ঘুষের বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারকে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে এনফোর্সমেন্ট টিম। দুদক টিম সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ একেএম মনিরুল ইসলামের বক্তব্য নেয়।

অভিযানকালে মনিরুল ইসলাম দুদক টিমকে জানান, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলনায় রক্ষিত সরকারি মেশিন ও অন্যান্য লৌহজাত মালামালের টেন্ডার ও দরদামে জন্য প্রাথমিক দরযাচাইয়ের প্রয়োজনে ৩৩টি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কোনো কমিটিই বাজার দর যাচাই করেনি। তারা নিজেরা দর প্রস্তুতি করে প্রস্তাব করেন এবং টেন্ডার সংক্রান্ত কোনো কমিটিতে তিনি ছিলেন না।

তিনি আরও বলেন, উক্ত কমিটিগুলো মালামালের জন্য ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকার দর প্রস্তাব করে। এ নিলাম সরকারি নিয়ম না মেনে শুধু নোটিশ বোর্ডে দেওয়া হয়। কিন্তু বিধি অনুসরণ করে কোনো সংবাদপত্রে তা প্রকাশ করা হয়নি। নোটিশ করা হয় ঢাকার জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে। খুলনা অফিস থেকে শুধু প্রাথমিক দর প্রস্তাব করা হয়। নোটিশ বা নিলাম প্রক্রিয়াসহ সব প্রক্রিয়াই তাদের ঢাকা অফিস হতে সম্পন্ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে খুলনা অফিস কিছুই জানে না।

দুদক টিম অভিযানকালে টেন্ডার সংক্রান্ত বেশ কিছু নথিপত্র সংগ্রহ ও পরীক্ষা করেছে। অভিযানে প্রাপ্ত ও সরবরাহকৃত সকল তথ্য-প্রমাণ যাচাই শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করবে বলে জানা গেছে।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানায়, ৩০ সেপ্টেম্বর খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের স্টোরে রক্ষিত সরকারি মেশিন ও অন্যান্য লৌহজাত মালামালের টেন্ডার হয়। টেন্ডার হলেও জাতীয় পত্রিকা ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশের মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান করার নিয়ম থাকলেও সেটা না করে নোটিশ বোর্ডের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করেছে। শুধু তাই নয় ৩০ তারিখ টেন্ডার হলেও ২৯ তারিখ রাতের আঁধারে গোপনে প্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডে নোটিশ লাগানো হয়।

এ বিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর গত ৩০ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ দেয় স্থানীয় বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যাদের মধ্যে রয়েছে- মেসার্স সুভাষ এন্টারপ্রাইজ, কাশেম অ্যান্ড ব্রাদার্স, সানু অ্যান্ড কো., লাবনি এন্টারপ্রাইজ, ছোহা এন্টারপ্রাইজ, মনির এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ইকবাল ব্রাদার্স, মেসার্স ফাহিম ট্রেডাস, বাদশা এন্টারপ্রাইজ, ইয়াসিন অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স আঁখি ট্রেডার্স, রাজু এন্টারপ্রাইজ, সাগর দত্ত এন্টারপ্রাইজ, মোল্লা এন্টারপ্রাইজ, লিটন অ্যান্ড কো., সালাম এন্টারপ্রাইজ, এফ অ্যান্ড ট্রেডার্স, শফি এন্টারপ্রাইজ ও সেন্টু এন্টারপ্রাইজ।